আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মোগলদের ৭ রাজকীয় খাবার । ভারতীয় উপমহাদেশের খাবারের যে বিশ্বব্যাপী এত সুনাম, এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মোগল। মোগল সাম্রাজ্যের পতনের ২০০ বছর পরও প্রবল প্রতাপ নিয়ে টিকে আছে তাদের খাবার। সময়ের সঙ্গে আমাদের খাদ্য-সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোগল খাবার।
মোগল খাবারের উৎস আসলে পারস্য বা ইরান। তবে এর বিপুল জনপ্রিয়তার পেছনে ভারতীয় মসলা ও কিছু রন্ধনপদ্ধতিকেও কৃতিত্বের ভাগ দিতে হবে। জেনে নেওয়া যাক, মোগলদের রান্নাঘর থেকে জনপ্রিয়তা পাওয়া ৭ খাবারের কথা, যেগুলো তৃপ্ত করেছে আমাদের স্বাদকোরক।
১. বিরিয়ানি
গরম-গরম ধোঁয়া ওঠা কাচ্চি বিরিয়ানি, পাশে এক গ্লাস ঠান্ডা বোরহানি আর সামনে এক বাটি ফিরনি। আহা, এই খাবারকে ‘না’ বলে কার সাধ্য! সামনে ঈদ। অনেকের বাড়িতেই ডাইনিং টেবিলে প্লেটে উঠবে সদ্য রান্না হওয়া বিরিয়ানি। যদিও এই বিরিয়ানিরও আছে অর্ধশত পদ।
আরও পড়ুনঃ ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার হাজী বিরিয়ানি
তবে মূল বিরিয়ানির ধারণাটা, অর্থাৎ উন্নত মানের চাল, মাংস, মসলা, আলুর সংমিশ্রণে যে মজাদার রান্না, এশিয়ায় সেটি মোগলদের মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেই সঙ্গে রোস্ট, রেজালা আর নিহারি তো আছেই। এ ছাড়া কোরমা, মোরগ মোসাল্লাম, ডাল মাখানি, আলু গোশত, তন্দুরি, টিক্কা, কোফতা, কোরমা—প্রিয় যে খাবারেরই নাম বলবেন, তার অধিকাংশই আসলে মোগল খাবারেরই অংশ।
২. কাবাব
পোলাওয়ের প্লেটে একটুকরা কাবাব না থাকলে পূর্ণতা পায় না। আবার পরোটা বা নান দিয়েও শিক কাবাব পেয়েছে দারুণ জনপ্রিয়তা। আরও নানা কাবাব প্রতিনিয়ত আমাদের পেট ভরায়, মন ভরায়। বিরিয়ানির সঙ্গে অনেকের কাবাব ছাড়া চলেই না। এই কাবাবও মোগলদের অবদান। বিশেষ করে শামি কাবাব ও জালি কাবাব। কাকরি, চাপলি, সুতি, রেশমি, বিহারি, তুনরি কাবাব—বিভিন্ন কাবারের ধরনের শেষ নেই!
৩. শিঙাড়া, সমুচা
স্ন্যাকস বা হালকা নাশতায় সমুচার বিকল্প পাওয়া দায়। ব্রিটিশদের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পাওয়া চায়ের সঙ্গে মোগলদের মাধ্যমে আসা গরম-গরম সমুচা—এই জুটির কোনো তুলনা চলে?
৪. পরোটা
সাদা পরোটা থেকে পনির বা কিমা পরোটা এবং সবার চেয়ে জনপ্রিয় মোগলাই পরোটা মোগলদের আবিষ্কার। কথিত আছে, মোগল সম্রাটদের খাবারের পর হাত মোছার জন্য নাকি রুমাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো আমাদের আজকের জনপ্রিয় পাতলা রুমালি রুটি। অনেকেই দিন শুরু করেন সকালের নাশতায় পরোটা খেয়ে। আর শেষবেলায় মিশ্র সবজির সঙ্গে খোঁজেন রুমালি রুটি।
আরও পড়ুনঃ আড়াইশো বছর ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নাটোরের কাঁচাগোল্লা
৫. জিলাপি
ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ জিলাপি। এখন তো ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলে ২০ হাজার টাকা কেজিতে সোনার জিলাপিও পাওয়া যায়। সেটা মানুষ কিনেও খায়! তবে স্ট্রিট ফুড হিসেবেও নামডাক আছে জিলাপির।
৬. কুলফি
আইসক্রিমের ভেতর অনেকেরই প্রিয় কুলফি মালাই। বাংলাদেশে কুষ্টিয়ার কুলফি ব্যাপক জনপ্রিয়। মূলত দুধ আর চিনি দিয়ে তৈরি হয়। এর সঙ্গে মাঝেমধ্যে যোগ করা হয় নানা ধরনের মসলা, বাদামকুচি, নারকেল বা জাফরান। গরমে কলাপাতায় একটা কুলফির কোনো বিকল্প নেই।
৭. ফালুদা
মোগলদের কল্যাণে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে বেশ কিছু মিষ্টান্নও যোগ হয়েছে। ফালুদা এর ভেতর অন্যতম। দুধ, সাবুদানা, নুডলস, চিনি ছাড়াও নানা রকম বাদাম, কিশমিশ, ফল, খেজুরের মতো উপকরণের ব্যবহারে এসব মিষ্টি পায় আলাদা স্বাদ, আলাদা বৈচিত্র্য। এ ছাড়া ফিরনি, হালুয়া, গোলাপজাম, ফিরনি, শাহি টুকরাও মোগলদের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এশিয়া মহাদেশে।
হলুদ-মরিচ-জিরা তো আছেই, সঙ্গে আদা, পেঁয়াজ ইত্যাদির বাইরেও গরমমসলা, ধনে, কাবাব চিনি, এলাচি-দারুচিনি-তেজপাতা—মোগল খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয় অনেক মসলা। তবে খুব সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয় রসুন। এই রীতি এখনো আছে। যদিও অনেকে ঘরে বিরিয়ানি বানালে গুরুত্বপূর্ণ মসলা হিসেবে রসুনও ব্যবহার করেন।
আরও পড়ুনঃ ১২৫ বছরেও কমেনি মদন গোপালের মিষ্টির কদর