আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: সত্য গোপনকারীদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি । সত্য বাণী কিংবা শরিয়তের বিধানাবলী গোপন করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। যারা এমনটি করে তারা অভিশপ্ত। আল্লাহ তাআলার সঙ্গে অন্যরাও তাদের অভিশাপ দিতে থাকেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার নাজিলকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি ও হেদায়াত গোপন করে—যদিও আমি কিতাবে তা মানুষের জন্য সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি, তাদের প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন এবং অন্য লানতকারীরাও (ফেরেশতারা) লানত করে।’ (সুরা বাকারা: ১৫৯)
স্বার্থের জন্য যারা দ্বীনি জ্ঞান গোপন করে, না-হক কথা বলে এবং স্বলমূল্যে আল্লাহর বাণীকে বিকৃত করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কঠোর ভাষায় ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যারা তা গোপন করে এবং তার বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করে, তারা কেবল আগুন দিয়ে নিজেদের পেট পূর্ণ করে। শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাআলা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা বাকারা: ১৭৪)
দ্বীনি ইলম গোপনকারীরা সব আসমানি কিতাবের তথ্য গোপনকারীদের ভয়াবহ ভাগ্যবরণ করবে বলে পবিত্র কোরআনে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, যখন আল্লাহ কিতাবপ্রাপ্তদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, অবশ্যই তোমরা তা মানুষের নিকট স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না। কিন্তু তারা তা তাদের পেছনে ফেলে দেয় এবং তা বিক্রি করে তুচ্ছ মূল্যে।’ (সুরা আলে-ইমরান: ১৮৭)
আরও পড়ুন: মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ১৭ আমল
সত্য গোপন করা মূলত ইহুদীদের বৈশিষ্ট্য। ইহুদিরা কু-প্রবৃত্তির অনুসরণে হক গোপন করে অর্থাৎ সত্যের বাণী প্রচার করে না। তাদের কাছে কোনো বিষয়ের বিধান জানতে চাওয়া হলে হক ছাড়াই তারা জবাব দেয়। অথচ তারা সঠিক জবাব জানে। এটাকেই বলে ইলম গোপন করা। অথচ আল্লাহ তাআলার আদেশ যদি আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও যায়, তাহলেও হকের আওয়াজ বন্ধ করা যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর জন্য সাক্ষীরূপে; যদিও তা তোমাদের নিজদের কিংবা পিতা-মাতার অথবা আত্মীয়দের বিরুদ্ধে হয়।’ (সুরা নিসা: ১৩৫)
যেকোনো অবস্থায় সত্যবাণীর প্রচার করা ওয়াজিব। যখন কোনো বাতিল, কুসংস্কার ও শিরক দৃষ্টিগোচর হবে, তখন নীরব থাকা যাবে না; বরং চুপ থাকা দ্বীনি আমানতের খেয়ানত। আল্লাহ মানুষকে নীরব থাকার জন্য ইলম দান করেননি। মানুষকে সতর্ক করা, প্রমাণসহ আল্লাহর দিকে আহবান করা এবং অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মানুষের ক্রোধেও যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং মানুষকে তার উপর তুষ্ট রাখেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ক্রোধে মানুষের সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে, আল্লাহ তাআলা তার উপর রগান্বিত হন এবং মানুষকে তার উপর ক্রোধান্বিত করেন।’ (সহিহ তিরমিজি: ২৪১৯; সহিহ জামে: ৬০৯৭)
সুতরাং ইলম শিক্ষা করার উদ্দেশ্য থাকতে হবে তা প্রকাশ করা। ধন-সম্পদ অর্জনের উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করা নাজায়েজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি দ্বীনি ইলম শিক্ষা করল ধন সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে, সে কেয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৩১৭৯)
আরও পড়ুন: রাসূল (সা.) এর প্রতি দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত
রাসুলুল্লাহ (স.) আরও ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানীদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করার লক্ষ্যে অথবা মূর্খের সঙ্গে বিতর্কের উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৫৬)
দ্বীনি ইলম গোপনকারীরা সত্যবাণী গোপন করার মাধ্যমে মূলত আল্লাহ তাআলার ওপর মিথ্যা আরোপ করে এবং হক অস্বীকার করার অপরাধ করে থাকে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তার চেয়ে অধিক জালিম আর কে? যে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তার কাছে সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে। জাহান্নামই কি কাফিরদের আবাসস্থল নয়?’ (সুরা আল জুমার: ৩২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন সুন্নাহর সত্যবাণী প্রকাশের তাওফিক দান করুন। ছোট হোক বা বড়, ইসলামি শরিয়তের যে কোনো সত্য গোপন করা থেকে হেফাজত করুন। মহান আল্লাহর অভিশাপ ও ফেরেশতাদের অভিশাপ থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
আরও পড়ুন: পবিত্র কোরআনের ১০০টি উপদেশ বাণী