আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: আলপনার আঁচলে মোড়ানো এক স্বপ্নীল গ্রাম । চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার ছোট্ট একটা গ্রামের নাম টিকইল ((Tikoil)।টিকইল গ্রামের প্রতিটি দেয়ালই এক একটি ক্যানভাস আর মানুষগুলো আলপনার কারিগর। আর এ কারনেই আলপনা গ্রাম (A village of alpona) নামে এর পরিচিতি এখন সারা দেশ জুড়ে। মাটির ঘরের এখানকার বাসিন্দারা নিজের মতো সাজিয়ে তুলেছে নিজেদের শৈল্পিক রাজত্ব।
এখানকার রঙের রাজত্বে সবাই রাজা। টিকইল গ্রামের আলপনার মূল কারিগর হচ্ছেন এ গ্রামের গৃহিণী আর মেয়েরা৷ বংশ পরম্পরায় বছরের পর বছর বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রেখেছেন তাঁরা৷ নাচোলের আলপনা গ্রামের প্রতিটি বাড়ির ভেতরের-বাইরের কোনো দেয়ালই বাদ পড়ে না তুলির আঁচর থেকে৷ রান্নাঘর থেকে শোবার ঘর, প্রতিটি দেয়ালই মেয়েরা ভরে ফেলেন হাতে আঁকা আলপনায়৷
টিকোইল এর মাটির ঘরগুলোকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করার জন্যে এবং নিজেদের শিল্পীস্বত্তার কারণেই গ্রামবাসী তাদের মাটির ঘরে আলপনা করেন। এই আলপনা তারা আঁকেন তাদের নিজেদের তৈরি করা রঙ দিয়ে। এখানকার মাটির ঘরে আলপনা করার রঙয়ের উৎসও মাটি। গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে আগে গৃহিণীরা আলপনা আঁকতে গিরিমাটি, চক (খড়িমাটি), রং, তারপিন তেল ব্যবহার করতো। তবে ওইসব উপকরণে আঁকা আলপনা বেশিদিন স্থায়ী হতো না।
তাই বর্তমানে শুকনা বরই চুর্ণ আঠা, গিরিমাটি, আমের পুরাতন আঁটির শাঁস চুর্ণ, চকগুঁড়া, বিভিন্ন রং, মানকচু ও কলাগাছের কস দিয়ে তৈরি রংয়ের মিশ্রণ অন্তত ৪/৫ দিন ভিজিয়ে রেখে আলপনা আঁকা হয়। ফলে ওই আলপনা প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় স্থায়ী হয়। তাদের মতে, এতে যেমন বাড়িঘরে পবিত্রতা আসে ঠিক তেমনি পরিবারের সবার মনে বাড়িঘরে আনন্দ লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
টিকইল গ্রামের প্রবীন মানুষরাও জানেননা এই ঐতিহ্যের গোড়াপত্তন কি করে হয়েছে, তবে পূর্বপুরুষের হাত ধরে তারাও আবহমানকাল ধরে এই শিল্প টিকিয়ে রাখছেন। বিভিন্ন পার্বণে, উৎসব, পূজা, আনন্দময় উপলক্ষ্যে তারা মহাসমারোহে এই কাজটি করেন। সৃষ্টি সুখের উল্লাস বলে যে বাক্য আছে তা বোধহয় স্বার্থক এই মানুষগুলোর নৈপুণ্যে। নিজেদের গ্রামীন জীবনে এই ছোট ছোট মুহুর্তে নিজেদের মতো করে বাঁচার আনন্দ নিয়ে তারা দিন যাপন করেন।
মজার বিষয় হলো, আগের দিনে বাড়িঘরের আলপনার মাধুর্য দেখে ওই বাড়ির বর-কনে পছন্দ করতেন বুড়া-বুড়িরা। আর হিন্দুপাড়ার টিকইল গ্রামের নারীরা (গৃহিণীরা) আজও আলপনা আঁকার চর্চাটি ধরে রেখেছেন। আগামী প্রজন্মেও এর ধারা অব্যাহত থাকবে বলে টিকইল গ্রামবাসী মনে করেন।টিকইল গ্রামের নারীরা বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে আলপনা এঁকে বাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনের সঙ্গে সঙ্গে দেবতার সুদৃষ্টি ও আশীর্বাদ কামনা করে থাকেন৷
আলপনা গ্রামের কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দূরত্ব ৩১৯.৯ কিলোমিটার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে আলপনা গ্রামের দূরত্ব ২৬.৯ কিলোমিটার। ঢাকা থেকে সড়ক পথে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর এবং গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, একতা এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, কেটিসি হানিফ, এভারগ্রীন ট্রান্সপোর্ট সহ বেশকিছু পরিবহণের বাস চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবে যাত্রা করে।
এসি/নন-এসি এসব বাসের ভাড়া লাগবে ৮২০ থেকে ১৪০০ টাকা। এছারা ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের ৬ দিন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারেন। ট্রেনে যেতে আসনভেদে ভাড়া লাগবে ৫১৫ থেকে ১,১৭৩ টাকা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর হতে ট্রেনে চড়ে নাচোল উপজেলায় যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বাস, ট্যাক্সি এবং সিএনজি ভাড়া করে আলপনা গ্রাম যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
নাচোলে থাকার তেমন জায়গা নেই, থাকতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে চলে আসতে হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ মোটামুটি মানের হোটেল এর মধ্যে রয়েছে হোটেল রোজ, হোটেল আল নাহিদ, হোটেল স্বপ্নপুরী, নবাবগঞ্জ বোডিং, হোটেল রংধনু উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
চাপাইনবাবগঞ্জে খাবারের জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল/রেস্টুরেন্ট পাবেন। তবে শিবগঞ্জের আদি চমচম খেতে ভুলবেন করবেন না।
পরামর্শ
❁ গ্রামের মানুষদের সমস্যা সৃষ্টি করে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
❁ গ্রামের মানুষের ভিডিও বা ছবি তোলার আগে অনুমতি নিয়ে নিন।
❁ গ্রামের বাসিন্দাদের সাথে ভাল ব্যবহার করুন।
সতর্কতাঃ হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় তাই আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ এ প্রকাশিত তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। তাই অনুগ্রহ করে আপনি কোথায় ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করবেন। এছাড়া আপনাদের সুবিধার জন্যে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ও নানা রকম যোগাযোগ এর মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়। এসব নাম্বারে কোনরূপ আর্থিক লেনদেনের আগে যাচাই করার অনুরোধ করা হলো। কোন আর্থিক ক্ষতি বা কোন প্রকার সমস্যা হলে তার জন্যে আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ দায়ী থাকবে না।
আরও পড়ুনঃ
❒ শান্তির খোঁজে ঘুরে আসুন চায়না বাঁধ, সিরাজগঞ্জ
❒ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কন্যা সিলেটের জাফলং
❒ সুন্দরবনের বৈচিত্রময় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম কটকা সমুদ্র সৈকত
❒ খাগড়াছড়ির যে ৫ স্থান ঘুরতে ভুলবেন না
❒ একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সমুদ্রসৈকত দেখতে চাইলে ঘুরে আসুন ডোমখালী
❒ মেট্রোরেলে কোন স্টেশনে নামলে কোথায় যেতে সহজ হবে জেনে রাখুন
দৃষ্টি আকর্ষণ: যে কোন পর্যটন স্থান আমাদের সম্পদ, আমাদের দেশের সম্পদ। এইসব স্থানের প্রাকৃতিক কিংবা সৌন্দর্য্যের জন্যে ক্ষতিকর এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকুন, অন্যদেরকেও উৎসাহিত করুন। দেশ আমাদের, দেশের সকল কিছুর প্রতি যত্নবান হবার দায়িত্বও আমাদের।
[আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের কাছে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করতে। যদি কোন তথ্যগত ভুল কিংবা স্থান সম্পর্কে আপনার কোন পরামর্শ থাকে মন্তব্যের ঘরে জানান।]
✺ আপনার যাত্রা শুভ আর নিরাপদ হোক ✺ আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ
❑ ভ্রমণ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট: ভ্রমণের শেষ গন্তব্য

