আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: পরিবারের জন্য খরচ করা দ্বীনি দায়িত্ব ও কর্তব্য । পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করার বিষয়টি পার্থিব মনে হলেও আসলে এটি মহান দ্বীনি দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোরআন ও হাদিসের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা এই যে, ব্যক্তি কৃপণতা ছাড়াই পরিবারের জন্য খরচ করবে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য উত্তম পন্থায় অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব।’ (সুরা বাকারা: ২৩৩)
এ আয়াতের মর্মার্থ হলো- শিশুকে স্তন্যদান করা মায়ের দায়িত্ব, আর মায়ের ভরণ-পোষণ ও জীবনধারণের অন্যান্য যাবতীয় খরচ বহন করা পিতার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ শিশুর মা স্বামীর বিবাহ বন্ধনে থাকে বা তালাক পরবর্তী ইদ্দতের মধ্যে থাকে। তালাক ও ইদ্দত অতিক্রান্ত হয়ে গেলে স্ত্রী হিসেবে ভরণ-পোষণের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় সত্য, কিন্তু শিশুকে স্তন্যদানের পরিবর্তে মাকে পারিশ্রমিক দিতে হবে। (কুরতুবি) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আর তোমাদের ওপর তাদের অধিকার এই যে তোমরা (যথাসম্ভব) তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ ও আহারের সুব্যবস্থা করবে।’ (তিরমিজি: ১১৬৩, ৩০৮৭)
যে পরিমাণ অর্থ পরিবারের পেছনে খরচ হয়, সেটিই উত্তম অর্থ বলে ঘোষণা করা হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর ভাষায় ‘মানুষের সর্বোত্তম মুদ্রা সেটি, যা সে তার পরিবারের খরচে ব্যয় করে।’ (সহিহ মুসলিম: ৯৯৪)
তবে, সামর্থ্যের বাইরে চাপাচাপি আরোপ করে না ইসলাম। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সচ্ছল ব্যক্তি তার সচ্ছলতা অনুসারে ব্যয় করবে। আর যার রিজিক সীমিত করা হয়েছে, সে ব্যয় করবে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে। আল্লাহ যাকে যতটা দিয়েছেন তার অতিরিক্ত বোঝা তার ওপর চাপান না। আল্লাহ কষ্টের পর সহজ করে দেবেন।’ (সুরা তালাক: ৭)
আরও পড়ুনঃ কোরআনের সুপারিশে মুক্তি পাবেন যারা
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সে যদি তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করতে কৃপণতা করে তাহলে সে পাপী হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কেউ পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে তার ওপর নির্ভরশীলদের রিজিক নষ্ট করে।’ (আবু দাউদ: ১৬৯২)
আমরা জানি যে, দান-সদকা একটি মহান ইবাদত এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। তা দান করতে হয় অসহায় দরিদ্রদের। কিন্তু পরিবারের জন্য খরচ এমন ইবাদত, যাতে সদকার সওয়াব লাভ হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে।’ (বুখারি: ৪০০৬)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘উত্তম সদকা হল যা দান করার পরেও মানুষ অমুখাপেক্ষী থাকে। উপরের হাত নীচের হাতের চাইতে শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার জিম্মায় তাদের আগে দাও। (কেননা) স্ত্রী বলবে, হয় আমাকে খাবার দাও, নয়তো তালাক দাও। গোলাম বলবে, খাবার দাও এবং কাজ করাও। ছেলে বলবে, আমাকে খাবার দাও, আমাকে তুমি কার কাছে রেখে যাচ্ছ? (সহিহ বুখারি: ৪৯৬৪)
হাদিসে দেখা যাচ্ছে, যারা জিম্মায় থাকে তাদের যত্ন আগে নিতে হবে। ভরণ-পোষণ আগে তাদের দিতে হবে। আরেক হাদিসে শিহাব জুহরি (রহ) মালিক ইবনু আওসের সূত্রে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (স.) বনু নাজিরের খেজুর বিক্রি করে ফেলতেন এবং পরিবারের জন্য এক বছরের খাদ্য সঞ্চয় করে রাখতেন। (সহিহ বুখারি: ৪৯৬৬)
অতএব, পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ একটি বড় ইবাদত ও দ্বীনি দায়িত্ব। এটিকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। যারা পরিবারের জন্য খরচ করে না তারা গুনাহগার। আল্লাহর কাছে তাদের জবাব দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির পাপের জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে যাদের খোরপোষ তার দায়িত্ব সে তাদের খোরপোষ আটকিয়ে রাখবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৯৯৬)
বরং খরচের জন্য সর্বপ্রথম উপযুক্ত খাত হলো পরিবার। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কাউকে যখন আল্লাহ কল্যাণ (সম্পদ) দান করেন তখন সে নিজের এবং তার পরিবারস্থ লোকজনকে দিয়ে (ব্যয়) শুরু করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১৮২২) অন্য হাদিসে পরিবারকে সামান্য পানি দেওয়ার বিনিময়েও সওয়াবের কথা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো ব্যক্তি যখন তার স্ত্রীকে পানি পান করায় তখন সে তার বিনিময়ে সওয়াব পায়।’ (সহিহ আত-তারগিব ওয়াত তারহিব: ১৯৬৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বোঝার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনধারণের তাওফিক দান করুন। আমীন।
আরও পড়ুনঃ গুনাহ মাফের ২৩ আমল