আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর তেজপাতা । তরকারি বা মাংস রান্নায় তেজপাতা না হলে চলেই না। বলা হয়, এর চমৎকার গন্ধ তরকারি, মাংস বা বিভিন্ন খাবারে আনে বাড়তি স্বাদ। এমনকি তেজপাতার চা আমাদের শরীরকে একটা ঝরঝরে অনুভূতি দেয়। তবে তেজপাতা কি কেবল সুগন্ধই আনে? খাদ্যগুণে কতটা সমৃদ্ধ এই পাতা?
তেজপাতা সুগন্ধি মসলা। কাঁচা পাতার রং সবুজ। শুকনো পাতার রং বাদামি। মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এই তেজপাতায় ঔষধি গুণ রয়েছে। ভিটামিন ‘ই’ ও ‘সি’-সমৃদ্ধ এই মসলায় রয়েছে ফলিক অ্যাসিড ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান।
হজমশক্তি বাড়ায়
মানবদেহের পরিপাকতন্ত্র ব্যবস্থায় বেশ প্রভাব ফেলে তেজপাতা। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয় এবং শরীরকে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। তেজপাতায় রয়েছে এমন জৈব যৌগ, যা পেটের অসুখ সারাতে সাহায্য করে। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) বা অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতার ত্রুটিজনিত সমস্যায় তেজপাতা খুব কার্যকর। অনেক সময় শরীর জটিল প্রোটিন সহজে হজম করতে পারে না, তেজপাতা তা হজমে সাহায্য করে।
চুলের বৃদ্ধি ও খুশকি তাড়ায়
আরও পড়ুনঃ আদা সর্বরোগের মহৌষধ
খুশকি ও চুল পড়ে যাওয়া নিয়ে বিপাকে আছেন? চুলের যত্নে তেজপাতায় রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কয়েকটি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। কিছুক্ষণ ঠাণ্ডা হতে দিন। এবার এ পানি দিয়ে চুল ও স্কাল্প ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই শ্যাম্পু করার পর এটি করবেন। মাথার ত্বক চুলকাচ্ছে? তেজপাতা বেটে নারিকেল তেলের সঙ্গে মেশান। স্কাল্পে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
একটি গবেষণায় দেখা যায় দিনে অন্তত দু’বার তেজপাতা গ্রহণ করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে। এটি প্রমাণ হয়েছে যে, তেজপাতায় থাকা উপাদান ইনসুলিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে নিয়ন্ত্রণে রাখে। যারা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন তাদের জন্যেও তেজপাতা বেশ উপকারী।
হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
তেজপাতায় রয়েছে রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
ব্যথা উপশম করে
আরও পড়ুনঃ লবঙ্গের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ও ঝুঁকি
তেজপাতা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথা ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা এমনকি বাতের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। তেজপাতা ও রেড়ির পাতার (ক্যাস্টর) পেস্ট আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই ব্যথা কমে যাবে। এছাড়া পাতার তেল কপালে ম্যাসাজ করলে মাথা ব্যথা থাকবে না।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে
কিছু গবেষণায় দেখা যায় তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
ক্ষত নিরাময় করে
তেজপাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও মাইক্রোব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় এটি ক্ষত সারাতে দারুণভাবে কাজ করে। এটি ক্যান্ডিডার মত ছত্রাক সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
গলা খুশখুশ ও কাঁশি
আপনি যদি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হন ও কাঁশির সমস্যায় ভোগেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে এটি আপনাকে চমৎকারভাবে সাহায্য করবে। ৪-৫টি তেজপাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করুন। পানি কুসুম ঠাণ্ডা করে নিন। একটি পরিষ্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে বুক মুছুন। কয়েকবার এটি করুন। আর খেয়াল রাখবেন পানি যেনো খুব বেশি গরম না হয়।
আরও পড়ুনঃ এলাচ খান, বদলে যাবে জীবন
কিডনির পাথরের চিকিৎসায়
একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেলে এটি কিডনির সমস্যা করে ও অন্যান্য গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে।
উদ্বিগ্নতা ও চাপ কমায়
যদি দিনের শেষে আপনার মনমেজাজ ভালো না লাগে তাহলে এক কাপ তেজপাতার চা খেয়ে দেখতে পারেন। এটি আপনার স্নায়ু শান্ত করে ও উদ্বিগ্নতা কমায় এমনকি ভালো ঘুমের জন্যেও উপকারী।
উকুন দূর করে
৫০ গ্রাম তেজপাতা এবং ৪০০ মি.লি. পানি একসাথে করে চুলায় গরম করতে হবে, যতক্ষণ না কমে ১০০ মি.লি. পানি হয়। তারপর ঠান্ডা করে মাথার তালুতে লাগাতে হবে। ৩-৪ ঘণ্টা রাখার পরে মাথা ধুয়ে ফেলতে হবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও বলিরেখা দূর করতে তেজপাতার জল খুব উপকারী। ৫টি তেজপাতার সাথে ২ গ্লাস পানি গরম করে নিতে হবে। তারপর পানিটা একটি বড় পাত্রে নিয়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে ভাপটা নিতে হবে। এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুনঃ রসুন খাওয়ার আশ্চর্যজনক উপকারিতা
অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করে
নিয়মিত তেজপাতা চিবিয়ে খেলে তা পিরিয়ডকে নিয়মিত ও স্বাভাবিক রাখে।
দাঁত সাদা করে
দাঁতকে সাদা ও সুস্থ রাখতে তেজপাতার জুড়ি মেলা ভার। কফি, চা, তামাক, অ্যালকোহল- এসবের কারণে যদি দাঁত হলুদ হয়ে যায়, তাহলে শুকনো তেজপাতা ও শুকনো কমলার খোসা গুঁড়ো করে অল্প পানির সাথে মিশিয়ে টুথপেস্ট হিসেবে ব্যবহার করবেন। এতে দাঁত সাদা ও ঝকঝকে হয়।
অতিরিক্ত ওজন কমায়
৫ গ্রাম তেজপাতা, এক টুকরো আদা, ২০০ মি.লি. পানি ফুটিয়ে ১/৪ ভাগ করে এর সাথে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে দিনে দুইবার।
সতর্কতা
তেজপাতা গর্ভবতী মা ও সদ্য মায়েদের প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটাতে পারে। এছাড়া সার্জারি রোগীদের দুই সপ্তাহ তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয় কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
আরও পড়ুনঃ বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা