আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: রসুন খাওয়ার আশ্চর্যজনক উপকারিতা । রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তরকারি সুস্বাদু করার জন্য অন্যান্য পেঁয়াজ, মরিচের সাথে রসুন ও ব্যবহার করা হয়। রসুন সাধারণত মশলা হিসেবে ব্যবহার হলেও প্রাচীনকাল থেকে রসুন ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
রসুনের পুষ্টিগুণ
রসুনে অনেক পুষ্টি এবং বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম।
এ ছাড়া রসুনের মধ্যে রয়েছে এলিসিন নামে এক জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা ক্যানসারসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কার্যকর। এই এলিসিন নামে যে উপাধান রসুনে পাওয়ার কারণে রসুনকে সুপারফুডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
রসুনের উপকারিতা
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খালি পেটে রসুন খেলে এই উপকার বেশি।
আরও পড়ুনঃ নিমের ওষধি গুণাগুণ ও ক্ষতিকর দিক
২। রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়ায়: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যার দরুণ রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়ে যেসব রোগের সৃষ্টি করে, তা আর হতে পারে না
৩। পুরুষের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক: পুরুষের যৌনক্ষমতা নানান কারণে কমে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে ধীরে ধীরে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পুরুষের যৌন ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে সক্রিয় রক্ত চলাচল। রসুনে এই কাজ করে বলেই যৌনক্ষমতার কথা বলা হয়ে থাকে।
৪। হৃৎপিণ্ডের শক্তিবর্ধক: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন পানি দিয়ে গিলে খেলে হৃৎপিণ্ড শক্তিশালী হবে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে হৃৎপিণ্ডের ব্লকগুলো আর বাড়বে না এবং ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারবে না, বুকের ব্যথা কমে যাবে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হবে না।
৫। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে: উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অনেক পথ্যের অন্যতম রসুন। শরীরের এলডিএল বেড়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়, প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন সকালে খালি পেটে খেলে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকবে না।
৬। ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধ: ফুসফুসে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হতে পারে। অ্যালার্জি সমস্যা, ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটতে পারে, যা থেকে মুক্তি পেতে রসুন পিষে রস খেলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে।
আরও পড়ুনঃ আমলকির উপকারিতা ও পুষ্টি গুণ
৭। কোষের ক্ষতিরোধ করে: রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ‘সেল ড্যামেজ’ ও ‘এজিং’ রোধ করে। ব্রেনের কোষের ড্যামেজ কম হয়ে আলঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
৮। হাড়ের শক্তি বাড়ায়: একটা বয়সের পর বিভিন্ন কারণে নারীদের হাড়ের শক্তি কমে যায়। প্রতিদিন ২ গ্রাম করে রসুন খেলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রায় ভারসাম্য থাকে, ফলে হাড় সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটা কমে যায়।
৯। ত্বক ভালো রাখে, ব্রণের উপকার করে: প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে ত্বক ভালো থাকে, ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে না, চেহারায় কোনো দাগ থাকলে কমে যায়।ব্রণ দ্রুত শুকিয়ে যায়।দাগ দূর করে।
১০। ব্যাকটেরিয়া ও পেটের কৃমি নিরাময়ে; রসুন দেহের ভিতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং পেটের কৃমি ধ্বংস করতে সাহায্য করে। রসুনের নির্যাস থেকে ‘মাউথ ওয়াশ’ তৈরি করা যায় যা নিয়মিত ব্যবহারে দাঁতের মাড়িতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারেনা।
১১। ক্যানসার প্রতিরোধে; নিয়মিত রসুন সেবনে শরীরে সব ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়। নিয়মিত কাঁচা ও রান্না করা রসুন খাওয়ার মাধ্যমে পাকস্থলী ও কোলন ক্যানসারকে প্রতিরোধ করা যায়। মেয়েদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে রসুন কার্যকরী। এছাড়া রেক্টাল ক্যান্সার ও প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধেও রসুন অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
১২। ত্বক ও চুলের যত্নে; নিয়মিত রসুন খেলে ত্বক সুন্দর হয় ও বয়সের ছাপ দূর হয়। এ ছাড়া ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে নিয়মিত রসুন সেবন করতে হবে। চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজাতেও রসুন ভালো কাজ করে। এজন্য মাথায় নিয়মিত রসুনের নির্যাস বা রসুন সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করতে পারেন।
সকালে খালি পেটে খেতে হবে এমন নয়। রসুন ভরা পেটে খাওয়ায় উত্তম। বিকেল-দুপুর বা রাতে খেতে পারেন। রসুন খেতে হবে কাঁচা। দিনে ১-২ কোয়া। কাঁচা না পারলে আচার করে খেতে পারেন।
কাঁচা খেতে অসুবিধা হলে ধনেপাতার সঙ্গে বেটে খাওয়া যায়। নারকেল বা কচু বাটায় মেশান। সালাদ বা দইয়ে মিশিয়ে খাওয়া যায়। দুর্গন্ধ ঠেকাতে একটু পার্সলে পাতা চিবিয়ে নিন, দাঁত মাজুন বা ব্যবহার করুন মাউথ-ওয়াশ, এতে করে রসুনের দুর্গন্ধ চলে যাবে।
হাজার বছর ধরে খাবার আর ওষুধ, দুই রূপেই রসুন ব্যবহার হয়ে আসছে। রসুন খেলে অনেকেরই অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। তাই ত্বকে কোনো সমস্যা দেখা দিলে, যেমন দেহের তাপ বা মাথাব্যথা বেড়ে গেলে সাথে সাথে রসুন খাওয়া বন্ধ করতে হবে। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট আছে এমন ব্যক্তিদের রসুন ব্যবহারে সাবধান থাকা উচিত। আর চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বেশি পরিমাণে রসুনের কোয়া খাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুনঃ নিয়মিত টমেটো খান, সতেজ থাকুন