আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মনের চাবিকাঠির হরমোন ডোপামিন । ডোপামিন মানবদেহের এমন একটি উপাদান যা একই সাথে নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোন হিসেবে কাজ করে। এই হরমোন এর ক্রিয়া মানুষের আনন্দের অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত।
ডোপামিন এর অপর নাম “Feel Good Chemical”. কারণ এর প্রভাবে আমাদের আনন্দের অনুভূতি তৈরি হয়। এটি আমাদের মনে যে উদ্দীপনা তৈরি করে তাকে Reward Motivation Effect বলে।
যখন আমাদের কোনো কিছু ভালো লাগে তখন মস্তিষ্ক ডোপামিন ক্ষরণ করে যা আনন্দের অনুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে ঐ কাজটি আমরা পুনরায় করার আগ্রহ বোধ করি।
মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া এই রাসায়নিক অনুভূতি ছাড়াও শারীরিক ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেন। আনন্দের অনুভূতি জাগাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে ডোপামিন হরমোন।
“যখন আমরা আনন্দ অনুভব করি তখন ডোপামিন নিঃসরণ হয়। ফলে আমরা সেই আনন্দদায়ক কাজটা বার বার করতে উৎসাহ পাই। কারণ সেই কাজটা আমাদের পরিতৃপ্ত করছে”- বলেন ডা. নিকিতা।
আরও পড়ুনঃ সামাজিক মনোবিজ্ঞান নিয়ে মজার তথ্য
ডোপামিন স্বল্পতার কারণ
খাদ্যাভ্যাসের কারণে হতে পারে। বিশেষ করে অতিরিক্ত বাজে চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া এর প্রধান কারণ। তবে স্বাস্থ্যকর চর্বি ডোপামিনের মাত্রা বাড়ায়।
শারীরিক কর্মকাণ্ড কম করলেও ডোপামিন কম উৎপন্ন হয়। প্রতিদিনের শরীরচর্চা এই হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।ক্রমাগত মানসিক বা শারীরিক চাপে থাকলেও ডোপামিনের মাত্রা কমে।
তাই মানসিক চাপ সামলানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ডোপামিনের মাত্রায় ভারসাম্য বজার রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় ঘুম না হলে এই হরমোনের মাত্রা কমেও যায়।
১. উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি
Dopamine মানবদেহে উৎসাহ তৈরি করে। এটি আমাদের মস্তিষ্কের “Reward System” এর একটি। যখন আমরা কোনো একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হই যা আমাদের ভালো লাগার অনুভূতি প্রদান করে কিংবা যা আমাদের জন্য একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা হয় তখন মস্তিষ্কে এই হরমোন তৈরি হয়। যার ফলে আমরা ঐ কাজটি করার উৎসাহ বোধ করি।
২. চলাফেরা, নড়াচড়া
এই নিউরোট্রান্সমিটার আমাদের শরীরের চলাফেরা নড়াচড়াতে সাহায্য করে। যাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে Dopamine তৈরি হয় না, তাদের চলাফেরায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে অনেকে পার্কেনসন ডিজিসের মতো অসুখেও আক্রান্ত হতে পারে।
৩. মেজাজ মর্জি নিয়ন্ত্রণে
এই হরমোন আমাদের মনকে সতেজ রাখে, শরীরকে চাঙ্গা রাখে। এর ফলে আমরা কাজের আগ্রহ বোধ করি, আমাদের কর্মউদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও নিম্নোক্ত শরীরের অনেক ফাংশনের সাথে এই নিউরোহরমোন জড়িত। যেমনঃ
❖ রক্ত প্রবাহ
❖ হজম প্রক্রিয়া
❖ নির্বাহী কার্যক্রম
❖ হার্ট এবং কিডনি ফাংশন
❖ মনোযোগ এবং ফোকাস
❖ মুড এবং আবেগ
❖ ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ
❖ অগ্ন্যাশয় ফাংশন
❖ ঘুম
❖ স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া
তবে মনে রাখতে হবে যে এই হরমোন একাই কাজ করছে না। এটি অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটার যেমন সেরোটোনিন ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের সাথে কাজ করে।
আরও পড়ুনঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়
ডোপামিনের অভাবের লক্ষণ
তারা যে বয়সে প্রদর্শিত হয় না কেন, লক্ষণগুলি প্রায়শই একই থাকে। এইগুলির মধ্যে থাকতে পারে:
❁ পেশী মধ্যে cramping
❁ কাল পেশী
❁ শিহরিত অবস্থা
❁ পেশীগুলি যা অনিয়মিতভাবে নড়াচড়া করে (ব্র্যাডিকাইনেসিয়া)
❁ পেশীগুলির অনমনীয়তা (কঠিনতা)
❁ কোষ্ঠকাঠিন্য
❁ গিলতে ও খেতে সমস্যা হচ্ছে
❁ শব্দ তৈরি এবং কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে
❁ একটি খাড়া ভঙ্গি বজায় রাখা অসুবিধা
❁ হাঁটা এবং দাঁড়ানোর সময় ভারসাম্যহীনতার সমস্যা
❁ অনিয়মিত চোখের গতি
যে লক্ষণগুলিও থাকতে পারে তার মধ্যে রয়েছে
পেটে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে সৃষ্ট রোগ (GERD)
ঘন ঘন নিউমোনিয়া পর্ব
ঘুমিয়ে পড়তে অসুবিধা
বিভিন্ন মেজাজ, স্মৃতিশক্তি, ঘুমের ধরণ এবং সামাজিক আচরণগুলি হল কয়েকটি সমস্যা যা কম ডোপামিনের লক্ষণগুলি থেকে দেখা দিতে পারে। মস্তিষ্ক থেকে শরীরে বার্তা প্রেরণ করা নিউরোট্রান্সমিটার ডোপামিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় মস্তিষ্কের অঞ্চলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৈরি হয় এবং মোটর নিয়ন্ত্রণ, জ্ঞান এবং প্রজনন সহ অনেক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।
ডোপামিনের খারাপ প্রভাব
Dopamine হরমোনের অনেক ভালো দিক রয়েছে সত্য, কিন্তু এটি একই সাথে আমাদের জন্য খারাপ প্রভাবও বয়ে আনতে পারে। এই হরমোন ভালো ও খারাপের মাঝে পার্থক্য করতে পারে না। তাই ভালো কিংবা খারাপ কাজের মাঝে এটি কোনো তফাত দেখে না।
এমনও হতে পারে নেতিবাচক কোনো একটি কাজের প্রতি এটি আমাদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেমন নানা রকমের নেশা ও প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রতি আসক্তির পেছনেও ডোপামিনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
একই সাথে এটির পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে আমাদের দৃষ্টিভ্রম ও মতিভ্রমও হতে পারে। এটির ভারসাম্যহীনতা অসংলগ্ন আচরণ, ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরি ইত্যাদি সমস্যারও জন্ম দিতে পারে।
ডোপামিনের ভারসাম্য রক্ষায় যা খাওয়া উচিত
Dopamine যেহেতু একটি হরমোন সেহেতু এর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। এর কম পরিমাণে উৎপাদন যেমন আমাদের জন্য খারাপ একই সাথে এর অতিরিক্ত পরিমাণও ভালো না। নিচে এমন কিছু খাবারের কথা বলা হলো যা এই হরমোনের সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে: মূলত আপেল, কলা, সবুজ টাটকা শাকসবজি, মরশুমি ফল, অ্যাভোকাডো, ডার্ক চকোলেট, চিকেন, ডিম, দই প্রভৃতি খেলে শরীরে ‘ফিল গুড’ অনুভূতি কাজ করে। যাতে ডোপামিন শরীরে বৃদ্ধি পায় তাছাড়া ব্যায়াম বা শরীর চর্চার মাধ্যমেও ডোপামিন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
বিভিন্ন নেশার বস্তু যেমন কোকেইন, নিকোটিন, মাদক প্রভৃতি নেশার প্রতি একজনকে অমোঘ আকর্ষিত করে ডোপামিনই। সেই রকমই যৌনতা বা প্রেম, সুস্বাদু খাবার, শরীর চর্চা বা খেলাধুলো, পুরস্কার প্রাপ্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে চরম সুখানুভূতিও জাগিয়ে তোলে ডোপামিন।
আরও পড়ুনঃ মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও বেশি
ডোপামিনের অভাবের কারণ
SLC6A3 জিনের মিউটেশন এই বংশগত অসুস্থতার কারণ। এই জিন ডোপামিন ট্রান্সপোর্টার প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে। ডোপামিনের পরিমাণ যা মস্তিষ্ক থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন কোষে প্রবেশ করে তা এই প্রোটিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
ডোপামিন আবেগ, চিন্তা প্রক্রিয়া এবং মোটর নিয়ন্ত্রণ সহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িত। কোষের ভিতরে ডোপামিনের মাত্রা খুব কম হলে পেশী নিয়ন্ত্রণ প্রভাবিত হতে পারে।
ঘুমের অভাব. ডোপামিন একজন ব্যক্তিকে বেশিরভাগ সকালে বিশ্রাম এবং মনোযোগী বোধ করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। ডোপামিন রিসেপ্টর, যেমন D2 রিসেপ্টর, এই জাগ্রততাকে উদ্দীপিত করে। এই রিসেপ্টরগুলি শরীরের ডোপামিন-সম্পর্কিত প্রক্রিয়াগুলির মধ্যস্থতায় সহায়তা করে। ঘুমের অভাব ডোপামিনের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।
স্থূলতা। অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা স্থূলতার সাথে যুক্ত, কিন্তু একটি কম পরিচিত ফলাফল হল কিভাবে স্থূলতা মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে, যা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
উদ্বেগ। আদর্শ ডোপামিনের মাত্রা বজায় রাখা খুব কম সুবিধার মধ্যে একটি নয় যা স্ট্রেস প্রদান করতে পারে। আপনার শরীরের ডোপামিন উৎপাদন প্রভাবিত হতে পারে যদি আপনি ঘন ঘন বৈবাহিক সমস্যা, আর্থিক কষ্ট, কাজের চাপ ইত্যাদির মতো চাপের শিকার হন।
❑ মনোবিজ্ঞান থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ একাকীত্ব ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকির যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা