আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মোটরবাইক চুরি ঠেকাতে যা করতে পারেন । দেশে বাড়ছে মোটরবাইক চুরির ঘটনা। রাস্তা-ঘাট, শপিং মল-অফিসের পার্কিং জোন এমনকি বাসা-বাড়ি থেকেও চুরি হচ্ছে মোটরবাইক। তবে চুরি ঠেকাতে বিশেষ কিছু কৌশল অবলম্বন করে সাবধান থাকা সম্ভব। ট্রাফিক জ্যামের সমস্যার কারণে দেশে মোটরসাইকেলের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোটরবাইক চুরি। প্রতিদিন থানায় জমা হচ্ছে মোটরসাইকেল চুরি সংক্রান্ত মামলা। মাস্টার কি বা অন্যান্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে বাইক নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে চোর।
তবে বাইক চুরি হতে সাবধান থাকার বিষয়ে এখনো অনেকে ঢিলেঢালা আচরণ দেখাচ্ছেন। এই অসাবধানতার কারণে মুহূর্তে চুরি হয়ে যেতে পরে আপনার মূল্যবান বাইকটি। তবে চুরি ঠেকাতে কিছু পদক্ষেপ নিলে কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। চলুন দেখে নেয়া যাক পদক্ষেপগুলো-
বাইক চুরি ঠেকাতে বেশ কার্যকর লক সিকিউরিটি সিস্টেম এখন বাজারে এসেছে। আধুনিক এ সমস্ত লক সিস্টেম এমনভাবে ডিজাইন করা যা আগের তুলনায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বাইকের সুরক্ষার জন্য অবশ্যই এগুলো সব বাইকারদের ব্যবহার করা উচিত এবং প্রয়োজন।
ডিস্ক লক
ডিস্ক লক পুরোপুরি নিরাপদ নয় বাইক চুরি ঠেকাতে। কারন, বাইক স্টার্ট দিয়ে জোরে টান দিলেই ডিস্ক লক সহজেই ভেঙে যায়। এই কৌশলে বাইক চুরি করা যেকোন চোরের পক্ষে সম্ভব। অতএব, কোনো ভালো ব্র্যান্ডের শক্তিশালী ডিস্ক লক ব্যবহার করা দরকার।
কিল সুইচ
গোপন সুইচ ব্যবহার করে আপনার মোটরসাইকেল চুরি হওয়া থেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন। বাইকের গোপন একটি স্থানে এই সুইচ সেট করে নিবেন আপনার সুবিধার জন্যে। এটি মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের সঙ্গে লিংক দিয়েও গোপন জায়গায় বসাতে পারেন। কিল সুইচ দিলেই বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে এবং এটি বাইক চুরি ঠেকাতে বেশ কার্যকর।
আরো পড়ুন: ল্যাপটপের স্ক্রিন-কিবোর্ডে থাকে টয়লেটের মতো জীবাণু!
এই সুইচ সেট করতে আপনার কাছাকাছি যেকোন মোটরসাইকেল সার্ভিসিং সেন্টারের সাহায্য নিতে পারেন। বাইকের এমন একটি গোপন স্থানে এই সুইচটি লাগান যেন চোরের নজরে সহজেই না আসে। সম্ভব হলে ছোট সুইচ ব্যবহার করতে পারেন।
অথেন্টিক ব্র্যান্ডের এক্সট্রা লক
মোটরসাইকেল চুরি ঠেকাতে বিভিন্ন ধরনের মজবুত তালা ব্যবহার করা উচিত। তবে নিম্নমানের সস্তা তালা চাবি ব্যবহার করলে বিপদে পড়তেন পারেন, কারণ এতে কোয়ালিটি কম থাকায় সহজেই ভেঙে ফেলা যায়।
বাইকের জন্য শুধু মাত্র একটি লক ব্যবহার করা আপনার মোটরসাইকেলের জন্য নিরাপদ নয়। দুটি বা তিনটি তালাও একসাথে ব্যবহার করতে পারেন। বাইক চুরি ঠেকাতে এটি একটি মজার কৌশল যা আপনার কাজে আসতে পারে। বেশি তালা ব্যবহারের ফলে লক ভাঙতে সময় লাগবে। তাই এক্সট্রা লক সব সময় ব্যবহার করা জরুরি।
দামী মোটরসাইকেলের জন্যে ভালো মানের এবং দামী লক ব্যবহার করা সবচেয়ে লাভজনক। বাইক চুরি থেকে রক্ষা পেতে ভালো ব্র্যান্ডের গ্রিপ লক এবং চেইন ব্যবহার করা নিরাপদ। অবশ্যই অরিজিনাল কোয়ালিটির মজবুত লোহার শিকল ব্যবহার করবেন চুরি ঠেকাতে। এতে করে কোনো চোরের জন্য শিকল কাটা বেশ কষ্টকর হবে।
জিপিএস ট্র্যাকার
বাজারে বেস্ট ব্র্যান্ডের জিপিএস ট্র্যাকার এখন বেশ সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায় যেকোনো মোটরসাইকেলের জন্য। বাইকের নিরাপত্তা দিতে এগুলো বেশ উপযোগী।
জিপিএস ট্র্যাকার দিয়ে চুরি করা বাইকের সন্ধান করতে পারবেন খুব সহজেই। তবে ট্র্যাকার পছন্দ করবেন বেস্ট ব্র্যান্ড এবং কোয়ালিটি দেখে যাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
অ্যান্টি-থেফ্ট অ্যালার্ম
বাইক চুরি ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে অ্যান্টি-থেফ্ট অ্যালার্ম ব্যবহার। সাধারণ গাড়ির অ্যালার্মের থেকে এগুলো আলাদা হতে পারে। মোটরবাইক চুরি হলে এই অ্যালার্ম তার মালিককে সতর্ক করার চেষ্টা করতে পারে। তবে হ্যাঁ, ওই অ্যালার্মের সেনসিটিভিটি যেন ভালোভাবে টিউন করা থাকে। অনলাইন বা অফলাইনে এই অ্যালার্ম কেনা যেতে পারে।
আরো পড়ুন: ডার্ক ওয়েবে আপনার নাম-ঠিকানা আছে কিনা যেভাবে বুঝবেন
সেন্সর সিস্টেম
সেন্সর সিস্টেম সেট করলে আপনার বাইকের নিরাপত্তা বেড়ে যাবে। এই সিস্টেম থাকলে চোর আপনার মোটরসাইকেল স্টার্ট করতে পারবে না। ফলে মোটরসাইকেল চুরি ঠেকানো সম্ভব হবে।
নিরাপদ জায়গায় পার্কিং
বাইরে কোথাও বাইক পার্কিং করার ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে আশপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা উপস্থিত রয়েছে। পরবর্তীতে বাইক চুরি হলেও চোরকে শনাক্ত করা যাবে।
এছাড়া, সিসি ক্যামেরার আশেপাশে আপনার মোটরসাইকেল পার্ক করা থাকলে চোর কোনরকম চুরি করার সুবিধা করতে পারবে না। বেশিরভাগ এটিএম বুথের সামনে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকে। তাই এটিএম বুথের আশপাশে বাইক পার্কিং করা নিরাপদ।
ডিজিটাল লক সিকিউরিটি ডিভাইস
সম্প্রতি মোটরসাইকেল চুরি হওয়া থেকে আরও নিরাপত্তা বাড়াতে এখন বাজারে এসেছে ডিজিটাল লক সিকিউরিটি ডিভাইস। এই ডিভাইসটি ট্যাসলক কার্বন এডিশনের চতুর্থ ভার্সন যার ৩৭টি ফিচারস রয়েছে। কোনো চাবির সাহায্য ছাড়াই শুধু কার্বন এডিশনের রিমোট দিয়ে বাইক চালানো যাবে। ডিভাইসটির সঙ্গে দুটি রিমোট রয়েছে। একটি সেন্সর রিমোট ও অন্যটি ব্যাকআপ রিমোট।
ডিভাইসে আধুনিক সিস্টেম যুক্ত রয়েছে যা ব্যবহার করে মোটরসাইকেলকে লক করা যাবে। চাবি দিয়ে লক করার তিন সেকেন্ড পর আপনার মোটরসাইকেল অটোমেটিক লক হয়ে যাবে। আবার রিমোট ব্যবহার করে অটোমেটিক লক খুলে যাবে।
সিসিটিভি ক্যামেরা
বাসায় মোটরসাইকেল পার্ক করার স্থানে বাইকের নিরাপত্তার জন্য একটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাতে পারেন। বাসার পার্কিং এ সিসি ক্যামেরা থাকার সুবিধা হলো আপনি যখন তখন বাইকের ওপর নজর রাখতে পারবেন। বাইক চুরি ঠেকাতে এই উপায় কাজে লাগতে পারে।
মোটরসাইকেল চুরি হলে করণীয়
আপনার বাইক কোনো দুর্ঘটনায় হারিয়ে যেতে পারে কিংবা চুরি বা ছিনতাইও হতে পারে। সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। হারানো মোটরসাইকেল ফিরে পেতে নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে। মোটরসাইকেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন—ক্রয়ের রশিদ, লাইসেন্স নম্বর,জাতীয় পরিচয়পত্র, বাইকের বাকি ডকুমেন্টস থানায় জমা দিতে হবে।
অফিসার আপনার অভিযোগ গ্রহণ করে একটি জিডি নম্বর দিবে এবং মোটরসাইকেল উদ্ধারের কাজ শুরু করবে। এছাড়াও, বাইকে আগের থেকে যদি জিপিএস ট্র্যাকার যুক্ত থাকে তাহলে হারানো বাইকের খোঁজ করা সহজ হয়ে যাবে। শেষ কোন জায়গা থেকে বাইক চুরি হয়েছে বা হারিয়েছে সেখানে আশেপাশে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কিনা খোঁজ করুন।
সূত্র: বাইকস গাইড
আরো পড়ুন: কীভাব আইফোনে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করবেন