আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: উচ্চশিক্ষার জন্য ডেনমার্কে যাওয়ার উপায়, খরচ ও সুযোগ-সুবিধা । নর্ডিক দেশ ডেনমার্ক। এটি একটি দ্বীপপুঞ্জ। যা ৪৪৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এক নিম্নভূমি। এই দেশটির আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। বিশ্বের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ডেনমার্ক অন্যতম। শিক্ষাক্ষেত্রে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তুলনায় কোনো অংশেই কম নয়। বরং দেশটির উচ্চমানের জীবনযাত্রার কারণে হাজারো শিক্ষার্থী ডেনমার্ক অভিমুখী হন উচ্চশিক্ষার জন্য।
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা
শিক্ষাগত যোগ্যতা
বাংলাদেশ থেকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তরের জন্য ডেনমার্ক গেলেও, সেখানে স্নাতক করারও বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। এইচএসসি পাস বা মাধ্যমিক ডিপ্লোমাধারীরা তাদের সনদ দিয়ে ডেনমার্কে ব্যাচেলরের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে এই সনদ ডেনমার্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমমূল্য কি না তা যাচাই করা হয়। এখানে মূলত একাডেমিক মার্কশীটের প্রতিটি বিষয়ের প্রাপ্ত গ্রেড ও জিপিএ (গ্রেড পয়েন্টের গড়) ডেনমার্কের পরীক্ষার নম্বর ব্যবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।
ডেনিশ এজেন্সি ফর সায়েন্স অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন তাদের আন্তর্জাতিক পরীক্ষার হ্যান্ডবুকের নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি গ্রেডগুলোকে ড্যানিশ গ্রেডিং স্কেলে রূপান্তর করে।
তাই এই যোগ্যতা পূরণ হয়েছে কি না তা জানতে শিক্ষার্থীদের তাদের পছন্দের বিষয়ের জন্য পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ভালো ভাবে অধ্যায়ন করে নেয়া উচিত।
এছাড়া ডেনমার্কের স্নাতক শিক্ষার জন্য এখানে নিবন্ধন করে যোগ্যতা যাচাই করে নেয়া যেতে পারে। অথবা এই ফর্মটি পূরণ করে সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে পাঠালে তারা ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই করে দেয়।
মাস্টার্স ও পিএইচডিসহ যেকোনো স্নাতকোত্তর অধ্যায়নের জন্য যোগ্যতা ন্যূনতম ৪ বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি। তবে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। এক্ষেত্রে ডেনিশ ডিগ্রিগুলোর সমতূল্য বাংলাদেশের ব্যাচেলর ডিগ্রিগুলো একটা স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ইতালির শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০০ টির বেশি বৃত্তি
ভাষাগত যোগ্যতা
ইংরেজি ভাষার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের আবেদনকারীদের ইংরেজি ভাষা দক্ষতা ন্যূনতম ইংরেজি-বি ক্যাটাগরির হতে হবে। এটি মূলত ডেনিশ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রণীত ইংরেজি ভাষা দক্ষতা যাচাই ব্যবস্থা। কোনো কোনো প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ইংরেজি-এ প্রয়োজন হয়।
ইংরেজি-বি এর সমতূল্য আইইএলটিএস স্কোর ৬ দশমিক ৫ পয়েন্ট, যেটা ইংরেজি-এ এর ক্ষেত্রে ৭ পয়েন্ট।
ডেনমার্কের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো
ডেনমার্ক বোলোগনা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। তাই শিক্ষার্থীরা ডেনিশ প্রতিষ্ঠানে যে ডিগ্রি অর্জন করেন তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ২০২৩-এর কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিংয়ের ৮২-তম অবস্থানে আছে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ডেনমার্কের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-
❖ আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়
❖ ডেনমার্কের কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়
❖ ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ডেনমার্ক
❖ আলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়
❖ কোপেনহেগেন বিজনেস স্কুল
❖ রসকিল্ড ইউনিভার্সিটি
এছাড়াও ডেনমার্কের আন্তর্জাতিক ভাবে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদেরকে তাদের পছন্দ অনুসারে বিভিন্ন বিষয় বেছে নেয়ার জন্য স্বাগত জানায়।
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনের নিয়ম
ডেনমার্কে পড়াশোনার জন্য যাবতীয় যোগ্যতা নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃত হওয়ার পর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। এক্ষেত্রে আগে থেকেই যোগ্যতা প্রমাণের জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি যোগাড় করে রাখা আবশ্যক।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
❖ স্নাতকের জন্য শুধু এইচএসসি/ডিপ্লোমার মূল প্রশংসাপত্র
❖ আইইএলটিএস/টোফেল স্কোরের সনদ
❖ যদি কোনো নথিতে নামের পরিবর্তন থাকে তাহলে নাম পরিবর্তনের নথি প্রয়োজন হবে; যেমন: বিবাহের সনদপত্র
❖ যোগ্যতা মূল্যায়নের জন্য দ্বিতীয়বার আবেদন করা হয়ে থাকলে পূর্বের মূল্যায়ন এবং স্বীকৃতির সিদ্ধান্তের নথি সংযুক্ত করতে হবে
❖ স্নাতকোত্তরের জন্য উপরোক্ত নথিপত্রের সাথে স্নাতক ডিগ্রি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সংযুক্ত করতে হবে|
এছাড়াও বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ডেনিশ এজেন্সি ফর হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড সায়েন্স শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাইয়ের নিমিত্তে আরও কাগজপত্র চাইতে পারে।
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদনের উপায়
ডেনমার্কে স্নাতক উচ্চশিক্ষার আবেদনগুলো কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত হয়। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদেরকে সরাসরি একক কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন না করে জাতীয় ভর্তির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। এই অনলাইন আবেদন চলাকালে কাগজপত্র আপলোড করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি।
❖ মূল নথিগুলোর প্রতিটি আলাদা ভাবে উভয় পিঠ স্ক্যান করতে হবে।
❖ স্ক্যান করা নথির ছবি অবশ্যই রঙিন হতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে যেন, নথির তথ্যগুলো স্পষ্ট পড়া যায়।
❖ শুধুমাত্র পিডিএফ ফাইল গ্রহণযোগ্য
❖ স্ক্যানের পর প্রতিটি নথির ফাইলের তার স্ব-স্ব নাম দিয়ে কম্পিউটারে রাখতে হবে। তারপর আবেদনের সময় প্রয়োজন অনুসারে আপলোড করতে হবে|
প্রতিটি প্রোগ্রামে আবেদনের বেলায় শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পৃথক পৃথক স্বাক্ষর করা পৃষ্ঠা পাঠাতে হবে। ডিজিটাল আবেদন সম্পন্ন করার পর সেই জাতীয় ভর্তির ওয়েবসাইটেই পাওয়া যাবে স্বাক্ষর করার পৃষ্ঠা। সেটি প্রিন্ট করে স্বহস্তে স্বাক্ষর করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় পাঠাতে হবে।
তবে মাস্টার্স বা পিএইচডির বেলায় শিক্ষার্থীকে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এখানেও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর করার নথি পাবেন। এখানেও একই ভাবে প্রিন্ট করে স্বহস্তে স্বাক্ষর করে পাঠিয়ে দিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায়।
সাধারণত স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য আবেদনগুলো স্নাতক ডিগ্রির আবেদনের তুলনায় সহজ।
ডেনমার্কে পড়াশোনার খরচ
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোগ্রামের উপর নির্ভর করে পড়াশোনার খরচ প্রতি বছরে প্রায় ৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার ইউরো হয়ে থাকে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার থেকে ১৮ লাখ ২৪ হাজার।
সবচেয়ে সাশ্রয়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতি বছর ৬ হাজার থেকে ৯ হাজার ইউরোর (প্রায় ৬ লাখ ৮ হাজার থেকে ৯ লাখ ১২ হাজার বাংলাদেশি টাকা) মধ্যে চার্জ করে থাকে। স্বভাবতই স্নাতক ডিগ্রিগুলো স্নাতকোত্তর ডিগ্রির চেয়ে কম খরচের হয়ে থাকে।
ডেনমার্কে পড়াশোনার পাশাপাশি খন্ডকালীন চাকরির সুযোগ
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরা ডেনমার্কে পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কাজ করতে পারেন। তবে জুন, জুলাই এবং আগস্ট মাসে এরকম কোনো বিধি নিষেধ নেই; পুরোটা সময়ই কাজ করা যায়।
ডেনমার্কে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের সুবিধা
ডেনমার্কের ব্যয়বহুল উচ্চশিক্ষার খরচ চালানোর জন্য সেরা উপায় হচ্ছে স্কলারশিপ। আর ডেনমার্ক তার আন্তর্জাতিক মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ ভালো স্কলারশিপের ব্যবস্থা রেখেছে। স্থানীয় শিক্ষার্থী ও স্কলারদের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত থাকার মাধ্যমে এই স্কলারশিপগুলোতে সহজেই আবেদন করা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় স্কলারশিপ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ইরাসমাস মুন্ডাস/জয়েন্ট মাস্টার ডিগ্রি এবং ডেনিশ সরকারি বৃত্তি অন্যতম।
এছাড়াও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার খরচ পুষিয়ে নেয়ার জন্য ডেনমার্কের বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ আছে।
আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
ডেনমার্কে পড়াশোনা শেষে চাকরির সুযোগ
স্নাতক হওয়ার পরে চাকরি খুঁজে পেতে ছয় মাস সময় পাওয়া যায়। আর এর মধ্যেই রেসিডেন্স পারমিটের মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। উত্তম উপায় হলো ডেনমার্কে পড়াশোনা করার জন্য রেসিডেন্স পারমিটের আবেদন করার সময়েই ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করা। এছাড়া পরবর্তীতে ডেনমার্ক ইমিগ্রেশন সার্ভিস নেয়ার সময়েও ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করা যায়।
তথ্যসূত্র: ইউএনবি
আরও পড়ুনঃ স্যামসাং আনল ৫০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ফোন