আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: চলে গেলেন আণবিক বিজ্ঞানের পথিকৃৎ রেজাউর রহমান । প্রখ্যাত আণবিক বিজ্ঞানী রেজাউর রহমান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর ২০২৫) সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ অক্টোবর তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। সেদিনই তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এর দুই দিন পর, অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। গতকাল শনিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
স্বজনেরা জানিয়েছেন, রেজাউর রহমানের মরদেহ ল্যাবএইড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। ছোট মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পর তাঁর দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
রেজাউর রহমানের স্ত্রী হালিমা রহমান, দুই মেয়ে নীলাঞ্জনা রহমান, মঞ্জুলিকা রহমানসহ অনেক আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
রেজাউর রহমানের জন্ম ১৯৪৪ সালে। বাবা ফজলুর রহমান, মা লুৎফুনন্নেসা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে এমএসসি করেন ১৯৬৫ সালে। ১৯৭৫ সালে তিনি পড়াশোনা করতে যান চেক একাডেমি অব সায়েন্সেসে। সেখানে তিনি রেডিয়েশন বায়োলজি বিভাগে যোগ দেন।
গবেষণা করেন ‘রেডিয়েশন এফেক্টস অন ইনসেক্টস’ নিয়ে। ১৯৭৯ সালে কীটতত্ত্বে পিএইচডি সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসেন। ফলের মাছি পারসুয়েশন অব ফ্রুট ফ্লাই (বৈজ্ঞানিক নাম Ceratitis capitata) নিয়ে মৌলিক গবেষণা শুরু করেন। সেখান থেকে গবেষণার কাজে ভিয়েনা, যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে আবার দেশে ফিরে আসেন। ফ্রুট ফ্লাইয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের পিএইচডি করান। তারপর থেকে টানা ৩৫ বছর গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে।
রেজাউর রহমান বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে ৩৫ বছর গবেষণা করেছেন। একসময় খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে পড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হিসেবে রেজাউর রহমান জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি বিজ্ঞানবিষয়ক পাঠ্যবইসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞান গ্রন্থ লিখেছেন। লিখেছেন বিজ্ঞানবিষয়ক অনেক প্রবন্ধ। এ ছাড়া তিনি বেশ কিছু উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইসমূহের মধ্যে রয়েছে ফিরে আসা ফিরে যাওয়া, দেশান্তর, লাল সবুজের কত কহন, ছায়ারজনী, পরজীবী প্রাণী, উড়াল মাছির পানসি, অন্ধকারে নয় মাস, যাত্রার শেষ সীমানা, সাদা বরফ কালো বৃক্ষ এবং স্ফুলিঙ্গের আভাসহ আরও বেশ কিছু গ্রন্থ।
আরও পড়ুন:
❒ বাংলাদেশের মাথার ওপর রেকর্ড ১১২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ
❒ বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
❒ বাংলাদেশে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সার্ভিস কবে আসবে?
❒ বাংলাদেশের কোন স্টার্টআপগুলো বিশ্ববাজারে সাড়া ফেলেছে?
বিজ্ঞান বিষয়ে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ২০২৪ পান রেজাউর রহমান। রেজাউর রহমান তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘তোমরা সত্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াও। সব জায়গায় সত্য আছে, তেমনি মিথ্যাও আছে। শুধু আমরা দেখতে পাই না। সত্য দেখার চোখ তৈরি করতে হবে। তাহলে দেখবে, যতটা চোখে দেখা যায়, জীবনটা তার চেয়েও বড়। দেখবে, অনেক মহৎ কাজের সুযোগ রয়েছে। আর তা আমাদেরই করার চেষ্টা করতে হবে।’
❑ বাংলাদেশ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় নতুন সুবিধা চালু হতে যাচ্ছে

