আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: রাসুলুল্লাহ (স.) যে চারটি সুন্নত কখনোই ছাড়তেন না । ইসলামে ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদতের পর যে আমলগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়, তা হলো সুন্নত। সুন্নত শুধু প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনের অনুসরণ নয়, বরং তা তাঁর ভালোবাসা ও আনুগত্য প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের জন্য যে আমলগুলো নিয়মিত করে গেছেন এবং কখনোই ত্যাগ করেননি, সেসব সুন্নতের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলত।
এসব আমল শুধু আখেরাতের সফলতার বাহন নয়, বরং দুনিয়াতেও আল্লাহর রহমত ও প্রশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই একজন সচেতন মুমিন হিসেবে আমাদের উচিত, ফরজ ও ওয়াজিব পালনের পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ (স.)-এর এই গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতগুলোকে জীবনের অংশ করে নেওয়া।
নিচে এমনই চারটি মহান সুন্নত তুলে ধরা হলো, যেগুলো প্রিয়নবী (স.) কখনোই ছাড়তেন না; নয় ঘরে, নয় সফরে, নয় বিপদের সময়েও। উম্মত হিসেবে আমাদেরও এসব আমলে গুরুত্ব দেওয়া কর্তব্য।
উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, চারটি জিনিস এমন আছে যা নবী (স.) ছাড়তেন না। ১. আশুরার রোজা ২. জিলহজ মাসের প্রথম নয় দিনের রোজা। ৩. প্রতি মাসের তিনদিন তথা আইয়ামে বিজের রোজা ৪. ফজরের আগে দু’রাকাত সুন্নত নামাজ। (নাসায়ি, মেশকাত: ২০৭০)
নিচে এই গুরুত্বপূর্ণ চারটি আমল সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
১. আশুরার রোজা (মহররম ১০)
আশুরা ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। রাসুল (স.) বলেন, ‘আশুরার এক দিনের রোজা বিগত এক বছরের গুনাহর কাফফারা হিসেবে গৃহীত হয়।’ (মুসলিম: ১১৬২)
রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ছিল ফরজ। এরপর তা নফল হিসেবে অব্যাহত থাকে। জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (স.) আমাদের আশুরার রোজা রাখতে বলতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন।’ (মুসলিম: ১১২৮)
২. জিলহজের প্রথম ৯ দিনের রোজা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘জিলহজের প্রথম দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। প্রতিদিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য।’ (তিরমিজি: ৭৫৮)
বিশেষ করে ৯ জিলহজ, অর্থাৎ আরাফার দিন—এ দিনের রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে নবীজি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা রাখি, আরাফার রোজার কারণে তিনি অতীত ও ভবিষ্যৎ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করবেন।’ (মুসলিম: ১১৬২)
৩. আইয়ামে বিজের রোজা (চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ)
আবু জার (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যদি মাসে তিনদিন রোজা রাখতে চাও, তবে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রাখো।” (তিরমিজি: ৭৬১)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) সফরে বা গৃহে থাকলেও কখনো আইয়ামে বিজের রোজা ছাড়তেন না।” (নাসায়ি; রিয়াজুস সালেহিন: ১২৬৪)
৪. ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ
ফজরের ফরজ নামাজের আগে দুই রাকাত সুন্নতের ফজিলত অপরিসীম। রাসুল (স.) বলেন, ‘ফজরের দুই রাকাত দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়েও উত্তম।’ (মুসলিম: ৭২৫)
আরও পড়ুনঃ
❒ একজন হজযাত্রী সৌদি আরবে অবস্থান কালে প্রতিদিন করনীয়
❒ আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের এত বড় ফজিলত!
❒ আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দিবে যে ছোট ছোট জিকির
❒ যে আমল করলে জান্নাতে ‘বায়তুল হামদ’ নামে বিশেষ ঘর নির্মিত হয়
❒ ইবাদত কবুলের জন্য অন্তত ৩ শর্ত মানতে হবে
❒ অন্তত একটি আমল গোপন রাখতে পারলে পরকালে যে লাভ হবে
আরেক হাদিসে তিনি বলেন, ‘শত্রুরা তাড়া করলেও এই দুই রাকাত নামাজ যেন ত্যাগ না করো।’ (আবু দাউদ: ১২৫৮)
এই চারটি সুন্নত আমল নবীজির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তিনি তা কখনো ত্যাগ করেননি। আমরাও যদি তাঁর সুন্নাহ অনুসরণে আগ্রহী হই, তাহলে এগুলো নিয়মিতভাবে পালন করা উচিত। এতে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করব, সুন্নতের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে এবং জীবনে বরকত আসবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল নিয়মিত আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমীন।
❑ ইসলামী জীবন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ জুমার দিনে গুরুত্বপূর্ণ ৪ দোয়া