আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ২০০ বছর ধরে বিখ্যাত টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম । চমচম টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ী বিখ্যাত মিষ্টি যা বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তান ছাড়াও সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশেই বিখ্যাত। চমচমকে বাংলাদেশের সকল মিষ্টির রাজা বলা হয়। এটি ছানার তৈরি একপ্রকার মিষ্টি বিশেষ।
পোড়াবাড়ির চমচমের রয়েছে প্রায় দু’শো বছরের ইতিহাস। এক সময় এ চমচমের ‘রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত ছিল পোড়াবাড়ি গ্রাম। খাঁটি চমচম তৈরির জন্য সুনাম ছিল টাঙ্গাইল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরের এ গ্রাম। প্রায় দু’শো বছর আগে যশোরথ হাল নামে এক কারিগর প্রথম এ মিষ্টি তৈরি করেন।
সময়ের ঘূর্ণায়মান স্রোতে এ মিষ্টির বৈশিষ্ট্য স্বতন্ত্র রয়েছে। মুখে দিলেই মিলিয়ে যাওয়া এ চমচম খেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন ভোজনরসিকরা। পোড়াবাড়ি গ্রামের বাইরে শুধু টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনিসহ কয়েকটি এলাকার কারিগররা এ বিশেষ মিষ্টান্ন তৈরি করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ভাগ্যকুলের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি এবং ঘোল
ইতিহাস বলছে- দশরথ গৌড় নামে এক ব্যক্তি ব্রিটিশ আমলে আসাম থেকে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর তীরবর্তী পোড়াবাড়িতে আসেন। তিনি যমুনার পানি ও গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে প্রথমে চমচম তৈরি শুরু করেন। পরে সেখানেই মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
এর আগে ১৬০৮ সালে পোড়াবাড়ি গ্রামটিকে নদীবন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সে সময়কালে ধলেশ্বরীর পশ্চিম তীরে গড়ে উঠেছিল জমজমাট ব্যবসা কেন্দ্র পোড়াবাড়ি বাজার। তখন পোড়াবাড়ি ঘাটে ভিড়তো বড় বড় সওদাগরি নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমার। এ বাজারে যোগ হয় সুস্বাদু চমচম, গড়ে ওঠে মিষ্টির বাজার। ধীরে ধীরে পোড়াবাড়িতে প্রায় অর্ধশত চমচম তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে।
পোড়াবাড়ির চমচম তৈরির প্রধান উপকরণ দুধের ছানা, ময়দা আর চিনি। এসব উপকরণে তৈরি চমচমে নরম ভাব যেমন, তেমন ঘ্রাণেও অনন্য।
বর্তমানে পোড়াবাড়ি বাজার, চারাবাড়ি বাজার, সন্তোষ মিলিয়ে ১৩টি মিষ্টি তৈরীর কারখানা রয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের মিষ্টি পট্টি এলাকা এবং পুরো শহর জুড়ে প্রায় ৫০টি মিষ্টির দোকান রয়েছে। পোড়াবাড়ির চমচম ছাড়াও এসব দোকানে রসগোল্লা, পানতোয়া, আমিত্তি, রাজভোগ, মোহন ভোগ, জিলাপি ও দই ইত্যাদি বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার পাওয়া যায়। ঐতিহ্যবাহী পোড়াবাড়ির চমচম বর্তমান সময়ে বিভিন্ন উৎসব অনুস্থানে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
লালচে রঙের পোড়াবাড়ির চমচমের ওপর দুধ জ্বাল দিয়ে শুকিয়ে তৈরি গুঁড়া মাওয়া ছিটিয়ে দেওয়া হয়। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় এ বিশেষ মিষ্টি আজও ধরে রেখেছে জনপ্রিয়তা। কেউ টাঙ্গাইল গেলে পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ নিতে ভোলেন না।
আরও পড়ুনঃ গাজীপুরের কাঁঠালের খ্যাতি দেশ-বিদেশে