আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: সুলতান সুলেমান সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছেন কত বছর । ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সময়কাল থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল মুসলমানদের শাসনের অধীনে আসতে শুরু করে। ধীরেধীরে তা বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে পরে বিশ্বব্যাপী। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে শাসন করেছেন প্রভাবশালী মুসলিম শাসকেরা।
উসমানীয় সাম্রাজ্য
দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা মুসলিম শাসনামলের একটি উসমানীয় সামাজ্য। দীর্ঘ ৬শ বছর টিকে ছিল এই সাম্রাজ্য। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বেশিরভাগ অঞ্চল এর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এর সূচনা হয়েছিল ১২৯৯ খিস্টাব্দে। বিলুপ্তি ঘটে ৩ মার্চ ১৯২৪।
সুলতান সুলেমানের জন্ম
উসমানীয় সুলতানদের মধ্যে প্রভাবশালী ছিলেন সুলতান সুলেমান। তিনি সাম্রাজ্যটির দশম সুলতান ছিলেন। ১৪৯৫ সালের ৬ নভেম্বর জন্ম নেন তিনি। সুলতান সুলেমান সাত বছর বয়সে তোপকাপি প্রাসাদের স্কুলে বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য থিওলজি ও সামরিক বিদ্যা বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তার বাবা সুলতান সেলিম খান মারা গেলে তিনি ১৫২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিশাল এই মুসলিম সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নেন।
সুলতান সুলেমানের মহানুভবতা
সুলতান সুলেমান উসমানীয় খেলাফতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও পরাক্রমশালী শাসক ছিলেন। পাশ্চাত্যে তিনি ‘মহৎ সুলেমান’ হিসেবে পরিচিত। দৈনন্দিন জীবনে তিনি ইসলামের অনুশাসনগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে প্রতিপালন করতেন। সকল মুসলিম নাগরিক যাতে নিয়মিত নামাজ ও রোজা পালন করে সেদিকে তার সজাগ দৃষ্টি ছিল।
সাহসিকতা, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং বদান্যতা তার চরিত্রের ভূষণ ছিল। তিনি নাগরিকদের করভার লাঘব করেন। কখনও তার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতা ও প্রজা নিপীড়নের কোনো অভিযোগ ওঠেনি।
আরও পড়ুনঃ জিনজিরা প্রাসাদ, কেরানীগঞ্জ
সুলতান সুলেমান মসজিদ
রাষ্ট্রের সর্বত্র বহু মসজিদ, মাদরাসা, ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, গোসলখানা ও সেতু ইত্যাদিসহ বিভিন্ন স্থাপত্য তৈরি করেন। যা এখনও কালের সাক্ষী হিসেবে রয়ে গেছে। সুলতান সুলেমানের আমলে নির্মিত অধিকাংশ স্থাপনার স্থপতি ছিলেন সিনান। স্থপতি হিসেবে সিনানের বেশ সুনাম রয়েছে।
জানা যায়, সিনান প্রায় ৩৭৪টি স্থাপনার নকশা করেছিলেন। যার মধ্যে বড় মসজিদ ৯২টি, ৫৫টি স্কুল, মাদরাসা সাতটি, ২০টি সমাধিক্ষেত্র, ১৭টি পাবলিক রেস্তোরাঁ, তিনটি হাসপাতাল, ছয়টি জল সরবরাহ ব্যবস্থা, ১০টি সেতু, ২০টি সরাইখানা ও ৩৬টি প্রাসাদ আছে। সিনানের নকশা করা মসজিদগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শেহজাদে মসজিদ আর সুলেমানিয়া মসজিদ, যা সুলতান সুলেমান মসজিদ নামে বেশি পরিচিত। ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি। সুলতান সুলেমানের হুকুমে সিনান ১৫৫০ সালে এ মসজিদের কাজ শুরু করেন। শেষ হয় ১৫৫৭ সালে।
সিনান বাইজান্টাইন চার্চ হাজিয়া সোফিয়ার অর্ধেক গম্বুজের ধারণা ব্যবহার করেন, কাজে লাগান এ মসজিদের নির্মাণশৈলীতে। মসজিদের মিনারগুলো পেনসিলের মতো। এতে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গম্বুজ। সুলতান সুলেমান মসজিদের ভেতরের শৈলীও দৃষ্টিনন্দন। শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য থাম আর দেয়ালগুলোর ভেতরে অনেক অনেক ঘড়া ব্যবহার করা হয়েছে।
উসমানীয় সামাজ্যের বিস্তৃতি
ইতিহাসে সুলেমান আল কানুনি নামে বিখ্যাত তিনি। এর প্রধান কারণ, আইন ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার। সুলতান সুলেমানের শাসন আমলে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তির ব্যাপক হারে বিস্তার লাভ করে।
প্রশাসনব্যবস্থা ও সামরিক শক্তিকে ঢেলে সাজান সুলতান। সমগ্র সাম্রাজ্যকে ২১টি প্রদেশে এবং ২৫০টি সানজাক বা জেলায় বিভক্ত করেন। ইহুদি ও খ্রিস্টানদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্যও তার পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার।
সুলতান সুলেমানের উসমানীয় সামাজ্য এশিয়া ছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা বিস্তীর্ণ অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। নিজের শাসনকালে তিনি বেলগ্রেড, হাঙ্গেরি, ট্রান্সিলভানিয়া, ওয়ালাচিয়া, মলডোভিয়া, করসিকা জয় করেন।
সুলতান সুলেমানের কবিতা
সুলতান সুলেমান রাজ্য জয় ও শাসনের পাশাপাশি তার সময়ে বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে উন্নয়নে কাজ করেছিলেন। তার সময়কে স্বর্ণযুগ হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকেন ইতিহাসবিদরা। তিনি নিজে কবিতা লিখতেন।
‘মুহিব্বি’ নামে তিনি অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। মুহিব্বি অর্থ প্রেমিক। তিনি প্রেম-বিষয়ক কাব্য লিখতেন। এ ছাড়া তার সময়ে বিশ্বখ্যাত স্থাপত্য নির্মিত হয়েছে। এই রকম নানা বিষয়ের মধ্যে তার প্রচণ্ড সাংস্কৃতিক মননশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়।
সুলতান সুলেমানের মৃত্যু
তিনি দীর্ঘ ৪৬ বছর রাজত্ব করেন। ১৫৬৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। সুলতান সুলেমান মারা যাওয়ার পর তার ছেলে দ্বিতীয় সেলিম অটোমান সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। সুলতান সুলেমানকে দাফন করা হয়েছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বা আজকের ইস্তাম্বুলে।
আরও পড়ুনঃ রাঙ্গামাটির ইতিহাসের সাক্ষী ৩২০ বছরের চাপালিশ গাছ