আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: সূর্যের চেয়ে যে গ্রহের তাপমাত্রা বেশি । বিজ্ঞানীরা নতুন এক তথ্যের কথা প্রকাশ করেছেন, সৌরমণ্ডলের বাইরে অসংখ্য গ্রহ আছে। সৌরজগতের বাইরের এসব গ্রহকে নানান ভাগে ভাগ করা হয়। যেসব গ্রহ অতিরিক্ত উত্তপ্ত, তাদের বৃহস্পতি গ্রহের ইংরেজি ‘জুপিটার’ নামের সঙ্গে মিলিয়ে নামকরণ করা হয় ‘হট জুপিটার’।
আরও পড়ুনঃ পৃথিবীকে চড়া রোদ থেকে বাঁচাতে মহাকাশে ছাতা লাগাচ্ছে বিজ্ঞানীরা
এসব গ্রহ তুলনামূলকভাবে তাদের আবর্তিত তারার কাছে অবস্থান করে। কোনো কোনো গ্রহ কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে কয়েক দিন তাদের তারাকে আবর্তন করে। নাম দেখেই বোঝা যায়, এসব গ্রহের তাপমাত্রা অনেক। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই এসব গ্রহের রহস্য উন্মোচনে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব গ্রহ সন্ধানে বড় সংকট হচ্ছে, তাদের তারার উজ্জ্বলতা। তারার উজ্জ্বলতার কারণে এসব গ্রহের সন্ধান পাওয়া বেশ কঠিন। নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে এমনই এক গবেষণাপত্রে দুটি হট জুপিটার ধরনের গ্রহের তথ্য প্রকাশ করেছেন গবেষকেরা। ১ হাজার ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই মহাজাগতিক বস্তুর সন্ধান মিলেছে। যে কারণে উত্তপ্ত গ্রহ নিয়ে নতুন গবেষণার সুযোগ পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
চিলিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির টেলিস্কোপের তথ্য অনুসন্ধান করে গ্রহ দুটির অস্তিত্ব টের পাওয়া গেছে। ইজরায়েলের ওয়েজমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের কণা পদার্থবিদ ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ নামা হাল্লাকউন জানান, ‘আমরা বৃহস্পতি গ্রহের মতো বস্তুর খোঁজ পেয়েছি। তারাকেন্দ্রিক এই মহাজাগতিক বস্তুর তাপমাত্রা সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২ হাজার ডিগ্রির চেয়েও বেশি গরম। যে তারাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এই গ্রহ, তা তুলনামূলক হালকা বলেই খোঁজ মিলেছে তাদের।
২০১৭ সাল থেকে হট জুপিটার নিয়ে গবেষণা করছে গবেষক দল। এমন বাইনারি ধরনের মহাজাগতিক অবস্থা নিয়ে গবেষকদের আগ্রহ অনেক দিনের। সাধারণত দুটি বস্তু আলাদাভাবে পরস্পরকে প্রদক্ষিণ করার বিষয়কে সরলভাবে বাইনারি ধরন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। সন্ধান পাওয়া দুটি গ্রহ ‘বামন গ্রহ’ বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। বামন হলেও একটি গ্রহকে ‘সাদা বামন’ বলে দাবি করেছেন তাঁরা। সূর্যের মতো তারকা ছিল বলেই ‘সাদা বামন’ বলে ডাকা হচ্ছে। আরেকটি বস্তুকে ‘বাদামি বামন’ বলা হচ্ছে। কারণ, এটিকে গ্রহ কিংবা তারা বলা যাচ্ছে না। গ্যাসীয় এই বস্তু বৃহস্পতি গ্রহ এবং আকারে ছোট তারার মতো।
বাদামি বামনদের অনেক সময় অপাঙ্ক্তেয় তারা বলা হয়। এসব মহাজাগতিক বস্তুর হাইড্রোজেন ফিউশন ক্রিয়া চালানোর মতো শক্তি নেই বলে ফেইলড স্টার বা অপাঙ্ক্তেয় তারা হিসেবে ডাকা হয়। তারার আকর্ষণে মহাজাগতিক নানা বস্তু কাছে চলে আসে, এমনকি টুকরা টুকরা হয়ে যেতে পারে। বাদামি বামনের ঘণত্ব অনেক। আবিষ্কৃত বাদামি বামনের ভর বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি, কিন্তু আকারে বৃহস্পতি গ্রহেরই সমান।
যখন কোনো গ্রহ বা গ্রহসদৃশ বস্তু তার তারাকে খুব কাছ থেকে আবর্তন করে, তখন গ্রহের নিকটতম অংশ ও দূরতম অংশের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণের ভিন্নতা দেখা যায়। এই ভিন্নতার কারণে গ্রহের নিজ কেন্দ্রে আবর্তন ও কক্ষপথের মধ্যে আবর্তনের সমন্বয় দেখা যায়। এই বিষয়কে বলা হয় ‘টাইডাল লকিং’। এমন অবস্থায় একটি অংশ সব সময় তারার দিকে অবস্থান করতে থাকে। বিষয়টি অনেকটা চাঁদ ও পৃথিবীর অবস্থানের মতো।
পৃথিবীর আকর্ষণের কারণে চাঁদের একদিক সব সময় দেখা যায়। সন্ধান পাওয়া গ্রহসদৃশ বস্তুর তারার দিকের অংশের বিকিরণ মাত্রা অনেক বেশি দেখা যায়। নিকটবর্তী তারার বিকিরণের কারণে এসব গ্রহসদৃশ বস্তুর তাপমাত্রা অনেক হয়। উজ্জ্বলতার ব্যাপ্তি পরীক্ষা করে এসব বস্তুর তাপমাত্রা পরিমাপ করেন গবেষকেরা। যে পার্শ্ব তারার দিকে তার তাপমাত্রা ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার সেলসিয়াসের মতো, যে কারণে এদের এ-টাইপ তারা বা সূর্যের মতো তারকা বলা হচ্ছে। এসব বস্তু আমাদের পরিচিত সূর্যের চেয়েও দ্বিগুণ ভারী হতে পারে। গ্রহসদৃশ বস্তুর অপর পাশের তাপমাত্রা ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৭০০ সেলসিয়াসের মতো। মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মধ্যে তাপমাত্রার ব্যবধান ৬ হাজার ডিগ্রির মতো।
সূত্র: ফিজিস ডটঅর্গ
আরও পড়ুনঃ দেশের কোথায় কখন ভ্রমণ করলে ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে