আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: চন্দ্র অভিযানে কোন দেশের খরচ কত হয়েছে ? ১৯৫৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার মনুষ্যহীন লুনা টু চাঁদে অবতরণ করা প্রথম সফল মহাকাশ অভিযান। এর আগে যদিও ১১টি ব্যর্থ অভিযান পরিচালনা করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। চাঁদে মানুষ নিয়ে প্রথম সফল অভিযান অ্যাপোলো-১১। এ অভিযান পরিচালিত হয় ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। অ্যাপোলে-১১ প্রকল্পের মোট খরচ ছিল ২৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরমধ্যে প্রতি ঘন্টায় ২৪ হাজার ২৩৬ মাইল গতিতে ছুটে চলা মিশন পরিচালনার স্যাটার্ন-ভি রকেট তৈরিতে খরচ হয় ১৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। নিল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন যখন চাঁদে পা রাখেন তখন অভিযানের আরেক সদস্য মাইকেল কলিংন্স যে যানে করে চাঁদ প্রদক্ষিণ করছিলেন সেই যান তৈরিতে খরচ হয় ৫৫ মিলিয়ন ডলার। ঈগল নামে চন্দ্রযানের আরেকটি অংশ তৈরিতে খরচ হয় ৪০ মিলিয়ন ডলার। অ্যাপোলো মহাকাশ যান তৈরিতে অংশ নিয়েছিল কয়েকশ প্রতিষ্ঠান।
১৯৭৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত থাকার সময় রাশিয়া সর্বশেষ চাঁদে অভিযান পাঠিয়েছিল। এর প্রায় ৫০ বছর পর গত ১০ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ এলাকায় অবতরণের জন্য লুনা-২৫ নামে নতুন মিশন পাঠায় রাশিয়া। ১৩০ মিলিয়ন ডলারের এ চন্দ্রযান চাঁদে অবতরণের আগেই বিস্ফোরিত হয়েছে। চাদের দক্ষিণাঞ্চল জয়ে রাশিয়ার অভিযান ব্যর্থ হলেও সফল হয়েছে ভারত। ২৩ আগস্ট ভারতের চন্দ্র অভিযান চন্দ্রযান-৩ চাঁদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের অস্তিত্ব থাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশ বা দক্ষিণ অংশে সফলভাবে অবতরণ করেছে। ভারতের মহাকাশ সংস্থা দ্য ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্স অরগানাইজেশন (ইসরো) এর তথ্য বলছে, চন্দ্রযান-৩ অভিযানে ভারতের খরচ হচ্ছে ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রায় ২ বছর দেরিতে শুরু হওয়া এ অভিযানের খরচ আরও বাড়তে পারে। ভারত এ তালিকায় ৪র্থ দেশ, যারা সফলভাবে চাঁদে অভিযান পরিচালনা করল।
আরও পড়ুনঃ সূর্যের চেয়ে যে গ্রহের তাপমাত্রা বেশি
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর চীন চাঁদে দেশটির প্রথম রোবোটিক চন্দ্রাভিযান চ্যাঙ্গিই-১ মিশন পাঠায়। চাঁদের মাটির ৬২ কিলোমিটার মধ্যে আবর্তন করে এ যানটি চাঁদের সবচেয়ে ভালো মানের ছবি পাঠায় পৃথিবীতে। সে অভিযানে চাঁদের মাটিতে পারমাণবিক প্রকল্পের অন্যতম উপাদান হিলিয়ামের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা করা হয়। প্রায় ২ বছর ধরে পরিচালিত চীনের ওই অভিযানে খরচ হয় ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২ বছরের মেয়াদকাল শেষে এ চন্দ্রযানকে চাঁদের মাটিতে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে চীন আরও কয়েকবার চাঁদে অভিযান পাঠিয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন চাঁদে সফল অভিযান সম্পন্ন করেছে। এখন পর্যন্ত চাঁদে ২৮টি অভিযান সফল হয়েছে। মানুষসহ চন্দ্রাভিযান সফল হয়েছে ৬ বার। চাঁদে যেসব দেশ অভিযান পরিচালনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে তারা হচ্ছে জাপান, ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং ইউরোপের ২২টি দেশের সম্মিলিত মহাকাশ সংস্থা দ্য ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। চাঁদের কক্ষপথে পরিভ্রমণ, ব্যর্থ অভিযান, সফল অভিযানসহ এখন পর্যন্ত চাঁদে মোট মহাকাশ অভিযান পরিচালিত হয়েছে ১৪০টি। সম্প্রতি চাঁদে পানির অস্তিত্ব পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মতো দেশগুলো চন্দ্র অভিযানকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
নতুন নতুন দেশ চাঁদে অভিযান পরিচালনার কথা ভাবছে। চন্দ্র অভিযান পরিচালনাকে আরও এগিয়ে নিতে বাণিজ্যিকভাবে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। এ কর্মসূচির আওতায় ৯টি মার্কিন কোম্পানি চাঁদে অবতরণের জন্য চন্দ্রযানসহ অন্যান্য সরঞ্জাম প্রস্তুত করছে। ২০১৮ সাল থেকে নাসা এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। ২০২৮ সাল পর্যন্ত কমার্শিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিসেস-সিএলপিএস নামে এ কর্মসূচির জন্য নাসা খরচ করবে ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ চুক্তির আওতায় উন্নততর গবেষণায় প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক সরঞ্জাম চাঁদে পাঠানো হবে।
নাসা মনে করছে, চাঁদে বরফ অবস্থায় থাকা পানিকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনে রূপান্তরিত করে রকেট ইঞ্জিনের জ্বালানি তৈরি করা যাবে, যা পরবর্তীতে চাঁদ থেকে মহাকাশকে আরও বিস্তৃতভাবে গবেষণায় সহায়ক হবে। এছাড়া চাঁদে মানুষ নিয়ে যাওয়ার জন্য বড় ধরনের চন্দ্রযান তৈরিও এ প্রকল্পের অংশ। নাসার এ অর্থের বেশিরভাগ খরচ হবে চাঁদের দক্ষিণ অংশে অভিযান পরিচালনায়। বিশ্বে মহাকাশ গবেষণায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করছে। ২০২৩ সালে নাসার জন্য বাজেট দেওয়া হয়েছে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
আরও পড়ুনঃ দেশের বাজারে গ্যালাক্সি এ২৪ উন্মোচন করল স্যামসাং