আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: শিকারীর হাত থেকে বাঁচতে মরে যাওয়ার ভান করে কিছু প্রাণী । ইংরেজিতে ‘প্লেয়িং পসাম’ কথাটি হয়তো অনেকেই শুনেছেন। এটি অনেক প্রাণীর মধ্যে দেখা এমন একটি আচরণকে বোঝায়, যেখানে অন্যান্য শিকারী প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচতে মরে যাওয়ার মতো ভান করে কিছু প্রাণী।
কিন্তু মরে যাওয়ার ভান করা বন্ধ করে দেওয়ার পরে এইসব প্রাণীরা কী করে বা এসব প্রাণীদের কী ঘটে?
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল’-এর একদল বিজ্ঞানী। বিশেষ করে পিঁপড়ার এমন আচরণ দেখে এ গবেষণাটি করেছেন তারা।
গবেষণায় দেখা মিলেছে, এমন ধরনের পোকামাকড় ‘মরে যাওয়ার ভান করার’ পরে কী করে তা নির্ভর করে এরা যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে এমন আচরণ করে তার উপর। এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লসওয়ান’-এ।
ছোট আকারের কীট বা পোকা জাতীয় প্রাণী পিঁপড়া, এরা প্রায়শই শিকারীদের হাত থেকে বাঁচতে শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে মরে যাওয়ার ভান করে। হুমকির মুখে পড়লেও এরা নিজেদের দেহকে সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে দেয় এই আশায় যে, কোনো শিকারী এদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে ও এদের ছেড়ে দেবে।
আরও পড়ুনঃ ভ্রমর পানির নিচে এক সপ্তাহ বেঁচে থাকে
এই আচরণটি কেবল পিঁপড়ার মধ্যেই দেখা যায়, এমন নয়। ভিন্ন ভিন্ন নানা প্রজাতির মধ্যেও এটি সাধারণ বিষয়। এমনকি চরম পরিস্থিতিতে পড়ে মানুষও এমন আচরণ করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
পিঁপড়ার এই আচরণ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক নাইজেল ফ্র্যাঙ্কস ও তার গবেষণা দলটি আরও অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা দেখেন, প্রতিটি পিঁপড়া কতক্ষণ অনড় থাকে তা একক কোনো পোকার বেলায় ধারণা করা কঠিন।
আরও অনেক পিঁপড়া পর্যবেক্ষণ করে গবেষকরা লক্ষ্য করেন, প্রতিটি পোকা আলাদা অবস্থায় কখন আবার ‘জ্যান্ত হবে’ তার মেয়াদ অনির্দিষ্ট হলেও একটি দল হিসাবে এদের আচরণের সামগ্রিক প্যাটার্ন অনুমানযোগ্যই থাকে।
যেভাবে বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় পরমাণু আলাদাভাবে এলোমেলো সময়ে ক্ষয়ে যায় তার মতোই এই প্যাটার্নটি। তবে একটি দল হিসাবে কাজ করার সময় এরা অনুমানযোগ্য প্যাটার্ন দেখায়।
গবেষকরা বলছেন, এই অনিশ্চয়তা পিঁপড়ার একটি অভিযোজন কৌশল। কোনও শিকারী যখন এদের বাছাই করে ও এরপর ছেড়ে চলে যায় তখন আবার চলার আগে পোকাটি কতক্ষণ স্থির থাকবে তা বলতে পারে না। আর এই অনিশ্চয়তা শিকারীকে আশপাশে অপেক্ষা করতে নিরুৎসাহিত করতে পারে, যা পিঁপড়াটিকে বেঁচে থাকার আরও ভাল সুযোগ করে দেয়।
আরও পড়ুনঃ ধ্বংসের মুখে সমুদ্রের প্রবাল প্রাচীর
এ গবেষণায় দেখা গেছে, একটি পিঁপড়া এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে স্থির ছিল। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, এই কৌশলটি কতটা কার্যকর হতে পারে। তবে পিঁপড়াটি ‘মরে যাওয়ার ভান করার অবস্থা থেকে ফিরে আসার’ পরে কী ঘটে?
পিঁপড়ার লার্ভা সাধারণত বেলে বা আলগা মাটিতে বাস করে, যেখানে এরা শিকারকে সহজে ফাঁদে ফেলার জন্য ছোট গর্ত করতে পারে। আবার এদেরকে যখন কোনও নরম মাটিতে ফেলে দেওয়া হয় তখন এরা পালানোর জন্য দ্রুত এতে গর্ত করতে পারে।
এক্ষেত্রে যদি এরা নিজেকে এমন কোনও শক্ত পৃষ্ঠে খুঁজে পায় যেখানে গর্ত করা সম্ভব নয় তবে এদের বেঁচে থাকার জন্য অন্য উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
উন্নত ভিডিও ট্র্যাকিং ব্যবহার করে গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন, এসব পিঁপড়া যে পৃষ্ঠে রয়েছে এর উপর ভিত্তি করে এদের আচরণ সামঞ্জস্য করে। যদি এরা গর্ত করতে না পারে তবে এমনভাবে চলতে পারে যা এদের আশ্রয় খুঁজে পেতে বা শিকারীদের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে সহায়তা করে।
অধ্যাপক ফ্রাঙ্কস বলেছেন, এই গবেষণাটি সম্ভবত প্রথম এমন গবেষণা যেখানে মরে যাওয়ার মতো ভান করার পরে প্রাণীরা কী করে তার দেখা মিলেছে। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, প্রাণীদের কাযকলাপ অনেক বেশি প্রসঙ্গ-নির্ভর।
🔰 পরিবেশ বিজ্ঞান থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ হুমকির মুখে পৃথিবীর ‘সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিস্ময়’
১ Comment
Hello, Jack speaking. I’ve bookmarked your site and make it a habit to check in daily. The information is top-notch, and I appreciate your efforts.