আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মৃত্যু ঝুঁকি বাড়াতে পারে বিষণ্ণতার কিছু ওষুধ । নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়াতে পারে এসব ওষুধ, বিশেষ করে যেসব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বয়স ৬৫-এর নিচে ও যারা বিষণ্ণতায় ভুগছেন তাদের বেলায়।
গবেষণা বলছে, যারা বিষণ্ণতায় ভুগছেন ও চিকিৎসার শুরুতে নতুন ধরনের অ্যান্টিসাইকোটিক বা মনোবিকার দূর করার ওষুধ খাচ্ছেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি যারা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা বিষণ্ণতা কমানোর ওষুধ খাচ্ছেন তাদের চেয়ে বেশি হতে পারে।
গবেষণার এই তথ্য বিষণ্ণতার চিকিৎসা পদ্ধতি ও কিছু বহুল ব্যবহৃত ওষুধের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন গুরুতর এক মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যার জন্য প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সাধারণত, চিকিৎসকেরা প্রথমে একটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা বিষণ্ণতা কমানোর ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। যদি সেই ওষুধে ভালো ফল না আসে তখন পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে অন্য একটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট দেওয়া বা ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াতে আরও একটি ওষুধ যোগ করা।
কিছু ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার নানা উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করার জন্য নতুন ধরনের অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ, যেমন– অ্যারিপিপ্রাজল (অ্যাবিলিফাই), কুয়েটিয়াপিন (সেরোকেল) বা ওলানজাপিন (জাইপ্রেক্সা) গ্রহণ করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ কিছু মানুষের উপকারে আসলেও এগুলোর সঙ্গে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকে। মানুষের ওজন ও রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কোলেস্টেরলের সমস্যা তৈরি করতে পারে এসব ওষুধ।
গবেষণায় ২৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ৩৯ হাজারেও বেশি মেডিকেইড রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছে গবেষণা দলটি। এসব রোগীরা ২০০১ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। শুরুতে তারা সবাই একটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ ব্যবহার করেছিলেন। তবে পরে বিষণ্ণতার উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়েছিল।
গবেষণার জন্য রোগীদের দুইটি দলে ভাগ করে নিয়েছেন গবেষকেরা। একটি দলকে তাদের মূল অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের সঙ্গে আরেকটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ যোগ করতে ও আরেকটি দলকে তাদের অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধের সঙ্গে একটি অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ নিতে বলেন গবেষকরা।
গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, যেসব রোগী অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ নিয়েছেন তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি যারা দ্বিতীয় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট নিয়েছিলেন তাদের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। সহজভাবে বললে, প্রতি ২৬৫ জন মানুষ যারা এক বছর ধরে অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হতে পারে, যেটি দ্বিতীয় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট খাওয়া রোগীদের মধ্যে দেখা যায়নি।
গবেষকরা বলছেন, এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ ধরনের অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ অনেক সময় যথেষ্ট সময় ধরে পর্যবেক্ষণ না করেই প্রেসক্রাইব করে ফেলেন চিকিৎসকেরা।
ক্লিনিকাল নির্দেশিকা অনুসারে, একজন রোগীকে অন্তত চার থেকে ছয় সপ্তাহ একটি অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার পর যদি ফল না মেলে তখনই অন্য ওষুধ যোগ করার কথা বলা হয়েছে। তবে বাস্তবে অনেক চিকিৎসক প্রয়োজনের আগেই অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ লিখে দেন। ফলে আগে কিছু নিরাপদ ও বিকল্প চেষ্টার মতো উপায় থাকলেও রোগীরা এমন ওষুধ খাচ্ছেন যেগুলো তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ
❒ টাইটানিয়াম কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড চিকিৎসা বিজ্ঞানে নতুন মাইলফলক
❒ মানুষের শরীরে বার্ধক্য ঠেকানোর নতুন কৌশল আবিষ্কার
❒ ইমপ্লান্ট স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীকে আবার শ্বাস নিতে সাহায্য করল
❒ ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট স্মৃতিশক্তি বাড়ালেও মস্তিষ্ককে ধীর করে দেয়
❒ চালের দানার সমান ‘ব্রেইন রোবট’ নিউরোসার্জারিতে বিপ্লব ঘটাবে
❒ স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটাচ্ছে রোবট
আগের বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিরা অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ খেলে তাদের মৃত্যু ঝুঁকিকে বেড়ে যেতে পারে।
নতুন গবেষণা বলছে, এ ঝুঁকিটা কেবল বয়স্কদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তুলনামূলক সুস্থ ও কম বয়সী ও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও তৈরি হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, বিষণ্ণতার চিকিৎসায় অ্যান্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবহারে ডাক্তার ও রোগী– দুইজনকেই সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের ওষুধ তখনই ব্যবহার করা উচিত যখন অন্যান্য নিরাপদ উপায় চেষ্টা করেও কাজ হয়নি। রোগীদের উচিত, চিকিৎসকদের সাহস করে প্রশ্ন করা, ওষুধের ঝুঁকি বিবেচনা করা ও নিজের চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
❑ চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ এআই নির্ভর আইভিএফ পদ্ধতিতে জন্ম নিয়েছে বিশ্বের প্রথম শিশু