আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল: রূপকাঠামোর যুগান্তকারী উদ্ভাবন । ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কারগুলোর ধারাবাহিকতায়, রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে Susumu Kitagawa, Richard Robson ও Omar M. Yaghi-কে, তাদের মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক (MOF – Metal‑Organic Frameworks) প্রযুক্তির উন্নয়নে গৃহীত অনন্য অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে।
এই গঠনশৈলী এমন ধরনের পদার্থের নির্মাণ করে যা বাহ্যিক দিক থেকে ছোট হলেও অভ্যন্তরীণভাবে বিশাল পরিমাণ গর্ত বা ঘন পৃষ্ঠতল (surface area) ধারণ করতে সক্ষম।
নোবেল কমিটি উল্লেখ করেছে যে এই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কার্বন ডাইঅক্সাইড ক্যাপচার, দূষণ অপসারণ ও মরুকোথা থেকে পানি আহরণের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে।
পুরস্কারের কারণ ও গুরুত্ব:
নোবেল জয়ীদের কাজ মূলত MOF গঠনের নতুন নকশা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত। এই ধরণের গঠনশৈলীতে ধাতু আয়ন (metal ions) এবং অর্গানিক লিঙ্কার (organic linkers) পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়ে একটি জালে পরিণত হয়, যা অভ্যন্তরীণভাবে গভীর গর্ত ধারণ করে।
কমিটি তাদের বিবৃতিতে বলেছে: “এ গঠনগুলি এমন একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা রাসায়নবিদদের সমস্যা সমাধানের পথ দেখায়” একটি ছোট ঘন আকৃতির MOF পদার্থ এমনভাবে ডিজাইন করা যেতে পারে যে সেটি প্রচুর গ্যাস সংরক্ষণ করতে পারে — একে অনেক সংবাদে “Hermione’s handbag”‐এর রূপ দেওয়া হয়েছে — যেহেতু বাহ্যিকভাবে ছোট হলেও অভ্যন্তরীণভাবে বিপুল জায়গা রয়েছে।
এই প্রযুক্তি মূলত পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে — যেমন গ্রীনহাউস গ্যাস কমানো, জ্বালানির দক্ষতা বাড়ানো, এবং পানির সংকট মোকাবেলা।
পরিচয় ও কর্মজীবন:
সুসুমু কিতাগাওয়া (Susumu Kitagawa): জাপানি রাসায়নবিদ, জন্ম: ১৯৫১ সালের ৪ জুলাই। বর্তমানে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ে Distinguished Professor হিসেবে কর্মরত। বিশেষভাবে অর্গানিক ‑ ইনঅর্গানিক মাল্টি-হাইব্রিড যৌগ এবং ছিদ্রযুক্ত যৌগ (porous coordination polymers) নিয়ে কাজ করেছেন।
রিচার্ড রবসন (Richard Robson): ৪ জুন ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন, ইংল্যান্ডের গ্লাসবার্নে। তিনি অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক University of Melbourne এ অধ্যাপক। তার গবেষণা অর্গানোমেটালিক নকশা ও কাঠামোয় গঠন সম্পর্কে গভীর অন্বেষণ করেছে, বিশেষ করে গঠনশৈলীর স্থায়িত্ব ও প্রয়োগ দিক থেকে।
ওমর এম ইয়াগি (Omar M. Yaghi): ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন, জন্মস্থান অ্যামমান, জর্ডান। University of California, Berkeley এর একজন শীর্ষ গবেষক। তিনি MOF ডিজাইন ও কাস্টমাইজেশন, গ্যাস ধারণ (gas storage) ও জৈব-অর্গানিক কাঠামোর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে সুদীর্ঘ সময় কাজ করেছেন।
পুরস্কার ও আনুষ্ঠানিকতা:
❁ এই পুরস্কার তিনজনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে এবং অর্থমূল্য নির্ধারিত হয়েছে 11 মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন (SEK)।
❁ পুরস্কার ঘোষণা করা হয় স্টকহোমে, রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের তরফ থেকে।
❁ আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার প্রদান হবে ১০ ডিসেম্বর — আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে মনোনীত দিনে।
প্রভাব ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ:
প্রভাব:
❁ MOF প্রযুক্তি পরিবেশগত ও শিল্প ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম — যেমন কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ, দূষণ অপসারণ, শুষ্ক বায়ু থেকে পানি আহরণ ইত্যাদি।
❁ রসায়ন ও উপকরণ বিজ্ঞানে MOF গঠনশৈলীর সম্ভাবনা নতুন দিগন্ত খুলেছে — গবেষকরা এখন নতুন উপাদান ডিজাইন করতে পারবে যা নির্দিষ্ট কাজের জন্য উপযোগী হবে।
আরও পড়ুন:
❒ ইগ নোবেল ২০২৫: অদ্ভুত গবেষণায় এবার যারা পেল পুরস্কার
❒ প্রোটিনের গঠন ও নকশার গবেষণায় তিন রসায়নবিদের নোবেলজয়
❒ চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী
❒ ২০২৫ সালের চিকিৎসা নোবেল: প্রতিরোধী ইমিউন টলারেন্স আবিষ্কারের স্বীকৃতি
চ্যালেঞ্জ:
❁ MOF-গুলোর স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতার স্থায়ী রূপ দেওয়া: কিছু MOF জলবায়ু বা রাসায়নিক চাপে দ্রুত বিকল হতে পারে।
❁ ব্যাপক উৎপাদন ও ব্যয় কমানোর দিক থেকে উন্নয়ন: গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি যদি প্রচলিত ব্যবহারে যেতে না পারে, তা কার্যকর হবে না।
❁ নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ: অত্যধিক শোষণ বা রাসায়নিক শোষণ পদ্ধতির ব্যবহার কেমন হবে, তা নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা তৈরি করা জরুরি।
২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার MOF প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। Susumu Kitagawa, Richard Robson ও Omar Yaghi-এর কাজ শুধু রসায়নবিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে না, বরং তাদের উদ্ভাবন ভবিষ্যতের পরিবেশ, প্রযুক্তি ও মানব জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ — এবং সেগুলি কাটিয়ে উঠতেই হবে। এই পুরস্কার শুধু এক সম্মান নয়; এটি একটি দৃষ্টান্ত, যা দেখায় বিজ্ঞানের সম্ভাবনা ছাপিয়ে যেতে পারে।
❑ নোবেল পুরস্কার থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে পদার্থে নোবেল: কোয়ান্টাম যুগের পথিকৃৎরা

