ঢাকা, সকাল ৭:১৮, সোমবার, ১৮ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৩রা নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
Advertisement

আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: টিন সার্টিফিকেট বাতিলের সঠিক নিয়ম । টিন সার্টিফিকেট বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর সার্টিফিকেট, একটি ইউনিক নম্বর। টিন একটি গুরুত্বপূর্ণ সনদ যা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আয়কর দাখিলের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি করদাতার একটি পরিচিতি হিসেবে কাজ করে এবং কর সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টিন সার্টিফিকেট প্রাপ্তির মাধ্যমে সরকার করদাতার আয়, কর পরিশোধ এবং অন্যান্য আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারে।

টিন সার্টিফিকেট থাকলে আপনাকে বাধ্যতামূলত ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হবে। যদি আপনার করযোগ্য আয় বা সম্পদ না থাকে তাহলে জিরো রিটার্ন দিতে পারবেন। তবে এই ঝামেলায় অনেকেই যেতে চান না। আবার ভালোভাবে বোঝেন না। তাই জিরো রিটার্নও জমা দেন না। এরপর পড়েন নানান ঝামেলায়।

অনেক সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ভিসা বা বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের জন্য টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে থাকেন। এরপর পোহাতে হয় নানান ঝামেলা। চাইলে কিন্তু টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারেন এবং তা বিনামূল্যে। তবে এর জন্য নির্দিষ্ট কারণ দেখাতে হতে আপনাকে। কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণ যদি আপনার থাকে তাহলেই কেবল আপনার টিন বাতিলের যোগ্য হবে।

Advertisement

যে ৬ শর্তে টিন বাতিলের আবেদন করা যাবে:
১. করদাতার রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকলে।
২. মৃত্যু, অবসায়ন বা প্রতিষ্ঠান অবলুপ্তির কারণে অস্তিত্বহীন হলে।
৩. স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করলে এবং দেশে কোনো আয় না থাকলে।
৪. ডুপ্লিকেট বা ভুল নিবন্ধন পাওয়া গেলে।
৫. আইনি মর্যাদা পরিবর্তন হলে।
৬. অন্য কোনো আইনানুগ কারণে টিন বাতিলের প্রয়োজন হলে।

কারা টিন বাতিল করতে পারবেন
যাদের আয় করযোগ্য সীমার নিচে। সাধারণ করদাতার জন্য সীমা: বছরে ৩.৫ লাখ টাকা। নারী ও ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে করদাতার জন্য: বছরে ৪ লাখ টাকা। প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের করদাতার জন্য: বছরে ৪.৭৫ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার জন্য: বছরে ৫ লাখ টাকা। আয় হ্রাস পাওয়ায় কর সীমার বাইরে চলে যাওয়া করদাতারা। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা, যদি দেশে করযোগ্য আয় না থাকে। মৃত করদাতাদের টিন (উত্তরাধিকারীরা আবেদন করতে পারবেন, তবে ব্যবসার ক্ষেত্রে জটিলতা থাকলে বাতিল করা যাবে না)। ডুপ্লিকেট বা ভুলভাবে নিবন্ধিত টিনধারীরা।




প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
► বর্তমান টিন সার্টিফিকেটের প্রিন্ট কপি।
► জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফটোকপি।
► পরপর অন্তত ৩ বছরের শূন্য রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার পত্র।

টিন বাতিলের আবেদন প্রক্রিয়া
১. টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে হবে এবং প্রাপ্তি স্বীকারপত্র সংরক্ষণ করতে হবে।

২. তৃতীয় বছরের শূন্য রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় কর সার্কেল অফিসে উপ-কর কমিশনার বরাবর একটি আবেদনপত্র লিখতে হবে।

৩. আবেদনে টিন বাতিলের যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে।

৪. টিনধারী নিজে বা তার প্রতিনিধি আবেদন জমা দিতে পারবেন।

৫. টিন বাতিলের জন্য সরকার ঘোষিত কোনো ফি নেই। এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা যাবে।

টিন সনদ বাতিল করার প্রক্রিয়া প্রধানত ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর) বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে আপনি এটি বাতিল করতে পারেন।




অনলাইনে বাতিল করার প্রক্রিয়া
বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ই-টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য একটি সহজ অনলাইন পদ্ধতি চালু করেছে। এজন্য-

► প্রথমে এনবিআর nbr.gov.bd ওয়েবসাইটে যান।

► লগইন করুন। যদি আপনার এনবিআর ই-টিন অ্যাকাউন্ট না থাকে, তাহলে সবার আগে সাইন আপ করে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। যদি অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে লগইন করুন।

► এনবিআর-এর সাইটে গিয়ে টিন বাতিলের জন্য আবেদন ফর্ম পূরণ করুন। এই ফর্মে আপনাকে আপনার টিন নম্বর, পণ্য/সেবা বা ব্যবসার বিবরণ এবং বাতিলের কারণ সহ বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে।

► ফর্ম পূরণ করার পর সেটি সাবমিট করুন।

► একবার আবেদন জমা দেওয়ার পর, এনবিআর আপনার আবেদনটি পর্যালোচনা করবে এবং কোনো অতিরিক্ত তথ্য প্রয়োজন হলে আপনাকে জানানো হবে। আবেদন গৃহীত হলে আপনাকে টিন বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হবে।




অফলাইনে বা কাগজপত্রের মাধ্যমে বাতিল করার প্রক্রিয়া
যদি অনলাইনে আবেদন করা সম্ভব না হয়, তবে আপনি স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন অফিস বা কাস্টমস অফিসে বাতিলের আবেদন করতে পারেন। এজন্য-

► প্রথমে আপনার ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য প্রস্তুত করুন। যেমন: টিন নম্বর, প্রতিষ্ঠানের নাম/ব্যক্তির নাম, ব্যবসার বা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা (বন্ধ/অবসর) ইত্যাদি।

► যখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করবেন, তখন আপনাকে নির্দিষ্ট কাগজপত্র জমা দিতে হবে, যেমন- টিন সার্টিফিকেট, প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার বন্ধ হওয়ার ঘোষণা (যদি প্রযোজ্য হয়), আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র।

► পর পর কমপক্ষে তিন অর্থ-বছরের শূন্য কর রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের ফটোকপি সঙ্গে দিতে হবে।




আরও পড়ুন:

সঠিক ও নির্ভুলভাবে আয়কর রিটার্ন তৈরি করবেন যেভাবে
বিনা শর্তে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ
অনলাইনে বাস-ট্রেন ও বিমানের টিকিট কাটবেন যেভাবে
কোরিয়া লটারি আবেদন করার বিস্তারিত নিয়ম জেনে নিন
বাংলাদেশে কয় ধরনের পাসপোর্ট আছে হারালে করণীয়
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সঠিক নিয়ম

► এই কাগজপত্রগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে দাখিল করার পর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদন পর্যালোচনা করবে এবং তারপর টিন বাতিল করা হবে।

► একবার আপনার টিন সনদ বাতিল হলে, আপনাকে একটি টিন বাতিলের সনদ প্রদান করা হবে, যা আপনি পরে ব্যবহার করতে পারবেন।




টিন বাতিল করার পর, আপনি আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য আর বাধ্য থাকবেন না এবং আপনার নামের সঙ্গে যুক্ত কোনো ধরনের আয়কর নথি বা দায় থাকে না। কিন্তু একবার টিন বাতিল করলে তারপর যদি আপনি টিন ব্যবহার করতে চান তাহলে আবার নতুন করে আবেদন করতে হবে। পুরোনো টিন সার্টিফিকেট ব্যবহার করতে পারবেন না।

 জেনে রাখুন থেকে আরও পড়ুন

আরও পড়ুন: দেশে চালু হওয়া “গুগল পে” যেভাবে করবেন ব্যবহার

Advertisement
Share.
Leave A Reply

Advertisement
Advertisement
Exit mobile version