আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ: ২০২৫ সালের চিকিৎসা নোবেল: প্রতিরোধী ইমিউন টলারেন্স আবিষ্কারের স্বীকৃতি । মেরি ই ব্রাঙ্কো, ফ্রেড র্যামসডেল ও শিমন সাকাগুচি কে ২০২৫ সালের চিকিৎসা বা ফিজিওলজি নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তাঁদের “পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স (Peripheral Immune Tolerance)” বিষয়ক আবিষ্কারের জন্য।
পুরস্কারের কারণ ও গুরুত্ব
এই বছরের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে এমন গবেষণার জন্য যা বুঝতে সাহায্য করেছে কীভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার (Immune System) অংশ হিসেবে কাজ করে এমন কোষগুলি (Regulatory T cells) স্ব-দেহ অংশের বিরুদ্ধে আক্রমণ ঠেকায় এবং অটোইমিউন রোগ সৃষ্টি রোধ করে।
গবেষকরা দেখিয়েছেন, যদি এই টোলারেন্স সিস্টেম ব্যর্থ হয়, তাহলে দেহের নিজের কোষই আক্রান্ত হতে পারে—যেমন রোম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, টাইপ ১ ডায়াবেটিস ইত্যাদি।
পরিচয় ও কর্মজীবন
মেরি ই ব্রাঙ্কো (Mary E. Brunkow)
মার্কিন জৈববিজ্ঞানী ও ইমিউনোলজিস্ট। ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে মলিকুলার বায়োলজিতে পিএইচডি অর্জন। একাডেমিক ও শিল্প গবেষণার মধ্যে কাজ করেছেন, বিশেষ করে ইমিউনোলজি ও সিস্টেম বায়োলজি ক্ষেত্রে। তাঁকে FOXP3 জিন আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে-স্কারফাই (‘scurfy’) মাউস মডেলে এই জিনের অপর্যাপ্ত কার্যকারিতা অটোইমিউন সমস্যার দিকে নিয়ে যায়।২০২৫ সালে “পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স” আবিষ্কার করার জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন।
ফ্রেড র্যামসডেল (Fred Ramsdell)
Frederick J. “Fred” Ramsdell একজন আমেরিকান ইমিউনোলজিস্ট। তিনি সান ডিয়েগো (University of California, San Diego) থেকে জীববিজ্ঞান/বায়োলজি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি এবং UCLA থেকে ইমিউনোলজিতে পিএইচডি অর্জন করেছেন। পোস্টডক অধ্যয়ন করেছেন National Institutes of Health (NIH)-এ। বায়োটেকনোলজি ও রোগপ্রতিরোধ গবেষণায় কাজ করেছেন—Darwin Molecular, ZymoGenetics, Novo Nordisk সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। ২০১৬ সাল থেকে Parker Institute for Cancer Immunotherapy-এ Research Director হিসেবে কাজ করছেন। FOXP3 জিনের আবিষ্কার ও রেগুলেটরি T সেলের কাজ বোঝাতে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১৭ সালে তিনি Shimon Sakaguchi ও Alexander Rudensky-এর সঙ্গে Crafoord Prize লাভ করেছিলেন।
শিমন সাকাগুচি (Shimon Sakaguchi)
শিমন সাকাগুচি একজন জাপানি ইমিউনোলজিস্ট ও অধ্যাপক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Immunology Frontier Research Center-এ Distinguished Professor। ১৯৫১ সালে শিগা প্রিফেকচারে (জাপান) জন্মগ্রহণ করেছেন। ১৯৭৬ সালে Kyoto University থেকে মেডিসিন বিষয়ে এমডি এবং ১৯৮২ সালে PhD অর্জন করেছেন। পরবর্তীতে তিনি Johns Hopkins ও Stanford বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টডক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি মূলত রেগুলেটরি T সেল (Regulatory T cell, Treg) আবিষ্কার ও তার কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করার জন্য পরিচিত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যেমন Gairdner International Award (২০১৫) , Order of Culture (জাপানে) , Crafoord Prize , Robert Koch Prize প্রভৃতি। ২০২৫ সালে তিনি Mary Brunkow ও Fred Ramsdell-এর সঙ্গে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স বিষয়ক আবিষ্কারের জন্য।
তিনজনই তাঁদের গবেষণার মাধ্যমে ফক্সপি৩ (FOXP3) জিনের ভূমিকা ও রেগুলেটরি T-সেলগুলোর কার্যকারিতা উদঘাটন করেছেন, যা রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার স্ব-নিয়ন্ত্রণে অবিচল ভূমিকা রাখে।
পুরস্কার ও আনুষ্ঠানিকতা
নোবেল অ্যাসেম্বলি, কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট, স্টকহোলম এই পুরস্কার ঘোষণা করেছে। তারা SKr 11 মিলিয়ন (প্রায় ১.২ মিলিয়ন ডলার) অর্থ পুরস্কার ও স্বর্ণপদক পাবেন।
অফিশিয়াল পুরস্কার প্রদান হবে ১০ ডিসেম্বর—আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুর বার্ষিকীতে।
আরও পড়ুন:
❒ শান্তিতে নোবেল পেল জাপানি সংগঠন নিহন হিদানকিও
❒ পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন হপফিল্ড ও হিন্টন
❒ চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী
প্রভাব ও ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ
এই আবিষ্কার রোগ প্রতিরোধ, অটোইমিউন রোগ, ক্যান্সার, এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন (organ transplantation) সেক্টরে নতুন থেরাপি উন্নয়নে পথপ্রদর্শক হতে পারে।
নোবেল জুরি বলেছে, এই আবিষ্কার “নতুন ক্ষেত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছে”।
২০২৫ সালের চিকিৎসা নোবেল স্বীকার করেছে যে আমাদের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং জটিল। Brunkow, Ramsdell ও Sakaguchi-র গবেষণা দেখিয়েছে, রোগ প্রতিরোধে অতিরিক্ত উত্তেজনা দেহকেই আক্রমণ করতে পারে—এটি নিয়ন্ত্রণে রাখাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই পুরস্কার শুধু তাদেরকে সম্মান দেয়নি, বরং মানবজীবনের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজাও খুলে দিয়েছে।
❑ নোবেল পুরস্কার থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: ইগ নোবেল ২০২৫: অদ্ভুত গবেষণায় এবার যারা পেল পুরস্কার

