সবার অংশগ্রহণে ঈদুল আজহা হয়ে উঠুক আনন্দময়
খুশির ঈদ। ঈদুল আজহা, কোরবানি বা ত্যাগের ঈদ। ঈদুল ফিতরের মতো তাই শুধু আনন্দ নয়, পাশাপাশি আছে কষ্টও। রাত পোহালেই ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত সেই দিন ঈদুল আজহা। কোরবানি মানে শুধু পশুহত্যা নয়, মনের পশু হত্যা করার দিন’।
ঈদুল আজহার আবশ্যিক অঙ্গ কোরবানি। মুসলমান সমাজে কোরবানির ঐতিহ্য পালিত হয়ে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। এ ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চার হাজার বছর আগে হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সময় থেকে। হজরত ইব্রাহিমের (আ.) আনুগত্য পরীক্ষার জন্য মহান আল্লাহ তাকে তার প্রিয়তম বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
স্বপ্নে পাওয়া সে নির্দেশ পালন করতে গিয়ে হজরত ইব্রাহিম নিজ পুত্র হজরত ইসমাইলকে (আ.) কোরবানি দিতে উদ্যত হন। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। হজরত ইসমাইলের (আ.) বদলে কোরবানি হয় একটি দুম্বা।
হজরত ইব্রাহিমের (আ.) এই ত্যাগের আদর্শকে স্মরণ করার জন্য বিশ্বজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায় প্রতিবছর ঈদুল আজহায় হালাল পশু কোরবানি দিয়ে থাকে। শুধু কোরবানির ক্ষেত্রেই নয়, পবিত্র হজব্রতের নানা আচারের মধ্য দিয়ে তারা হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) স্মরণ করেন।
এসব আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা জানিয়ে দেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে প্রস্তুত। তাই ঈদুল আজহা ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর একটি উৎসব। প্রতীকী ত্যাগের এই কোরবানির পশুর রক্ত, মাংস কিছুই আল্লাহর দরবারে পেঁৗছায় না।
বান্দার ভক্তি ও আনুগত্যই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মানুষের ভেতরের লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণাকেই হত্যার শিক্ষা পাই আমরা। ভোগের জীবন থেকে সরে এসে ত্যাগ ও উৎসর্গের আদর্শ আত্মস্থ করার শিক্ষাও মেলে।
ইসলামী বিধান অনুসারে, কোরবানির পশুর মাংস সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়াই নিয়ম। গরিব-দুঃখীদের মধ্যে কোরবানির মাংসের নির্দিষ্ট অংশ বিলি করতে হয়। ফলে এর মাধ্যমে সেবা ও সহমর্মিতার আদর্শও সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ঈদুল আজহায় অনেক সময়ই ত্যাগের চেয়ে ভোগ প্রবল হয়ে ওঠে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে গরিব-দুঃখীরাও বঞ্চিত হয়। কোরবানির মাংস ঘরে ঘরে নির্বিচার ভোজন উৎসবের উত্থানও ঘটায়। অনেক সময় দায়িত্বশীলতার ঘাটতিও দেখা যায়। শহর ও গ্রামে যত্রতত্র কোরবানি দেওয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হয়।
রাস্তাঘাট বর্জ্য ও রক্তে মাখামাখি হয়ে থাকে। পচা দুর্গন্ধে স্বাভাবিক চলাফেরা বিঘি্নত হয়। এমন পরিস্থিতি মুমিনদের জন্য সম্মানজনক নয়। তাই পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার উদ্যোগও নেওয়া উচিত। সিটি করপোরেশনসহ দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নাগরিকদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। ঝকঝকে, দুর্গন্ধমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের উৎসবই প্রত্যাশিত।
দিনের শুরুতেই সবাই ঈদগাহে যাবেন ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে। ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে নামাজ আদায়ের পর শুরু হবে ঈদের দিনের সবচেয়ে মনোরম পর্ব কোলাকুলি। ঈদের নামাজ শেষে এবার কোরবানি করার পালা।
পশু জবাইয়ের পর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা- এক ভাগ নিজের জন্য রেখে আত্মীয়স্বজনের জন্য এক ভাগ। বঞ্চিত হবে না গরিবরাও; এক ভাগ যে তাদেরও প্রাপ্য।
ঈদ আয়োজনে পিছিয়ে নেই দেশের গণমাধ্যমও। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ঈদ আয়োজন। টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করবে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠান।
ঈদে অভুক্ত, নিরন্ন ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তারা যেন কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঈদ সবার জন্য। সবার অংশগ্রহণে ঈদুল আজহা হয়ে উঠুক আনন্দময়। ঈদ মুবারক।
❑ সম্পাদকীয় থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ শ্রমিকদের অধিকার রক্ষাই এ দিবসের মূল দাবি