আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: র্যাপিড পাস কি? কিভাবে ব্যবহার করবেন ? গণপরিবহনের জন্য সমন্বিত ই-টিকিট ব্যবহার করে বিভিন্ন পরিবহনে যাতায়াতের সুবিধার্থে র্যাপিড পাস কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়েছে। র্যাপিড পাস কার্যক্রমের ফলে বারবার টিকিট কেনা বা টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। লাইনে দাঁড়িতে গাড়িতে উঠতে হবে।
র্যাপিড পাস (স্মার্ট কার্ড) কি?
গণপরিবহন ব্যবস্থায় সমন্বিত ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালুর লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সরকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এই প্রকল্পের আওতায় র্যাপিড পাস সেবা চালু করা হয়। এতে আর্থিক সহায়তা দেয় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
র্যাপিড পাস ব্যবহারের জন্য যাত্রীদের একটি কার্ড সরবরাহ করা হয়, যাকে আইসি কার্ড বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজধানীর বিআরটিসি বাস মতিঝিল-আবদুল্লাহপুর ঢাকার চাকা, হাতিরঝিল চক্রাকার বাস, কলাবাগান-আজিমপুর রুটের দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহনেও র্যাপিড পাস কার্ড চালু হয়েছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) কার্ডটি তৈরি করেছে।
র্যাপিড পাস ব্যবহারের শর্তাবলী
ব্যবহারকারী এই কার্ডটি DTCA অনুমোদিত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অপারেটরদের সার্ভিস বাসে ব্যবহার করতে পারবেন। কার্ড ব্যবহার করার জন্য বাসে ড্রাইভারের পাশে একটি ডিভাইস রাখা হয়। কার্ডধারী বাসে ওঠার সময় এবং বাস থেকে নামার সময় একবার ডিভাইসে কার্ডটি স্পর্শ করবেন। বাস থেকে নামার সময় মেশিনে কার্ড স্পর্শ করলে মেশিন থেকে একটি রসিদ দেওয়া হবে। এতে ভাড়া এবং কার্ড ব্যালেন্স উল্লেখ থাকবে।
আরও পড়ুনঃ ডিজিটাল ব্যাংক কী? এর সুবিধা-অসুবিধাসহ বিস্তারিত জানুন
ব্যবহারের নিয়ম
র্যাপিড পাস কর্তৃপক্ষের মতে এই কার্ডের ব্যবহারও সহজ। ব্যবহারকারী এই কার্ডটি DTCA অনুমোদিত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অপারেটর যেমন বাস, ট্রেন, ফেরি ইত্যাদির পরিষেবাগুলিতে ব্যবহার করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহার করার জন্য বাসে ড্রাইভারের পাশে একটি ডিভাইস রাখা হয়। কার্ডধারী বাসে ওঠার সময় এবং বাস থেকে নামার সময় একবার ডিভাইসে কার্ডটি স্পর্শ করবেন। বাস থেকে নামার সময় মেশিনে কার্ড স্পর্শ করলে মেশিন থেকে একটি রসিদ দেওয়া হবে। এতে ভাড়া এবং কার্ড ব্যালেন্স উল্লেখ থাকবে।
কিভাবে র্যাপিড পাস (স্মার্ট কার্ড) রিচার্জ করবেন
কার্ডটির প্রাথমিক মূল্য ৪০০ টাকা। এর মধ্যে ২০০ টাকা রিচার্জ হিসাবে কার্ডে জমা থাকবে এবং ২০০ টাকা জামানত হিসাবে রাখা হবে। ব্যবহারকারীরা সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০০ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে পারেন। আপনি যদি কার্ডটি ব্যবহার করতে না চান, তাহলে ডাচ বাংলা ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিলে আপনি আপনার ২০০ টাকা নিরাপত্তা ফেরত পাবেন।
ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেলে, যাত্রী সহজেই নির্বাচিত ডাচ বাংলা ব্যাংক শাখা বা টিকিটের দোকান থেকে র্যাপিড পাস কার্ড ইস্যু বা রিচার্জ করতে পারবেন। ব্যবহার করার সময় কার্ডে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলেও জরুরি ব্যালেন্সে ১০০ টাকা পাবেন। এই ক্ষেত্রে, পরবর্তী রিচার্জ থেকে পরিমাণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করা হবে।
র্যাপিড পাস (স্মার্ট কার্ড) ক্রয় এবং রিচার্জ
র্যাপিড পাস কার্ডটি ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের নিম্নলিখিত শাখা থেকে ক্রয় এবং রিচার্জ করা যাবে। শাখাগুলো হলো-
(ক) লোকাল অফিস শাখা, মতিঝিল
(খ) বৈদেশিক মুদ্রা শাখা, মতিঝিল
(গ) এলিফ্যান্ট রোড শাখা
(ঘ) বনানী শাখা
(ঙ) গুলশান সার্কেল – ১ শাখা
(চ) গুলশান শাখা
(ছ) সোনারগাঁও জনপথ শাখা, উত্তরা
(জ) উত্তরা শাখা
আরও পড়ুনঃ মোবাইল ব্যাংকিং কি ? মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা-অসুবিধা
এছাড়াও র্যাপিড পাস কার্ডটি ৮ টি টিকিট কাউন্টার থেকে কেনা এবং রিচার্জ করা যাবে
(ক) হাউস বিল্ডিং, উত্তরা
(খ) বানানী
(গ) শাহবাগ
(ঘ) মতিঝিল
(ঙ) নতুন বাজার
(চ) ঢাকা চাকা বনানী স্টপেজ
(ছ) পুলিশ প্লাজা স্টপ এইচআর পরিবহন
(জ) রামপুরা স্টপ এইচআর পরিবহন
কীভাবে র্যাপিড পাস (স্মার্ট কার্ড) নিবন্ধন করবেন
র্যাপিড পাস কার্ডের জন্য আপনাকে নিবন্ধন করতে হবে। এর জন্য মোবাইল নম্বর লাগবে। কার্ডটি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে ব্যবহারকারী নিবন্ধন ছাড়া কিছু দাবি করতে পারবেন না। একজন ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ সাপেক্ষে র্যাপিড পাস কার্ডের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
একজন ব্যবহারকারী যেখান থেকে র্যাপিড পাস কার্ড কিনবেন সেখান থেকে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করতে পারবেন। নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে কমপক্ষে দুই কার্যদিবসের প্রয়োজন হবে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগে কোনো দাবি, ফেরত বা পুনঃইস্যু করা হবে না।
রেজিস্টার্ড র্যাপিড পাস কার্ডে আপনি যে সুবিধাগুলি পাবেন
পেমেন্ট ফেরত: যদি একজন ব্যবহারকারী র্যাপিড পাস কার্ড ফেরত দিতে চান, তাহলে অপারেটর ফেরত ফি হিসাবে 10 টাকা কেটে ফেলবে এবং যাচাই প্রক্রিয়াটি সমাধান করার পর একই কার্যদিবসে ব্যবহারকারীকে অবশিষ্ট পরিমাণ (জমা এবং রিচার্জের টাকা) ফেরত দেবে।
ক্ষতিগ্রস্থ কার্ডের জন্য পুনরায় ইস্যু: ক্ষতিগ্রস্থ কার্ডের কারণে পুনরায় ইস্যু করার জন্য, ব্যবহারকারীকে ক্ষতিগ্রস্ত র্যাপিড পাস কার্ডটি অপারেটরের কাছে ফেরত দিতে হবে এবং একটি নতুন কার্ডের জন্য ২০০ টাকা পুনঃইস্যু ফি দিতে হবে। অপারেটর পুনরায় ইস্যু করার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগের কার্ডের ব্যালেন্স (জমা এবং রিচার্জের বকেয়া) নতুন ইস্যু করা কার্ডে স্থানান্তর করবে।
ক্ষতির জন্য কার্ডের পুনরায় ইস্যু: ক্ষতির জন্য কার্ড পুনরায় ইস্যু করার জন্য, ব্যবহারকারীকে অপারেটরকে ২০০ টাকা রি-ইস্যু ফি দিতে হবে এবং নতুন কার্ডের জন্য ২০০ টাকা জমা দিতে হবে। অপারেটর পুনরায় ইস্যু করার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগের কার্ডের ব্যালেন্স (জমা এবং রিচার্জের বকেয়া) নতুন ইস্যু করা কার্ডে স্থানান্তর করবে।
হারানো কার্ড পুনরুদ্ধার: যখন একজন ব্যবহারকারী হারানো কার্ডটি খুঁজে পান, তখন তিনি অপারেটরের কাছে পুনরুদ্ধার করা কার্ডটি জমা দেন এবং উক্ত কার্ডের টাকা জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। অপারেটর উদ্ধারকৃত কার্ডটি নিষ্ক্রিয় করবে এবং টাকা ফেরত ফি কেটে উল্লিখিত কার্ডের জমার টাকা ভিসারের সক্রিয় কার্ডে স্থানান্তর করবে৷ বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে একই কার্যদিবসে সম্পন্ন করা হবে।
নতুন কার্ড ইস্যু প্রাপ্তি সংক্রান্ত: নতুন কার্ড ইস্যু প্রক্রিয়া যাচাইকরণের পর এক কার্যদিবসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। অপারেটর তারপর ব্যবহারকারীকে একটি রেফারেন্স নম্বর এবং ডেলিভারির তারিখ সহ একটি ভাউচার ইস্যু করবে। ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট তারিখে ভাউচার উপস্থাপন করে অপারেটরের কাছ থেকে নতুন কার্ড সংগ্রহ করবেন।
এক নজরে র্যাপিড পাস (স্মার্ট কার্ড) এর নীতিমাল
কার্ড ইস্যু বা রিচার্জ
একজন যাত্রী নির্বাচিত ডিবিবিএল শাখা বা টিকিটের দোকান থেকে র্যাপিড পাস কার্ড ইস্যু বা রিচার্জ করতে পারেন।
ইস্যু করার জন্য মোট ৪০০ টাকা লাগবে। যার মধ্যে ২০০ টাকা প্রথম রিচার্জের পরিমাণ এবং বাকি ২০০ টাকা জমার পরিমাণ।
আপনার কার্ডে রিচার্জের পরিমাণ অপর্যাপ্ত হলে, আপনি নির্বাচিত DBBL শাখা বা টিকিটের দোকান থেকে রিচার্জ করতে পারেন।
আপনি যদি র্যাপিড পাস ব্যবহার না করেন, তাহলে আপনি আপনার কার্ড ফেরত দিতে পারেন এবং প্রদত্ত আমানতের ফেরত পেতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ই–পাসপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
নিবন্ধন
র্যাপিড পাস সুরক্ষিত করতে আপনার ন্যূনতম তথ্য (নাম এবং মোবাইল নম্বর) প্রয়োজন।
নিবন্ধন ব্যতীত, আপনি যদি কার্ডটি হারান বা ক্ষতি করেন তবে আপনি কিছু দাবি করতে পারবেন না।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কমপক্ষে দুই কার্যদিবস সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে, আপনি আপনার নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার আগে কোনো দাবি করতে পারবেন না।
নেতিবাচক মান
আপনার ব্যালেন্সের পরিমাণ পর্যাপ্ত না হলে, আপনি এক সময়ের জন্য আপনার জমার পরিমাণের বিপরীতে নেতিবাচক মান ফাংশন উপভোগ করতে পারেন।
আপনি যখন আপনার র্যাপিড পাস রিচার্জ করবেন তখন পরিমাণটি চার্জ করা হবে।
ক্ষতিগ্রস্ত কার্ড পুনঃপ্রদান
ব্যবহারকারী ক্ষতিগ্রস্ত কার্ড অপারেটরকে ফেরত দিয়ে পুনঃপ্রদান ফি বাবদ ২০০ টাকা প্রদান সাপেক্ষে নতুন কার্ড নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অপারেটর নতুন প্রদানকৃত কার্ডের পূর্বের ব্যালেন্স স্থানান্তর করে দিবেন।
হারানো কার্ড পুনঃপ্রদান
ব্যবহারকারী নতুন কার্ডের জন্য ২০০ টাকা জমা ফি এবং ২০০ টাকা পুনঃপ্রদান ফি প্রদান করবেন। অপারেটর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে নতুন প্রদানকৃত কার্ডের পূর্বের ব্যালেন্স স্থানান্তর করে দিবেন।
হারানো কার্ড ফেরত
ব্যবহারকারী হারানো কার্ড ফেরত পেলে অপারেটরকে জমামূল্য ফেরত প্রদানের জন্য দিবেন। অপারেটর সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে কার্ড নিষ্ক্রিয় করে রিফান্ড ফি বাবদ ১০ টাকা কেটে নিয়ে কার্ডের মূল্য ফেরত দিবেন।
কার্ড রিচার্জ করতে ভুলে গেলে
কেউ যদি কার্ড রিচার্জ করতে ভুলে গেলেন কিন্তু হাতে সময় নেই। তখন কার্ড টাচ করে যাতায়াত করতে পারবে। তখন যাতায়াত ভাড়া নেগেটিভ হিসেবে কার্ডে থাকবে। যখন কার্ড রিচার্জ করা হবে তখন টাকা কেটে নিবে। বাস ভাড়া ধার নেয়া যাবে একবার রিচার্জ করার আগ পর্যন্ত।
রিফান্ড
যদি কোনো নিবন্ধিত ব্যবহারকারী কার্ড ফেরত দিতে চান, সেক্ষেত্রে অপারেটর সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে ১০ টাকা কেটে নিয়ে কার্ডের মূল্য (জমা ও রিচার্জ) ফেরত দিবেন।
র্যাপিড পাস ব্যালেন্স দেখার নিয়ম
র্যাপিড পাস কার্ডটিতে থাকা গ্রাহকদের ব্যালেন্স দেখতে হলে প্রথমেই গ্রাহকে নিবন্ধিত হতে হবে। এক্ষেত্রে, একজন গ্রাহক অ্যাপস-এ তার কার্ডের ব্যালেন্সসহ বিস্তারিত দেখতে পাবেন। অন্য দিকে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত গ্রাহক উভয়েই বাস, ট্রেন কিংবা অন্য যেকোনো একটি সাভিসের জন্য দেওয়া মূল্য পরিশোধ করার জন্য কার্ডটি মেশিনে টাচ্ বা স্পর্শ করলে মেশিন তাকে একটি বিল ভাউচার প্রদান করবে যেখানে তিনি তার সর্বশেষ সেবার মূল্য ও কার্ডে তার বর্তমান স্থিতি জানতে পারবেন। এছাড়াও গ্রাহক যেকোনো কাউন্টার বা অনুমোদিত শপ হতে কার্ডের তথ্য প্রদান করা সাপেক্ষে ব্যালেন্স জানতে পারবেন।
র্যাপিড পাস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে http://rapidpass.com.bd/ এই ওয়েবসাইটে।
আরও পড়ুনঃ পেপাল কি এবং কিভাবে পেপাল একাউন্ট তৈরি করবেন?