আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ: ২০২৫ সালে পদার্থে নোবেল: কোয়ান্টাম যুগের পথিকৃৎরা । ২০২৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে জন ক্লার্ক (John Clarke), মিশেল ডেভোরে (Michel H. Devoret) এবং জন মার্টিনিস (John M. Martinis)-কে, তাঁদের “ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং ও কোয়ান্টাইজড এনার্জি স্তর নির্ধারণ” নিয়ে করা পরীক্ষামূলক গবেষণার জন্য।
এই পুরস্কার বিজ্ঞানের এমন এক সীমা ছুঁয়েছে যেখানে কোয়ান্টাম কার্যবিধি মাইক্রো স্কেল ছাড়িয়ে বড় সিস্টেমেও প্রযোজ্য হতে পারে, যা আগামী প্রযুক্তিগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর গড়ে দেবে।
পুরস্কারের কারণ ও গুরুত্ব
নোবেল কমিটি জানিয়ে দিয়েছে যে এই বিজ্ঞানীরা এমন একটি বৈদ্যুতিক সার্কিটে কাজ করেছেন যেখানে দেখানো গেছে কোয়ান্টাম টানেলিং এবং এনার্জির কোয়ান্টাইজেশন — সাধারণত যা অনুচিতভাবে ছোট কণুদয় পর্যায়ে দেখা যেত, তা এবার এমন সিস্টেমে পাওয়া গেছে যা হাতে ধরা যেতে পারে।
এই কাজ প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত মূল্যবান কারণ এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি ও কোয়ান্টাম সেন্সর প্রযুক্তির উন্নয়নে নতুন পথ খুলে দেবে।
পরিচয় ও কর্মজীবন
জন ক্লার্ক: ১৯৪২ সালে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজে জন্মগ্রহণ করেছেন, এবং ১৯৬৮ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি অর্জন করেছেন।
প্রযুক্তি রূপান্তর: গবেষণাগারে সফলতা থেকে বাণিজ্যিক প্রোডাক্টে রূপান্তর সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়সাধ্য।
নিয়ন্ত্রণ ও নীতি: কোয়ান্টাম প্রযুক্তি নিরাপত্তা ও নীতির দিক থেকে নতুন প্রশ্ন তোলবে।
গবেষণা ক্ষেত্র: সুপারকন্ডাক্টর সার্কিট, বৈদ্যুতিক সার্কিটের কোয়ান্টাম প্রক্রিয়া।
মিশেল ডেভোরে: প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৫৩ সালে এবং তিনি Paris‑Sud University থেকে ১৯৮২ সালে পিএইচডি অর্জন করেছেন। গবেষণা করেছেন কোয়ান্টাম সার্কিট ডিজাইন ও পরীক্ষা‑নিরীক্ষা নিয়ে।
জন মার্টিনিস: ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন। UC Santa Barbara-তে অধ্যাপক এবং গবেষক। সুপারকন্ডাক্টিং সার্কিট ও কোয়ান্টাম অবস্থা নির্ধারণে তাঁর অবদান দৃষ্টনন্দন।
পুরস্কার ও আনুষ্ঠানিকতা
পুরস্কারের অর্থ: ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রাউন (প্রায় ১.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা সমানভাবে তিনজনের মধ্যে ভাগ হয়ে দেওয়া হবে।
পুরস্কার ঘোষণা ও প্রদান: প্রতি বছরের আগস্ট বা অক্টোবরের শুরুতে ঘোষণা, এবং ১০ ডিসেম্বর—আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্টকহোমে পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক প্রবর্তন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান: রয়েেল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
প্রভাব ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
প্রভাব: এই কাজ কোয়ান্টাম প্রযুক্তির বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে, বিশেষ করে সার্কিট-ভিত্তিক কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও সেন্সর প্রযুক্তি-তে।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি দেখিয়েছে যে কোয়ান্টাম গুণাবলী বৃহদাকার সিস্টেমেও প্রযোজ্য—এটি থিওরি থেকে বাস্তবতার দিকে একটি বড় ধাপ।
আরও পড়ুন:
❒ অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিন মার্কিনি
❒ সাহিত্যে নোবেল পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার হান কাং
❒ চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী
❒ কম্পিউটার বিজ্ঞানের নোবেল ‘টুরিং’ পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা
চ্যালেঞ্জ:
পরিমাপ ও স্থায়িত্ব: বড় সিস্টেমে কোয়ান্টাম অবস্থা রক্ষা করা কঠিন।
পরিবেশ প্রভাব: তাপ, শব্দ ও পার্শ্বশব্দ কোয়ান্টাম সূক্ষ্মতা নষ্ট করতে পারে।
২০২৫ সালের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জয়ীদের কাজ বিজ্ঞানের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছে—কোয়ান্টাম প্রক্রিয়া বড় সিস্টেমে মানুষের হাতে তুলে দেয়ার সম্ভাবনা। জন ক্লার্ক, মিশেল ডেভোরে ও জন মার্টিনিস যে পথ দেখিয়েছেন, তা আগামী যুগের প্রযুক্তিগত সমাধানের ভিত্তি হতে পারে। তবে পরীক্ষামূলক সীমা ছাড়িয়ে প্রযুক্তিগত প্রয়োগে উপযুক্ত সমন্বয় ও গবেষণা গ্রহনীয় হবে। এই পুরস্কার কেবল তাদেরকে সম্মান জানায়নি, বরং মানবতার ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে ছুঁয়ে দিয়েছে।
❑ নোবেল পুরস্কার থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালের চিকিৎসা নোবেল: প্রতিরোধী ইমিউন টলারেন্স আবিষ্কারের স্বীকৃতি

