আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: হেনরি কিসিঞ্জারের জানা-অজানা তথ্য । যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। সর্বশেষ তিনি নিক্সন ও ফোর্ড প্রশাসনে দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি একদিকে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, অন্যদিকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবেও আখ্যায়িত।
তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক কনসালটিং প্রতিষ্ঠান, কিসিঞ্জার এসোসিয়েটস এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, জার্মান বংশোদ্ভূত এই সাবেক কূটনীতিক কানেক্টিকাটে তার বাড়িতে মারা গেছেন। তবে বিবৃতিতে তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।
কয়েক দশকের ক্যারিয়ারে কিসিঞ্জার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কখনো কখনো আলোচিত, সমালোচিত এবং বিতর্কিতও হয়েছেন। চলুন জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হিসেবে আখ্যা দেয়া সাবেক এই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে কিছু তথ্য:
১. ১৯২৩ সালের ২৭ মে জার্মানির বাভারিয়ান অঞ্চলের শহর ফুর্থে হেইঞ্জ আলফ্রেড কিসিঞ্জার জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে তার পরিবার নাৎসি শাসন আমলে জার্মানি থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আসে। এখানেই তার বেড়ে উঠা। এরপর ১৯৪৩ সালে তিনি মার্কিন নাগরিক হন। এরপর মার্কিন সেনাবাহিনীতে এবং পরে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্পসে তিন বছর চাকরি করেন।
আরও পড়ুনঃ হিটলার সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিসিঞ্জার মার্কিন সেনাবাহিনীর ৮৪ তম পদাতিক ডিভিশনের সদস্য হিসেবে স্বদেশে ফিরে যান। তিনি গোয়েন্দা অপারেশনে অনুবাদক হিসেবে কাজ করতেন এবং গেস্টাপো সদস্যদের গ্রেফতারে সহায়তা করতেন। তাকে ব্রোঞ্জ তারকা অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়।
৩. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শেষে, কিসিঞ্জার ১৯৬৯ সালে রিচার্ড নিক্সনের প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন ১৯৭৪ সালে নিক্সনের পদত্যাগের পরও প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের অধীনেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন তিনি।
৪. ভিয়েতনাম যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা, সেটাকে কম্বোডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া, চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা, যুগান্তকারী মার্কিন-সোভিয়েত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনা এবং ইসরাইল ও আরবের সম্পর্ক প্রসারিত করাসহ ১৯৭০ এর দশকের বহু যুগ-পরিবর্তনকারী বৈশ্বিক ঘটনাতে কিসিঞ্জারের হাত ছিল। এমনকি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধেও বিতর্কিত অবস্থান ছিল তার।
৫. ১৯৭৩ সালে উত্তর ভিয়েতনামের লে ডুক থো’র সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান কিসিঞ্জার; যা ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত। প্যারিস শান্তি আলোচনায় মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার, যুদ্ধবিরতি এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারের সংরক্ষণের ব্যবস্থার জন্য তাদের নোবেল পুরস্কারজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিল। তাদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার দেয়ার জন্য সেসময় নোবেল কমিটির দুইজন সদস্য পদত্যাগ করেন। পরে অবশ্য থো এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
৬. কিসিঞ্জারকে বিভিন্ন সময় অভিনেত্রী ক্যান্ডিস বার্গেন, শার্লি ম্যাকলাইন, জিল সেন্ট জন, মারলো থমাস, লিভ উলম্যান এবং সামান্থা এগারের সাথে দেখা গিয়েছিল। এছাড়াও তাকে তৎকালীন হোয়াইট হাউসের কর্মী ও বর্তমান এবিসি নিউজের অ্যাঙ্কর ডায়ান সোয়ারের সঙ্গেও অসংখ্যবার দেখা গেছে। যার ফলে বেশিরভাগ মিডিয়ায় তার ‘প্লেবয়’ ইমেজ প্রকাশ পেয়েছে।
৭. কিসিঞ্জার সবশেষ ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট প্রশাসনে ছিলেন কিন্তু তিনি জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিসিঞ্জারকে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার তদন্ত কমিশন প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার পরামর্শদাতা সংস্থার ক্লায়েন্টদের নাম প্রকাশ করতে চাননি বলে সেসময় পদত্যাগ করেন।
৮. আর্জেন্টাইন সামরিক বাহিনী বিশ্বাস করে, কিসিঞ্জার তাদের বামপন্থী ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণ্য যুদ্ধ’ পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য প্রকাশিত নথিতে তাই দেখা গেছে। তিনি সে সময় ১৯৭৬ সালের অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীকে উৎসাহিত করেন এবং পরে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ নিশ্চিহ্ন করার জন্য তাদের প্রশংসা করেছিলেন।
৯. সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ টম লেহরার কিসিঞ্জারের উদ্দেশে বলেন, ‘হেনরি কিসিঞ্জার যখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান তখন রাজনৈতিক স্যাটায়ারও বাতিল হয়ে যায়।’
সূত্র : রয়টার্স
আরও পড়ুনঃ ইউরেনিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য