আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: নাসার চোখে ধরা পড়লো বরফের গভীরে লুকানো সামরিক ঘাঁটি । যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা সম্পর্কে ভাবলে সাধারণত কয়েকটি বিষয় প্রথমেই মনে আসে, যেমন– মহাকাশ অভিযান, চাঁদে অবতরণ বা মঙ্গল গ্রহে রোভার মিশনের মতো নানা বিষয়।
বছরের পর বছর ধরে সংস্থাটি নিজের নামের ‘মহাকাশ’ অংশকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। তবে নাসা কেবল মহাবিশ্ব অন্বেষণেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তাদের উন্নত প্রযুক্তি প্রায়শই পৃথিবীতে বিস্ময়কর ও বড় ধরনের আবিষ্কারে ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি তারই একটি নজির মিলল। গ্রিনল্যান্ডের বরফের একশ ফুট গভীরে লুকিয়ে থাকা কয়েক দশক পুরানো এক গোপন সামরিক স্থাপনা খুঁজে পাওয়া।
আবিষ্কারটি করেছেন নাসার বিজ্ঞানী চ্যাড গ্রিন। রেডারে বরফের ছবি বিশ্লেষণের সময় তিনি দেখতে পান, অর্ধশত বছরের বেশি পুরানো এক ঘাঁটি বরফের নিচে লুকিয়ে রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৫৯ সালের জুন থেকে ১৯৬০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি ‘ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে’র সদস্যরা ঘাঁটিটি নির্মাণ করেছিল, যা পরিচিতি পেয়েছিল ‘ক্যাম্প সেঞ্চুরি’ নামে। ১৯৫১ সালের গ্রিনল্যান্ড প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলস্বরূপ ঘাঁটিটি তৈরি হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রিনল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে স্ল্যাশগিয়ার।
ঘাঁটিটি ব্যবহৃত হত গ্রিনল্যান্ড ও আশপাশের নেটো সদস্য দেশগুলোকে রক্ষার কাজে। এ ছাড়া ‘প্রজেক্ট আইসওর্ম’-এর জন্যও তৈরি হয়েছিল এ ঘাঁটি, যার আওতায় বরফের নিচে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ স্টেশন নির্মাণেরও এক গোপন পরিকল্পনা হয়েছিল।
গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সামরিক ঘাঁটি থাকলেও সেগুলোর অধিকাংশ সক্রিয় ও ভূপৃষ্ঠেই নির্মিত। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এই ভূগর্ভস্থ ‘ক্যাম্প সেঞ্চুরি’ কেন পরিত্যক্ত হল?
শুরু থেকেই ক্যাম্প সেঞ্চুরিতে কাজের বিষয়টি মানুষের জন্য এক দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। বরফের চারদের নাজুক প্রকৃতির কারণে এ বিশাল আকারে ‘বরফের নিচের শহর’ নির্মাণ কাজটি ছিল কষ্টসাধ্য। ঘাঁটি তৈরিতে প্রায় ৮০ লাখ ডলার খরচ হয় এবং প্রায় ছয় হাজার টন সরবরাহ পৌঁছে দিতে হয়েছিল। এসব সরবরাহ ‘থুলে এয়ার বেইস’ বা বর্তমানে পিটুফিক স্পেস বেইস থেকে ববস্লেডের মাধ্যমে আনা হয়, যার গতি ছিল ঘণ্টায় কেবল দুই মাইল।
এ ছাড়া সৈন্যদের বরফ ও তুষারের মধ্যে এক হাজার ফুট লম্বা এক রাস্তা খুঁড়ে তৈরি করতে হয়েছিল, যাকে ‘মেইন স্ট্রিট’ বলে। সব মিলিয়ে এ ঘাঁটি তৈরিতে যারা কাজ করছিলেন তাদের জন্য এটি ছিল কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের কঠোর পরিশ্রম কাজে আসেনি। ঘাঁটিটি কেবল আট বছর ব্যবহ ও ১৯৬৭ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। ক্যাম্প সেঞ্চুরির ধারণাটি কিছুটা যৌক্তিক হলেও এর অবস্থানটি নিয়মিত সামরিক কার্যক্রমের জন্য আদর্শ ছিল না।
আরও পড়ুন:
❒ আগামী ১০ বছরের প্রযুক্তিতে যেসব মেগাট্রেন্ডগুলো রাজত্ব করবে
❒ বিনা খরচে চাঁদে নিজের নাম পাঠান, সহজেই নিবন্ধনের সুযোগ
❒ রোবোটিক্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই আশাবাদী এনভিডিয়া
❒ জার্মানির প্রযুক্তি চমক: যুদ্ধের মাঠে তেলাপোকা
গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তর যথেষ্ট স্থিতিশীল না থাকায় ঘাঁটি ও সেখানে থাকা সকল কর্মীকে সমর্থনের জন্য নিয়মিত কাঠামোগত ভাঙা ও তৈরির কাজ ব্যয়বহুলও ছিল।
তবে বরফের নিচের এ ঘাঁটিতে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। কারণ বছরের পর বছর ধরে ধসের কারণে প্রবেশের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে এটি। ভবিষ্যতে গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাদর গলতে শুরু করলে ঘাঁটিতে পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু না করলেও ইতিহাসে এক অদ্ভুত কাণ্ড হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ‘ক্যাম্প সেঞ্চুরি’। নাসার এ পুনরায় আবিষ্কারের বিষয়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কখনও কখনও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম সবসময়ই ভালোভাবে পরিকল্পিত হয় না এবং বরফের স্তরের মধ্যে ঘাঁটি নির্মাণের বিষয়টি কোনো স্থায়ী বা নিরাপদ ধারণা নয়।
❑ প্রযুক্তি সংবাদ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: এএমডি চিপে আইবিএমের কোয়ান্টাম বিপ্লব

