আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ৩৫০ বছরের পুরনো মুন্সিগঞ্জের ইদ্রাকপুর কেল্লা । ইদ্রাকপুর কেল্লা (Idrakpur Fort) মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত মোঘল স্থাপত্যের একটি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালিন বাংলার সুবাদার ও সেনাপতি মীর জুমলা ইছামতি নদীর তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানে এই কেল্লাটি নির্মাণ করেন। ৮২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭২ মিটার প্রস্থের ইটের তৈরি ইদ্রাকপুর কেল্লাটি মগ জলদস্যু এবং পর্তুগিজদের হাত থেকে রক্ষার জন্য নির্মাণ করা হয়।
আরও পড়ুনঃ রূপসা জমিদার বাড়ি, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর
লোকমুখে প্রচলিত আছে ঢাকার লালবাগ কেল্লা থেকে ইদ্রাকপুর কেল্লা পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গ ছিল। সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই কেল্লার প্রত্যেক কোণে বৃত্তাকার বেষ্টনী রয়েছে এবং দুর্গের একমাত্র খিলানাকার দরজা স্থাপন করা হয়েছে কেল্লার উত্তর দিকে। শত্রুর উদ্দেশ্যে গোলা নিক্ষেপের জন্য প্রাচীরের গায়ে অসংখ্য ফোঁকর রয়েছে। পূর্ব দিকের মূল প্রাচীর দেয়ালের মাঝামাঝি একটি গোলাকার মঞ্চ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি দুর্গেই দূর থেকে শত্রুর চলাচল পর্যবেক্ষণের জন্য এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ইদ্রাকপুর কেল্লার ৩ কিলোমিটারের মধ্যে চারটি (ধলেশ্বরী, ইছামতী, মেঘনা এবং শীতলক্ষা) নদীর অবস্থান। ১৯০৯ সালে মোঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ইদ্রাকপুর কেল্লাকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তির মর্যাদা দেয়া হয়। প্রাচীর ঘেরা এই গোলাকার দূর্গটি এলাকায় এস.ডি.ও কুঠি হিসাবে পরিচিত।
মোঘলরা যখন বাংলাদেশে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রচেষ্টা নেয়, তখন দেখতে পায়, বাংলার বার ভুঁইয়া ও প্রতিকুল নদীবেষ্ঠিত জনপদ ছাড়াও তাদের আরেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হল মগ (আরাকানী), পর্তুগীজ ও ওলন্দাজ জলদস্যু, যারা কিনা মেঘনা নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে এসে মূল ভূখন্ডে লুঠতরাজ করতো। মধ্যএশিয়ার নদীবিবর্জিত অঞ্চল থেকে আসা মূলত ঘোড়সওয়ার মুঘলরা অচীরেই বুঝতে পারে, বাংলাদেশে সাম্রাজ্য সুদৃঢ় করার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল এদেশের জলপথকে সুরক্ষিত করা। ধারণা করা হয় সুবাদার ইসলাম খান, বাংলায় মুঘল নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং একজন নৌপ্রধান বা মীর-ই-বহর নিয়োগ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তি ১০০ বছরে তিনটি দূর্গ গড়ে ওঠে যার একটি হলো ইদ্রাকপুর দূর্গ (অন্য দু’টি হাজিগঞ্জ দূর্গ ও সোনাকান্দা দূর্গ)।
আরও পড়ুনঃ শালবন বৌদ্ধ বিহার, কুমিল্লা
ধারণা করা হয় ইদ্রাকপুর কেল্লাটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৫৮ সালে এবং ১৬৬০ সালে তা শেষ হয়। দুই ভাগে বিভক্ত কেল্লার প্রাচীরের উত্তরপাশে কামান বসানোর তিনটি মঞ্চ রয়েছে। ১৮৪৫ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ইদ্রাকপুর দূর্গ মহকুমা প্রশাসনের বাস ভবন হিসাবে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এটি সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। রাজধানী ঢাকার কাছে এবং দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসার সুবিধার জন্য ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে ইদ্রাকপুরের জনপ্রিয়তা ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খোলা বন্ধের সময় সূচী
সপ্তাহের ২ দিন ইদ্রাকপুর কেল্লা পরিদর্শন করা যায়। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪ টা থেকে এবং শুক্রবার সারাদিন দর্শনার্থীদের জন্যে উন্মুক্ত থাকে।
কিভাবে যাবেন
মুন্সীগঞ্জ সদর এর কাছে পুরাতন কোর্ট অফিস সংলগ্ন। ঢাকার গুলিস্তান থেকে “ঢাকা ট্রান্সপোর্ট” বা “দিঘীরপাড় ট্রান্সপোর্ট” এর মাধ্যমে মুক্তারপুর আসা যায়। মুক্তারপুর থেকে অটো রিক্সায় ১০ টাকা (জন প্রতি) বা রিক্সা যোগে ২০-২৫ টাকায় ইদ্রাকপুরের কেল্লায় যাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ, বাগেরহাট