আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: যেসব আমলগুলো জান্নাতের ওয়াদা । জান্নাত বা জাহান্নাম মানুষের চূড়ান্ত ঠিকানা। ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী, জান্নাতে যাওয়ার জন্য দুটি মৌলিক উপায় অবলম্বন করতে হয়: ঈমান এবং আমল। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত।’ (সুরা লুকমান: ৮)
এমন কিছু আমল রয়েছে, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.) নির্দেশিত এবং সেগুলোর মাধ্যমে আমরা জান্নাতের পথে একধাপ এগিয়ে যেতে পারি। এখানে আমরা জানাবো কিছু অতি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আমল, যেগুলোর মাধ্যমে হাদিস অনুযায়ী জান্নাতে যাওয়া সহজ হবে।
১. প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত
আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যুর ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (নাসায়ি: ৯৯২৮)
২. সকাল-সন্ধ্যায় সায়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠ
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দিনে (সকালে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ ইস্তেগফার পড়বে এবং সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতি হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (প্রথম ভাগে) দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দোয়া পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতি হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)
৩. অজুর পর দু’রাকাত নামাজ
উকবা বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম যখন সুন্দরভাবে অজু করে দাঁড়িয়ে একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।’ (আবু দাউদ: ৯০৬; তিরমিজি: ১০৫৯)
৪. অজুর পর কালেমা শাহাদাত পড়া
নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে মুসলিম উত্তমরূপে অজু করার পর বলে, ‘أشهدُ أن لا إلهَ إلَّا اللهُ وأشهدُ أنَّ محمَّدًا عبدُه ورَسولُه’; তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। সে যেকোনো দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম: ২৩৪; আবু দাউদ: ১৭০; ইবনু মাজাহ: ৪৭০)
৫. আজানের উত্তর দেওয়া
রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজানের উত্তর ভালোভাবে দেবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম: ৭৩৬; আবু দাউদ: ৫২৭)
৬. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া
হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা সঠিকভাবে আদায় করবে এবং অলসতাহেতু তার কিছুই পরিত্যাগ করবে না, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবার জন্য অঙ্গিকার করেছেন।’ (আবু দাউদ: ১৪২০; সুনানে নাসায়ি: ৪৬১; সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪০১)
৭. গুরুত্বের সঙ্গে ফজর ও আছর আদায়
আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও আছর) নামাজ আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭৪; সহিহ মুসলিম: ৬৩৫)
৮. সালামের প্রসার, মানুষকে খাওয়ানো এবং শেষরাতে নামাজ
হাদিসে বর্ণিত, ‘হে মানুষগণ! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাদ্য দান করো এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় (তাহাজ্জুদ) নামাজ আদায় করো। তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সহিহ-সালামতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি: ২৪৮৫; ইবনে মাজাহ: ১৩৩৪)
৯. মকবুল হজ
হাদিসের ভাষায়, ‘হজ্জে মাবরুর (মকবুল হজ)-এর বিনিময় জান্নাত ব্যতীত কিছুই নয়।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৮৭)
১০. জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাজত
রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৭৪)
১১. সত্যবাদী হওয়ার পরও ঝগড়া ত্যাগ ও সুন্দর চরিত্র গঠন
রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সত্য বলার পরও ঝগড়া ও রসিকতার ছলেও মিথ্যা না বলে এবং নিজের চরিত্র সুন্দর রাখে, তার জন্য জান্নাতের তিন স্তর রয়েছে।’ (আবু দাউদ: ৪৮০০)
১২. নারীদের চার কাজে জান্নাত
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রমজানের রোজা, লজ্জাস্থানের হেফাজত ও স্বামীর আনুগত্য করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৪১৬৩; মুসনাদে আহমদ: ১৬৬১)
১৩. দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ধৈর্যধারণ করলে জান্নাত
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ধৈর্যধারণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৬৫৩)
১৪. প্রিয়জনকে হারিয়ে সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করলে জান্নাত
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রিয়জনকে হারিয়ে সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪২৪)
১৫. দান-সদকা
পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আত্মশুদ্ধির জন্য তার সম্পদ ব্যয় করে—(এই দান) তার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদান হিসেবে নয়; শুধু তার রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়, অচিরেই সে সন্তুষ্ট হবে।’ (সুরা লাইল: ১৭-২১)। হাদিসে এসেছে, ‘তোমরা এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো।’ (বুখারি: ৬৫৪০)
আরও পড়ুনঃ
❒ বিপদ কেটে যাওয়ার পর একজন মুমিনের করণীয়
❒ আস্তাগফিরুল্লাহ শব্দের এত বড় ফজিলত!
❒ আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দিবে যে ছোট ছোট জিকির
❒ যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব
❒ সাইয়্যেদুল ইস্তেগফারের ফজিলত ও অর্থ
❒ সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়ার ফজিলত
১৬. তাওবা-ইস্তেগফার
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা; আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। (সুরা তাহরিম: ৮)
জান্নাতে যাওয়ার পথ আল্লাহ তাআলা সহজ করে দিয়েছেন এবং সেসব আমল আমাদের জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছেন, যা জান্নাতের দিকে আমাদেরকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। ইসলামে নেক আমলগুলোতে রয়েছে জান্নাতের ওয়াদা, আর সেই আমলগুলো যদি একাগ্রতার সাথে করা হয়, তাহলে জান্নাতের পথে পৌঁছানো একদম সহজ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এসব আমলের উপর সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
❑ ইসলামী জীবন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ রাসুলুল্লাহ (স.) যে চারটি সুন্নত কখনোই ছাড়তেন না