আইসিটি স্পোর্টস ডেস্ক: লিওনেল মেসি অষ্টম ব্যালন ডি’অর জিতলেন । ফুটবল যদি একটি মহাবিশ্ব হতো আর সে মহাবিশ্বের যদি অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র থেকে থাকে তাহলে সব গ্রহ-নক্ষত্রকে এবার জয় করে ফেললেন লিওনেল মেসি।
এর আগে সাতবার ব্যালন ডি’অর জয়ের পর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদোর থেকে অনেক এগিয়ে গিয়েছিলেন মেসি। ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ের পর ৮ম ব্যালন ডি’অর জয় অনেকাংশেই নিশ্চিত করে ফেলছিলেন এই ফুটবল জাদুকর। সেটার জন্যেই দীর্ঘ প্রায় ১১ মাসের অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত সোনালি বলটি উঠলো লিওনেল মেসির হাতে।
আরও পড়ুনঃ রেকর্ড অষ্টম ব্যালন ডি’অর পাচ্ছেন মেসি
ব্যালন ডি’অর ২০২৩ জেতার দৌড়ে মেসি এবার পেছনে ফেলেছেন ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজীয় তারকা আর্লিং হলান্ড এবং পিএসজির ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে।
রোজারিওর সেই ছোট্ট মেসি যখন গ্রোথ হরমোনের কারণে খেলাটাই ছেড়ে দিতে যাবেন তখনই বার্সেলোনা যেন আশীর্বাদ হয়ে আসে। তাই তো সেই স্বপ্নের ক্লাবকে আজও মনে প্রাণে ধারণ করেন, এখনো মনের গহীনে সুপ্ত বাসনা ঈপ্সিত থাকে বার্সেলোনায় ফেরার।
বার্সায় ফিরতে না পারলেও মেসি যে ইন্টার মিয়ামিতে দারুণ খুশি তা তার খেলাতেই স্পষ্ট। এমএলএস ক্লাবটিকে এনে দিয়েছেন ক্লাবটির ইতিহাসের প্রথম শিরোপা।
মেসির অষ্টম ব্যালন ডি’অর জয়ে ফিকে হয়ে গেলো নরওয়ের স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ডের স্বপ্নের মতো কাটানো মৌসুমটি। ট্রেবল জয়ের পাশাপাশি ইউরোপের গোল্ডেন বুটও ছিল তার ঝুলিতে। ২৩ বছর বয়সী এই গোল মেশিন গত মৌসুমে সব ধরণের প্রতিযোগিতায় ৫৩ গোল করেছেন। কিন্তু এক বিশ্বকাপের কাছে যে সবকিছুই অর্থহীন।
ব্যালন ডি’অর যে সময়ের বিবেচনায় দেয়া হয় সেই সময়টায় মেসি জিতেছেন বিশ্বকাপ ট্রফি, জিতেছেন বিশ্বকাপ গোল্ডেন বল। এছাড়া ফিফার বর্ষসেরা পুরুষ ফুটবলারও হয়েছেন তিনি। তাছাড়া ফ্রেঞ্চ লিগ, ট্রফি দিস চ্যাম্পিয়নস, লরিস স্পোর্টসম্যান অফ দ্য ইয়ারও হয়েছেন মেসি। ভেঙেছেন অসংখ্য রেকর্ডও। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাও মেসি।
মেসির ৮ম ব্যালন ডি’অর জেতার ঘোষণা দেন ইংলিশ কিংবদন্তি ডেভিড বেকহাম। মেসির নাম ঘোষণার পর উপস্থিত সকলেই দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানান। পুরস্কার পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় মেসি বলেছেন, ‘মুহূর্তটা উপভোগের জন্য এখানে আরেক উপস্থিত হতে পেরে আমি আনন্দিত।’ এ সময় বিশ্বকাপ জেতা নিয়েও নিজের অনুভূতিটা আরেকবার জানান মেসি, ‘বিশ্বকাপ জেতাটা ছিল আমার স্বপ্ন। এটা খুবই বিশেষ ব্যাপার ছিল যে, অন্য দেশের মানুষরাও চেয়েছে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতুক।’
নিজের অর্জন নিয়ে মেসি আরও বলেছেন, ‘আমার এমন ক্যারিয়ার আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি যা অর্জন করেছি তা করার জন্য আমার ভাগ্য দারুণ সুপ্রসন্ন ছিল। আমি বিশ্বের সেরা দলে খেলেছি, ইতিহাসের সেরা দলে খেলেছি। এটা আমার জন্য ট্রফি জেতা এবং ব্যক্তিগত পুরস্কার জেতার কাজটাকে সহজ করেছে।’
গত মৌসুমটা স্বপ্নের মতোই কেটেছে মেসির। মৌসুমটিতে ক্যারিয়ারে একমাত্র অপূর্ণতাটুকুও ঘুচিয়েছেন ইন্টার মায়ামি তারকা। ৩৬ বছর পর মেসির হাত ধরেই বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। দেশকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে টুর্নামেন্টেরে সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। বিশ্বকাপ জিতে নিজের সব চাওয়া পাওয়া পূর্ণ হওয়ার কথাও বলেছিলেন মেসি।
কিন্তু ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল বিশ্বকাপ জয়ের বছরে ব্যালন ডি’অরের পুরস্কারটাও মেসির হাতেই উঠুক। প্যারিসে সেই সমর্থকরাই যেন আজ জিতেছেন। নয়তো মেসি তো ব্যালন ডি’অর নিয়ে নিজের আর কোনো আকাঙ্ক্ষা না থাকার কথা জানিয়েই দিয়েছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘সত্যি হচ্ছে, এটা নিয়ে আমি অতটা ভাবছি না। যদি পুরস্কারটা পাই, ভালো। আর যদি না পাই, কিছুই আসে যায় না।’
ব্যালন ডি’অর নিয়ে এমন নির্লিপ্ততা কেন, সেই কারণও জানিয়েছেন মেসি, ‘আমি আমার ক্যারিয়ারে এটা অনেকবার বলেছি যে ব্যালন ডি’অর গুরুত্বপূর্ণ একটা পুরস্কার। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটা সবচেয়ে সুন্দর পুরস্কার। কিন্তু আমি কখনোই এটাকে অতটা গুরুত্ব দিইনি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলীয় অর্জন।’
কে কোন পুরস্কার জিতছেন
বর্ষসেরা পুরুষ খেলোয়াড়- লিওনেল মেসি
বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়- আইতানা বোনামাতি
বর্ষসেরা ক্লাব (পুরুষ)- ম্যানচেস্টার সিটি
বর্ষসেরা ক্লাব (নারী)-বার্সেলোনা
লেভ ইয়েশিন ট্রফি (সেরা গোলরক্ষক)- এমিলিয়ানো মার্তিনেজ
জার্ড মুলার ট্রফি (সেরা স্ট্রাইকার)- আর্লিং হলান্ড
সক্রেটিস অ্যাওয়ার্ড (দাতব্য কাজে সম্পৃক্ততা)- ভিনিসিয়ুস জুনিয়র
কোপা ট্রফি (অনূর্ধ্ব ২১ বছর বয়সী সেরা খেলোয়াড়)- জুড বেলিংহাম
আরও পড়ুনঃ ২০৩০ ফুটবল বিশ্বকাপ তিন মহাদেশের ৬ দেশে