আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আধুনিক মারণাস্ত্রের ভাণ্ডার । যুক্তরাষ্ট্র আধুনিক যুদ্ধবিজ্ঞান ও সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বের শীর্ষ শক্তি। এ দেশটি সামরিক খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করে থাকে এবং তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে রয়েছে সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও ধ্বংসাত্মক অস্ত্রভাণ্ডার। নিচে যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক মারণাস্ত্র ও যুদ্ধ সক্ষমতার প্রধান পাঁচটি খাত এবং সেগুলোর বিবরণ তুলে ধরা হলো:
১। ফাইটার বিমান ও বোমারু বিমান
প্রধান বিমানসমূহ:
❁ F-22 Raptor: বিশ্বের প্রথম পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ ফাইটার, আকাশে দৃষ্টির অগোচরে শত্রু ধ্বংসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। যা সুপারক্রুজ ও উচ্চ ম্যানুভারেবিলিটির জন্য পরিচিত। এটি এয়ার সুপিরিয়রিটি নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়।
❁ F-35 Lightning II: পঞ্চম প্রজন্মের স্টেলথ মাল্টিরোল ফাইটার, তিনটি ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে (F-35A, F-35B, F-35C), যা এয়ার-টু-এয়ার ও এয়ার-টু-গ্রাউন্ড মিশনে পারদর্শী। এটি AN/APG-81 AESA রাডার দ্বারা সজ্জিত, যা উন্নত ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সক্ষমতা প্রদান করে।
❁ Boeing F-47 (NGAD): ষষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার, যা ২০২৫-২০২৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীতে যুক্ত হবে। এটি Mach 2+ গতি, ১০০০+ নটিক্যাল মাইল কমব্যাট রেঞ্জ এবং উন্নত স্টেলথ প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত।
❁ B-2 Spirit: স্টিলথ বোমারু বিমান, পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম।
❁ B-21 Raider (নতুন): পরবর্তী প্রজন্মের স্টিলথ বোমারু, রাডার ফাঁকি দিয়ে গভীরে আঘাত হানতে পারবে।
বৈশিষ্ট্য:
► রাডার-এভাসিভ (Stealth)।
► সুদূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।
► অটো-পাইলট ও AI সমন্বিত সিস্টেম।
২। রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা
প্রধান অস্ত্র:
❁ Minuteman III ICBM: আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।
❁ Trident II (D5): সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র।
❁ Tomahawk Cruise Missile: ভূমি লক্ষ্যবস্তুতে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে আঘাত হানার জন্য ব্যবহৃত হয়।
❁ AGM-114 Hellfire: ড্রোন বা হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া উচ্চ-নির্ভুলতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র।
❁ Patriot ও THAAD Missile Defense System: শত্রু ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ব্যবহৃত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
❁ LRHW (Long-Range Hypersonic Weapon): “ডার্ক ঈগল” নামে পরিচিত এই হাইপারসনিক মিসাইলটি Mach 5+ গতি ও ১৭২৫ মাইল রেঞ্জে টার্গেট আঘাত করতে সক্ষম। এটি ২০২৫ সালে Zumwalt শ্রেণির ডেস্ট্রয়ারে মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে।
❁ Golden Dome Initiative: যুক্তরাষ্ট্রের “Golden Dome” প্রকল্প, যা ইসরায়েলের Iron Dome-এর অনুকরণে তৈরি, হাইপারসনিক, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল প্রতিরোধে সক্ষম। এই প্রকল্পে $২৫ বিলিয়ন বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে।
ক্ষমতা:
► পারমাণবিক ও কনভেনশনাল উভয়ধরনের হামলা।
► উপগ্রহ-নির্ভর টার্গেটিং।
► হাইপারসনিক প্রযুক্তির গবেষণা চলমান।
৩। ড্রোন ও রোবোটিক যুদ্ধ ব্যবস্থা
প্রধান ড্রোন:
❁ MQ-9 Reaper: দূরপাল্লার হামলার ড্রোন, একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।
❁ RQ-4 Global Hawk: নজরদারির জন্য ব্যবহার হয়, বিশাল এলাকা স্ক্যান করতে পারে।
❁ XQ-58 Valkyrie: AI চালিত ড্রোন, ফাইটার জেটের সঙ্গী হিসেবে কাজ করতে পারে।
❁ Ghost Robotics Quadruped: কুকুর আকৃতির রোবোটিক ইউনিট, মাইন সনাক্তকরণ, নজরদারি ও সীমান্ত টহলে ব্যবহৃত।
❁ UVision Hero & AeroVironment Switchblade: এই লুইটারিং মিউনিশন ড্রোনগুলো সুনির্দিষ্ট টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল অপারেশন ফোর্স এগুলো ব্যবহার করছে।
❁ Milrem Robotics THeMIS: এই স্বয়ংক্রিয় গ্রাউন্ড রোবটটি মাইন ক্লিয়ারিং, কার্গো ট্রান্সপোর্ট ও সৈন্য উদ্ধার মিশনে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইউক্রেনে এর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য:
► নিজে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম (AI integration)।
► গোপন অনুপ্রবেশ ও হত্যাকাণ্ড।
► কোনো মানব চালক ছাড়াই বিপজ্জনক মিশন।
৪। নৌ-সামরিক শক্তি ও রাডার ব্যবস্থা
প্রধান ইউনিট:
❁ Aircraft Carriers (যেমন: USS Gerald R. Ford): ভ্রাম্যমাণ বিমানঘাঁটি, সমুদ্র থেকেই বিমান হামলা চালানো যায়।
❁ Virginia-Class Submarines: পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন আক্রমণাত্মক সাবমেরিন। এই সাবমেরিনগুলোতে ২০২৯ সালের মধ্যে হাইপারসনিক অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো সমুদ্রের নিচ থেকে মিসাইল উৎক্ষেপণে সক্ষম হবে।
❁ Zumwalt-Class Destroyers: রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম অতি আধুনিক যুদ্ধজাহাজ। এই স্টেলথ ডেস্ট্রয়ারগুলোতে ২০২৫ সালে হাইপারসনিক মিসাইল মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো উন্নত কমব্যাট সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত।
❁ AEGIS Combat System: অত্যাধুনিক রাডার ও অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ সিস্টেম যা শত্রু বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে পারে।
প্রযুক্তি:
► সমুদ্রের নিচ থেকে পারমাণবিক হামলার ক্ষমতা।
► দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ।
► রাডার ও সেন্সর দ্বারা স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া।
৫। স্পেস ও সাইবার সক্ষমতা
মহাকাশ শক্তি:
❁ Space Force: যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ বাহিনী, মহাকাশে সামরিক আধিপত্য বজায় রাখতে গঠিত।
❁ X-37B Spaceplane: গোপন সামরিক মিশনে ব্যবহৃত অরবিটাল বিমান।
❁ Anti-Satellite Weapons (ASAT): শত্রু উপগ্রহ ধ্বংসের প্রযুক্তি।
আরও পড়ুন:
❒ বিশ্বের বর্তমান জনসংখ্যা ৮০৯ কোটি
❒ ‘চব্বিশের’ বর্ষসেরা দেশ বাংলাদেশ: দ্য ইকোনমিস্ট
❒ গাজায় নির্মম হত্যাযজ্ঞের শেষ কোথায়?
সাইবার যুদ্ধ:
❁ U.S. Cyber Command: শত্রু দেশের ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, কমিউনিকেশন অবকাঠামো ভেঙে ফেলার সক্ষমতা।
❁ Offensive Cyber Tools: ম্যালওয়্যার, ডেটা স্যাবোটাজ, ইলেকট্রনিক হ্যাকিং।
❁ AI ও Quantum-Encrypted Communication: তথ্য সুরক্ষা ও হাইপার নিরাপদ যোগাযোগ।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি কেবল তার অস্ত্রের সংখ্যায় নয়, বরং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, নৌবাহিনী, মহাকাশ, এমনকি সাইবার স্পেস — সব ক্ষেত্রেই আমেরিকা তার আধিপত্য বজায় রেখেছে।
এই বিশাল ও বহুমাত্রিক সামরিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু রণাঙ্গনে নয়, বিশ্ব কূটনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম করে তুলেছে।
❑ আন্তর্জাতিক থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: ভারতের আইনে পরিণত হলো বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল