আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ‘হাতির বাংলো’ ১৩১ বছরের পুরোনো চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক স্থাপনা । চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো ‘হাতির বাংলো’। এটি চট্টগ্রামের পাহাড়ঘেরা অঞ্চলে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন।
অবিকল হাতির আদলে নির্মিত ১৩১ বছরের পুরোনো একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। এটি শুধু একটি ভবন নয়, বরং চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি নিদর্শন। এর স্থাপত্যশৈলী, স্থানীয় লোককথা এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব এটিকে বিশেষ এক মর্যাদা দিয়েছে।
হাতির বাংলো চট্টগ্রামের স্থানীয় জনগণের কাছে একটি বিশেষ আকর্ষণ। এটি মূলত একটি বিশাল বাংলো, যা ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়। চারপাশে সবুজ গাছপালা, শান্ত পরিবেশ এবং পাহাড়ি সৌন্দর্য হাতির বাংলোকে পর্যটকদের জন্য একটি পছন্দের গন্তব্যে পরিণত করেছে।
হাতির বাংলোর নামকরণ নিয়ে বেশ কয়েকটি লোককথা প্রচলিত আছে। একটি লোককথা অনুসারে, এই স্থানে ব্রিটিশদের হাতি প্রশিক্ষণের একটি ঘাঁটি ছিল। বাংলোর নিকটবর্তী এলাকায় হাতির আনাগোনা এতটাই বেশি ছিল যে, স্থানীয়রা এটি হাতির বাংলো নামে অভিহিত করতে শুরু করে।
১৮৯৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয় ব্রিটিশ প্রকৌশলী ব্রাউনজারের অধীনে। সেসময় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্যই বাংলোটি নির্মাণ করেন প্রকৌশলী ব্রাউনজার। ব্রিটিশদের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড এবং বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হতো এটি। দেশভাগের পর এটি স্থানীয় প্রশাসনের অধীনে চলে আসে এবং ধীরে ধীরে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে।
আরও পড়ুনঃ ৩৫০ বছরের পুরনো মুন্সিগঞ্জের ইদ্রাকপুর কেল্লা
হাতির বাংলোর স্থাপত্যশৈলী ব্রিটিশ স্থাপত্যের সঙ্গে স্থানীয় শৈলীর এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। এর লাল ইটের দেয়াল, বড় বড় বারান্দা, উঁচু ছাদ এবং প্রশস্ত ঘরগুলো এখনো সেই সময়ের নান্দনিকতার পরিচয় বহন করে। বাংলোর চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা এবং ফুলের বাগান এর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
তবে বাংলোটি আজ অবহলোয় অযত্নে পড়ে আছে। বাংলোটির সামনে ও পেছনের অংশ মিলিয়ে মোট ১২টি গোলআকৃতির জানালা আছে। এছাড়া হাতির শুঁড়ের আদলে নির্মিত বারান্দার দু’পাশেও আছে গোলাকার দুটো ছিদ্র, যা দেখতে অনেকটাই হাতির চোখের মতো।
ডুপ্লেক্স এই ভবনের নীচতলায় ৪টি ও দোতলায় একটি শয়নকক্ষ আছে। বর্তমানে স্থাপনাটির সবক’টি দরজা-জানালাই ভেঙে পড়ার পাশাপাশি মরিচা ধরেছে। চট্টগ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ এই হাতির বাংলো পড়ে আছে অনেকটা জীর্ণশীর্ণ অবস্থায়। নেই কোনো রক্ষণাবেক্ষণ, ফলে হারাতে বসেছে বাংলোটির সৌন্দর্য।
এছাড়া ভবনের দেয়ালজুড়ে পড়েছে শ্যাওলা, খসে পড়তে শুরু করেছে পলেস্তারা। বাড়ির চারপাশজুড়ে জমে আছে বিভিন্ন ময়লা আর শুকনো পাতা। নান্দনিক এই বাংলোতে এখন একজন রেলওয়ে কর্মচারী ভেতরের একটি শয়নকক্ষে কোনো রকমে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ
❒ ঐতিহ্যবাহী তোহাখানা কমপ্লেক্স, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
❒ সুলতান সুলেমান সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছেন কত বছর
❒ রাঙ্গামাটির ইতিহাসের সাক্ষী ৩২০ বছরের চাপালিশ গাছ
❒ ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস বহন করছে
বিকাল হলেই অনেক দর্শনার্থী হাতির বাংলো দেখতে ছুটে আসেন। দর্শনার্থীরা ছবি তোলার পাশাপাশি এখানে অনেক সময় বিভিন্ন শর্টফিল্মের শুটিংও হয়ে থাকে। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝিতে ‘ফেরো’ সিমেন্ট দিয়ে নির্মিত এই বাংলোর ১৩১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বেশ মজবুত অবস্থায় আছে।
হাতির বাংলো ভ্রমণের জন্য বছরের যে কোনো সময়ই উপযুক্ত। তবে বর্ষাকালে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। এটি ভ্রমণের জন্য চট্টগ্রামের শহরের কেন্দ্র থেকে সহজেই যাতায়াত করা যায়। হাতির বাংলো শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের একটি জীবন্ত সাক্ষী। এর ইতিহাস, স্থাপত্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তাই এটি সংরক্ষণ করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর গুরুত্ব তুলে ধরা অত্যন্ত প্রয়োজন।
❑ ইতিহাস ও ঐতিহ্য থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ সৌদিতে ৪ হাজার বছরের পুরোনো শহরের সন্ধান