হিজরি নববর্ষ হোক জীবনকে ঢেলে সাজানোর নতুন আত্মপ্রত্যয়
বিদায় জিলহজ। আজ সোমবার পয়লা মহরম। শুরু হলো হিজরি নববর্ষ, ১৪৪৬। বাংলাদেশের আকাশে গতকাল সন্ধ্যায় মহরম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আগামী ১৭ জুলাই সারা দেশে পবিত্র আশুরা উদ্যাপিত হবে।
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই হিজরি সনের শুভ সূচনা হয়েছিল। তাই মুসলমান ও আরব বিশ্বে হিজরি নববর্ষ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে দাপ্তরিক কাজকর্ম হয় আরবি ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে।
পবিত্র কুরআনুল কারিম ও হাদিস শরিফে মহররম মাসকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। কুরআনের ভাষায় এটি সম্মানিত চার মাসের ‘আরবাআতুন হুরুম’ অন্যতম।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ত্যাগ ও কুরবানির ঐতিহাসিক স্মৃতি স্মারক হিজরি (আরবি) সন। ইসলামের প্রচার, প্রসার এবং বিজয় কেতন উড্ডীনে হিজরি সনের গুরুত্ব ও তাত্পর্য অত্যধিক। ইসলামের শত্রুরা বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসলামকে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবী দিন প্রচারে প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা ত্যাগ করে ইয়াসরিবে (মাদিনা মুনাওয়ারায়) হিজরত করেন। যাকে কেন্দ্র করেই আজকের হিজরি সন। হিজরি বছরের প্রথম মাস মহরম ও শেষ মাস জিলহজ অনেক ফজিলত ও মর্যাদার মাস।
শরিয়তের দৃষ্টিতে মহরম মাসটি যেমন অনেক তাত্পর্যপূর্ণ, তেমনি এ মাসে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণও অনেক দীর্ঘ। ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষী এ মহরম মাস। ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্রপাত হয় এ মাসে।
অনেকেই আশুরার ঐতিহ্য বলতে রসুলুল্লাহ (স.)-এর প্রিয়তম দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাত ও নবি পরিবারের কয়েক জন সম্মানিত সদস্যের রক্তে রঞ্জিত কারবালার ইতিহাসকেই বুঝে থাকে। বাস্তবতা হলো—হজরত হুসাইন (রা.)-এর মর্মান্তিক শাহাদতের ঘটনার অনেক আগে থেকেই আশুরা অনেক তাত্পর্যপূর্ণ ও রহস্যঘেরা দিন।
কারণ কারবালার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬১ হিজরির ১০ মহরম। তারও বহু আগে ১০ মহররম হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ও তার সাথিদের ফেরাউন ও তার সৈন্যদের থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা; যেখানে দরিয়ায় রাস্তা বানিয়ে আল্লাহ তাআলা তাদের নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছেন।
এই রাস্তা দিয়ে অতিক্রম করার সময় ফেরাউন ও তার সৈন্যদের দরিয়ায় ডুবিয়ে ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে ১০ মহরম। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের হাত থেকে আশুরার দিন মুক্তি পান।
বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষে আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন তথা কর্মসূচি পালিত হয়ে থাকে। আরবি নববর্ষের অনেক গুরুত্ব ও তাৎপর্য থাকা সত্ত্বেও উল্লেখ করার মতো কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না বললেই চলে।
হিজরি বছরের শেষ মাস এবং শুরুর মাস অনেক মর্যাদা ও ফজিলতের মাস। তাই এ হিজরি বছরের শেষ এবং নতুন বছরের প্রথম রাত ও দিন বিগত দিনের গোনাহ মাফ এবং আগামী দিনের কল্যাণ লাভের এক মর্যাদপূর্ণ সময়।
১৪৪৬ হিজরি সাল মুসলমানের জন্য আগামী দিনে রহমত বরকত ও নাজাতের বারতা নিয়েই পথচলা শুরু করেছে আজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ত্যাগ ও কুরবানির ঐতিহাসিক স্মৃতি স্মারক হিজরি (আরবি) সন।
ইসলামের প্রচার, প্রসার এবং বিজয় কেতন উড্ডীনে হিজরি সনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যাধিক। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের জ্ঞানপাপীরা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও ইসলামকে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবি দ্বীন প্রচারে প্রিয় মাতৃভূমি ত্যাগ করে মাদিনা মুনাওয়ারায় হিজরত করেন। যাকে কেন্দ্র করেই আজকের হিজরি সন। যা আজো মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে আলোকবর্তিকা হিসেবে জাগরিত হয়ে আছে।
মনে রাখা জরুরি যে, হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। এ মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। মুহাররম মাস শুধুমাত্র কারবালার ঘটনা স্মরণ করার মাসই নয়, এ মাস গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার, ত্যাগের, ভালো কাজ করার, খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং মুসলিম বিশ্বকে নতুন করে গড়ার প্রতিজ্ঞা করার মাস।
ইসলাম ও মুসলমানের জন্য এ মাসের রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় ও পালনীয় বিষয়। তাইতো এ মাসের ৯, ১০ ও ১১ তারিখে রোজা রাখা উত্তম।
নববর্ষের শিক্ষা হলো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও মানবতার জন্য ত্যাগ স্বীকার। এই দিনে ব্যক্তি পুরনো বছরের আত্মপর্যালোচনা এবং নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা সাজিয়ে নব উদ্যমে কর্মতৎপর হতে পারে। নববর্ষের শুরুতে শুভেচ্ছা বিনিময় করে পরস্পরের কল্যাণ কামনা করতে পারে।
ইসলামে অশুভ ও কুলক্ষণের চর্চা না থাকলেও শুভ ও কল্যাণের ধারণা আছে। আনাস (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, ‘ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি আর কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। তবে ‘ফাল’ (শুভ লক্ষণ) আমাকে আনন্দিত করে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ফাল’ কী? তিনি বলেন, ‘উত্তম বাক্য’। (সহিহ বুখারি: ৫৭৭৬)
অর্থাৎ সুন্দর শব্দ ও উত্তম বাক্য শুনে মনে মনে কল্যাণের আশা পোষণ করা বৈধ। এজন্য নবী জীবনের আদর্শ অনুসরণের জন্য কোরআন-হাদিসের পাশাপাশি বছরব্যাপী সিরাত-সাহিত্য অধ্যয়নের পরিকল্পনা নিতে পারে মুসলিম উম্মাহ। নববর্ষে হোক জীবনকে ঢেলে সাজানোর নতুন আত্মপ্রত্যয়।
হিজরি নববর্ষ বিশ্ব মানবতাকে ইসলামের সুমহান আদর্শ ও ত্যাগের দিকেই আহ্বান করে।
❑ সম্পাদকীয় থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ সবার অংশগ্রহণে ঈদুল আজহা হয়ে উঠুক আনন্দময়