আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: শুধু কোডিং না আইসিটিতে আরও যেসব দারুণ সুযোগ আছে । অনেকে মনে করেন ICT মানেই প্রোগ্রামিং বা কোডিং। কিন্তু বাস্তবে, ICT এমন একটি বিশাল ক্ষেত্র যেখানে নন-টেক বা কম কোডিং দক্ষতা থাকলেও সফল ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
১। ডিজিটাল মার্কেটিং:
ডিজিটাল মার্কেটিং হল ইন্টারনেট এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য ও সেবার প্রচার করা। এটি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমেই করা যায়। বর্তমানে, ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর কিছু মূল বিষয়:
❁ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO): সার্চ ইঞ্জিনগুলিতে ওয়েবসাইটকে উপরের দিকে নিয়ে আসার জন্য যে প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।
❁ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (SMM): বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রচার করা।
❁ কন্টেন্ট মার্কেটিং: আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি করে দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করা।
❁ ইমেইল মার্কেটিং: গ্রাহকদের কাছে ইমেইল পাঠিয়ে প্রচার করা।
❁ পে-পার-ক্লিক (PPC) বিজ্ঞাপন: বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ প্রদান করে দ্রুত ফলাফল পাওয়া।
২। গ্রাফিক ডিজাইন ও ইউআই/ইউএক্স
– Photoshop, Illustrator, Canva
– UI/UX Design (Figma, Adobe XD)
গ্রাফিক ডিজাইন এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন দুটি ভিন্ন ক্ষেত্র হলেও, উভয়ই ভিজ্যুয়াল ডিজাইন এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা (ইউএক্স) এর সাথে সম্পর্কিত। গ্রাফিক ডিজাইন সাধারণত প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে দৃশ্যমান উপাদান তৈরি করে, যেমন লোগো, ব্রোশার, বা পোস্টার। অন্যদিকে, ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন একটি ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, যেখানে ইউজার ইন্টারফেস (UI) ডিজাইন ব্যবহারকারীর সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করা উপাদানগুলির নকশা করে এবং ইউএক্স ডিজাইন সামগ্রিক ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে অন্তর্ভুক্ত করে.
এখানে গ্রাফিক ডিজাইন এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের মধ্যে কিছু মূল পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
❁ গ্রাফিক ডিজাইন:
► সাধারণত ভিজ্যুয়াল উপাদান তৈরি করে, যেমন লোগো, ব্যানার, পোস্টার, ইত্যাদি।
► নান্দনিকতা এবং ভিজ্যুয়াল আবেদন এর উপর বেশি গুরুত্ব দেয়।
► প্রিন্ট এবং ডিজিটাল উভয় মাধ্যমে কাজ করতে পারে।
► একটি নির্দিষ্ট পণ্যের ভিজ্যুয়াল দিকটি ডিজাইন করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
❁ ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন:
► একটি ডিজিটাল পণ্যের ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
► ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস তৈরি করে, যা ব্যবহার করা সহজ এবং কার্যকরী।
► ব্যবহারকারীর চাহিদা এবং আচরণ বিশ্লেষণ করে।
► UI (ব্যবহারকারী ইন্টারফেস) ডিজাইন এবং UX (ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা) ডিজাইন উভয়ই অন্তর্ভুক্ত করে।
৩। ভিডিও এডিটিং ও মোশন গ্রাফিক্স
– Adobe Premiere Pro, After Effects
– YouTube/সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কনটেন্ট তৈরি
৪। আইটি সাপোর্ট ও নেটওয়ার্কিং
– কম্পিউটার রিপেয়ার, LAN/WiFi সিস্টেম
– অফিস বা কোম্পানিতে হেল্পডেস্ক
আইটি সাপোর্ট এবং নেটওয়ার্কিং বলতে মূলত কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্কিং সিস্টেমগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, সমস্যা সমাধান এবং ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের কাজ বোঝায়। আইটি সাপোর্ট কর্মীরা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার ইনস্টল ও কনফিগার করা, সমস্যা সনাক্তকরণ ও সমাধান করা এবং ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে একটি সংস্থার আইটি পরিবেশকে সচল রাখে। নেটওয়ার্কিং-এর ক্ষেত্রে, নেটওয়ার্কিং কর্মীরা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ডিজাইন, ইনস্টল, কনফিগার এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে, যা নিশ্চিত করে যে ডেটা এবং রিসোর্সগুলি নিরাপদে এবং দক্ষতার সাথে আদান-প্রদান করা যায়।
এখানে আইটি সাপোর্ট এবং নেটওয়ার্কিং এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
❁ আইটি সাপোর্ট:
► কম্পিউটার, প্রিন্টার, সার্ভার এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার ইনস্টল ও কনফিগার করা।
► অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার এবং অন্যান্য প্রোগ্রাম ইনস্টল ও আপডেট করা।
► ব্যবহারকারীদের প্রযুক্তিগত সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা।
► নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সংযোগে সমস্যা সমাধানে সহায়তা করা।
► কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
► বিভিন্ন আইটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
❁ নেটওয়ার্কিং:
► নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও পরিকল্পনা করা।
► নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার (যেমন: সুইচ, রাউটার, ফায়ারওয়াল) ইনস্টল ও কনফিগার করা।
► নেটওয়ার্ক প্রোটোকল (যেমন: TCP/IP) কনফিগার করা।
► নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
► নেটওয়ার্ক মনিটরিং ও সমস্যা সমাধান করা।
► নেটওয়ার্ক আপগ্রেড ও সম্প্রসারণ করা।
৫। কন্টেন্ট রাইটিং ও ব্লগিং
– টেক ব্লগ, রিভিউ, টিউটোরিয়াল লেখা
– Affiliate মার্কেটিং বা গুগল অ্যাডসেন্স দিয়ে আয়
কন্টেন্ট রাইটিং এবং ব্লগিং দুটিই লেখার সাথে সম্পর্কিত, তবে তাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। কন্টেন্ট রাইটিং মূলত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দর্শকদের জন্য তথ্যবহুল এবং আকর্ষক লেখা তৈরি করা, যা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে (যেমন, পণ্য বিক্রি বা ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি) কাজ করে। অন্যদিকে, ব্লগিং হল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মতামত বা আগ্রহের বিষয় নিয়ে লেখা, যা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ব্লগে পোস্ট করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই, লেখার গুণমান এবং পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও সহজে বুঝতে, নিচে তাদের কিছু পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
❁ কন্টেন্ট রাইটিং:
► টার্গেট করা দর্শক: কন্টেন্ট রাইটিং সাধারণত একটি নির্দিষ্ট দর্শকগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে লেখা হয়।
► উদ্দেশ্য: কন্টেন্ট রাইটিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো দর্শকদের কোনো নির্দিষ্ট কাজ করতে উৎসাহিত করা, যেমন – পণ্য কেনা, ফর্ম পূরণ করা বা কোনো পরিষেবা ব্যবহার করা।
► ফরম্যাট: কন্টেন্ট রাইটিং বিভিন্ন ফরম্যাটে হতে পারে, যেমন – ব্লগ পোস্ট, আর্টিকেল, ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, ইত্যাদি।
► গভীরতা: কন্টেন্ট রাইটিংয়ে তথ্যের গভীরতা এবং নির্ভরযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ।
❁ ব্লগিং:
► টার্গেট করা দর্শক: ব্লগিং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মতামত বা আগ্রহের বিষয় নিয়ে লেখা হয় এবং এটি একটি বৃহত্তর দর্শকদের জন্য লেখা হতে পারে।
► উদ্দেশ্য: ব্লগিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করা এবং একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করা।
► ফরম্যাট: ব্লগিং সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ব্লগে পোস্ট করা হয় এবং এটি ব্যক্তিগত লেখার শৈলী অনুসরণ করে।
► গভীরতা: ব্লগিংয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং গল্প বলার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়।
৬। ডেটা এন্ট্রি ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
– Excel, Google Sheets
– ক্লায়েন্ট মেইল ম্যানেজ, রিপোর্ট তৈরি
ডেটা এন্ট্রি এবং ভার্চুয়াল সহকারী (ডাটা এন্ট্রি ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট) মূলত একই জিনিস, যেখানে একজন ব্যক্তি অনলাইনে বিভিন্ন ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকেন। সাধারণত, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিভিন্ন ধরণের ডেটা এন্ট্রি কাজ করে থাকেন, যেমন- ডেটা এন্ট্রি, ডেটা প্রসেসিং, ডেটা এন্ট্রি এবং ডেটা এন্ট্রি সহ অন্যান্য কাজ। এটি একটি রিমোট বা দূরবর্তী কাজ, যেখানে কর্মচারী তার নিজের বাসা থেকে বা অন্য কোনো স্থান থেকে কাজ করতে পারে।
ডেটা এন্ট্রি ও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ:
❁ ডেটা এন্ট্রি:
বিভিন্ন উৎস থেকে ডেটা সংগ্রহ করে একটি সিস্টেমে এন্ট্রি করা।
► ডেটা প্রসেসিং: ডেটা যাচাই করা, পরিষ্কার করা এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন করা।
► ডেটা এন্ট্রি এবং এডিট করা: ডেটাবেস বা স্প্রেডশীটে ডেটা এন্ট্রি এবং এডিট করা।
► অন্যান্য ডেটা এন্ট্রি কাজ: যেমন- অনলাইন ফর্ম পূরণ করা, ডেটাবেস থেকে ডেটা অনুসন্ধান করা ইত্যাদি।
❁ ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের অন্যান্য কাজ:
► ইমেইল ব্যবস্থাপনা
► ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাপনা
► সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনা
► গ্রাহক পরিষেবা
► ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ
► অনুবাদ
► গ্রাফিক ডিজাইন (বেসিক)
ডেটা এন্ট্রি এবং ভার্চুয়াল সহকারী হওয়ার জন্য কিছু দক্ষতা প্রয়োজন, যেমন- কম্পিউটারে ভালো জ্ঞান, দ্রুত ডেটা এন্ট্রি করার ক্ষমতা, ডেটা যাচাই করার দক্ষতা এবং যোগাযোগ দক্ষতা।
আরও পড়ুন:
❒ বাংলাদেশে আইসিটি স্কিল দিয়ে ক্যারিয়ার গড়া কি সম্ভব?
❒ আইসিটি ক্যারিয়ার গাইড: কোথা থেকে শুরু করবেন?
❒ চাকরির বাজারে যে ১২টি তথ্যপ্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রয়োজন
❒ চাকরি ছাড়ার আগে নিজেকে এই ১২ প্রশ্ন করুন
❒ প্রফেশনাল সিভি লেখার সঠিক নিয়ম
৭। টেক সেলস ও কাস্টমার সার্ভিস
– টেকনোলজি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি
– SaaS কোম্পানিতে Remote কাজের সুযোগ
ICT মানে শুধু কোড নয়। আপনি যদি সৃজনশীল, বিশ্লেষণধর্মী বা যোগাযোগে ভালো হন — তাহলে ICT-তে আপনার জন্যও রয়েছে দারুণ ক্যারিয়ার সম্ভাবনা।
❑ আইসিটি জবস থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: স্কুল/কলেজ থেকেই ICT ক্যারিয়ার প্রস্তুতির গাইড