আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব । কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। আল্লাহ তাআলা কোরবানির নির্দেশ দিয়ে বলেন— فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি আদায় করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)
পশু জবাই করে কোরবানি করার মধ্যে এই হিকমত আছে যে, আল্লাহর জন্য নিজের সকল অবৈধ চাহিদা ও পশুত্বকে কোরবানি করা এবং ত্যাগ করা। তাই কোরবানি থেকে কুপ্রবৃত্তির দমনের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (মনে রেখো, কোরবানির জন্তুর) গোশত অথবা রক্ত আল্লাহর কাছে কখনোই পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে কেবলমাত্র তোমাদের পরহেজগারিই পৌঁছে। (সুরা হজ: ৩৭)
কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন, মুকিম, মুসলিম নর-নারী ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের ভেতরে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। (আল মুহিতুল বুরহানি: ৬/৮৫)
কোরবানির নিসাব
সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি রুপা বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র, যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমপরিমাণ, তা কোরবানির নিসাব। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার, মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত জমি ও বাড়ি, ব্যাবসায়িক পণ্য ইত্যাদি কোরবানির নিসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। (আলমগিরি: ৫/২৯২-২৯৩)
প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ কী কী
খাবার দাবার, পোশাক পরিচ্ছদ, বসবাসের ঘর, বাহন ইত্যাদি, যা ছাড়া মানুষ জীবন ধারণ করতে অক্ষম, এসব বস্তুকে বলা হয় প্রয়োজনীয় বস্তু। এছাড়া যত সম্পদ থাকবে সবগুলোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত বস্তু।
প্রয়োজন অতিরিক্ত জমি থাকলেও কোরবানি ওয়াজিব হয়। (আহসানুল ফতোয়া: ৭/৫০৬) ব্যবসার নিয়তে গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, কাপড়-চোপড়, অলংকার, নির্মাণ সামগ্রী, ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, হার্ডওয়ার সামগ্রী, বইপুস্তক ইত্যাদি কিনলে তা বাণিজ্য-দ্রব্য বলে গণ্য হবে এবং এসবের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে। (সূত্র: মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭১০৩-৭১০৪)
তবে, ভাড়ায় চালিত গাড়ি জাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই এমন গাড়ির মূল্যের ওপর কোরবানি বা জাকাত দিতে হয় না। তবে সেগুলো থেকে ভাড়া বাবদ অর্জিত আয়ের যে অংশ প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের পর অতিরিক্ত থাকবে তা জাকাতযোগ্য বা কোরবানির উপযোগী সম্পদের মধ্যে গণ্য হবে। (সূত্র: কিতাবুল আসল: ২/৯৭; ফতোয়ায়ে খানিয়া: ১/২৫১; বাদায়ে: ২/৯১; আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৭৩)
কোরবানির দিন চলে গেলে করণীয়
কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর যদি নগদ অর্থ দিয়ে কোরবানির পশু ক্রয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে ঋণ করে হলেও কোরবানি দিতে হবে। পরে তা পরিশোধ করে দেবে। যদি এটিও সম্ভব না হয় এবং কোরবানির দিনসমূহ চলে যায়, তাহলে পরবর্তীতে একটি মধ্যম মানের বকরির মূল্য কোরবানির নিয়তে সদকা করে দিতে হবে। (রদ্দুল মুহতার: ৪৫৩-৯/৪৫২; দুররুল মুখতার: ৯/৪৬৩)
আরও পড়ুনঃ
❒ ঈদুল আজহার দিনে করণীয় ও বর্জনীয়
❒ বছরে কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে
❒ জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন যেসব আমল ছাড়বেন না
❒ কোরবানি শুদ্ধ হয় না হওয়ার ১০টি কারণ
❒ যেসব কারণে একাকী কোরবানি করা উত্তম
❒ প্রথমবার হজে গেলে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
কোনো ব্যক্তির ওপর কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর কোরবানি আদায় না করে অতঃপর ওই তিনদিন পর সে গরিব হয়ে যায় তাহলে তার ওপরও কোরবানিযোগ্য ছাগল সদকা করা আবশ্যক। দরিদ্র হওয়ার কারণে কোরবানি মাফ হবে না। সুতরাং সে আদায় করে যেতে না পারলে তা আদায় করে দেওয়ার জন্য অসিয়ত করে যেতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৫/৬৫ আল ইখতিয়ার: ৫/২০ মোবাইল শামেলা থেকে গৃহীত)
সামর্থ্য থাকার পরও যে কোরবানি করে না, হাদিসে তার নিন্দা করা হয়েছে। তার সম্পর্কে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘..সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৫১৯; আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব: ২/১৫৫)
সম্পদের যথাযথ হিসাব করা কষ্টকর হলে আপনার সম্পদের পূর্ণ হিসাব আপনার কাছের কোনো হক্কানি আলিমের কাছে পেশ করুন। তিনি দেখে সিদ্ধান্ত দেবেন। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি আমল করুন। আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শরিয়তের নির্দেশনা মেনে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের কোরবানি কবুল করুন। আমীন।
❑ ইসলামী জীবন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ হজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমূহ কী কী