আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘সাবিত্রী’ মিষ্টি । আধুনিকতার ছোঁয়ায় ভেজালের ভিড়ে এখন অনেক মিষ্টিই তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। হারিয়েছে ঐতিহ্য, কিন্তু এই আধুনিক যুগেও এখনো খুঁজে পাওয়া যায় ঐহিত্যবাহী পুরনো মিষ্টির স্বাদ। তেমনি এক মিষ্টির নাম সাবিত্রী। প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টি। কাল পরিক্রমায় সারাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে সাবিত্রী। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অতিথিদের নাশতায়, মেহমানদারি, আত্মীয়ের বাড়িতে গমন কিংবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে তিন পুরুষ ধরে চলে আসা এ মিষ্টির কদর রয়েছে।
দেখতে অনেকটা চমচমের মতো। তবে আকার লম্বা ও চ্যাপটা। খেতে সুস্বাদু। এ মিষ্টি দেখতে সচারচর মিষ্টির চেয়ে ভিন্ন। জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকেই সাবিত্রীর কারিগররা বংশ পরম্পরায় ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছেন। সাবিত্রী মিষ্টির প্রথম কারিগর ছিলেন বাসুদেব সাহা। পরে মিষ্টি তৈরির এ বিদ্যাটি রপ্ত করেন তার ছেলে রবীন্দ্রনাথ সাহা। বাইরের কারিগর দিয়ে মিষ্টি তৈরির কাজ না করায় সাবিত্রীর গুণগতমান ও স্বাদ আজও একই রকম। কদরও বাড়ছে দিন দিন। বাজারের অন্যান্য মিষ্টির তুলনায় এর দামও কম। সাধ্যের মধ্যে হওয়ায় সবাই এটি কিনে খেতে পারে।
সাবিত্রী দক্ষিণ অঞ্চলের মেহেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। ১৮৬১ সালে মেহেরপুর শহরের বড়বাজার এলাকার বাসুদেব সাহা নিজ বাড়িতে এই মিষ্টি তৈরি শুরু করেন। মিষ্টি বিক্রির অর্থ দিয়ে চলত তার সংসার। খাঁটি ও নির্ভেজাল অর্থে সতী সাবিত্রী’র নামেই বাসুদেব মিষ্টির নামকরণ করেন ‘সাবিত্রী’। সেসময় ভোজনরসিক জমিদারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এ মিষ্টি।
বাসুদেব সাহার কাছ থেকে তার ছেলে রবীন্দ্রনাথ সাহা এই মিষ্টি তৈরির কৌশল শেখেন। তার কাছ থেকে শেখেন তার দুই সন্তান বিকাশ কুমার সাহা ও অনন্ত কুমার সাহা। এখন মেহেরপুর শহরের কাসারী বাজারের প্রধান সড়কে ‘বাসুদেব গ্রান্ড সন্স’ নামে মিষ্টির ব্যবসা পরিচালনা করছেন। মিষ্টির গুণগত মান ধরে রাখতে কোনো কর্মচারী রাখেননি তারা। নিজেরাই পরিবার পরিজন নিয়ে সীমিত পরিসরে সাবিত্রী মিষ্টি তৈরি করেন।
আরও পড়ুনঃ ভাগ্যকুলের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি এবং ঘোল
বাসুদেব গ্র্যান্ড সন্সের বর্তমান মালিক বিকাশ সাহা বলেন, সাবিত্রী তৈরিতে ব্যবহৃত দুধ কিংবা মিষ্টি ফ্রিজে রাখা হয় না। ফ্রিজে রাখলে স্বাদ আর মান ঠিক থাকে না। প্রতিদিন সংগ্রহ করা দুধ ভারী কাঠ দিয়ে চুলায় জ্বাল করানো হয়। দিনের পুরো সময় ধরে দুধ জ্বাল দিতে হয়। সন্ধ্যার দিকে জ্বাল দেওয়া শেষ হলে তা ঠান্ডা করার জন্য রেখে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে সাবিত্রী বানিয়ে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন মিষ্টির যে পরিমাণ অর্ডার পাই সে অনুযায়ী দুধের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।
বিকাশ সাহা আরও বলেন, দুধ-চিনি আর কাঠের দাম বেড়ে যাওয়া এবং সময়মতো দুধের যোগান না পাওয়ায় মাঝে-মধ্যে সংকট তৈরি হয়। বাপ-দাদার হাতের মিষ্টি তৈরির স্বত্ব অন্য কাউকে দিতে চাই না। যদি কেউ ভেজাল করে তাহলে দেড়শ বছরের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। বিষয়টি মাথায় রেখে বহিরাগত কাউকে কাজে নেওয়া হয় না। আমরা সাবিত্রী ও রসকদম মিষ্টি তৈরি করে থাকি। দুটোই মেহেরপুরের ঐতিহ্য বহন করে। প্রতি কেজি সাবিত্রী ও রসকদম ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
এই মিষ্টিটি দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে তার ঐতিহ্য ধরে রখেছে। এই মিষ্টির মধ্যে ভেজাল নেই এবং এই মিষ্টিটি এখন জেলার ব্র্যান্ডিং মিষ্টি হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছে। বাসুদেব সাহার সৃষ্টি সাবিত্রী মিষ্টি জেলার ঐতিহ্যকে বিদেশেও পরিচিত করে দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আড়াইশো বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নাটোরের কাঁচাগোল্লা