আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মুলার পুষ্টি গুণ ও নানা উপকারিতা । মুলা! নাম শুনেই অনেকে চোখ কুঁচকান। অনেকেই মুলা খেতে চান না। কিন্তু মুলায় মেলে নানা উপকার। তরকারি হিসেবে বা সালাদে নানাভাবে মুলা খাওয়া যায়। পুষ্টিবিদেরা বলেন, মুলার মেলা পুষ্টিগুণ। যকৃৎ ও পাকস্থলী পরিষ্কারে মুলার জুড়ি মেলা ভার। নিয়মিত তাই খাবার টেবিলে মুলা রাখতেই পারেন।
মুলা একটি শীতকালীন সবজি। দেশের সর্বত্রই এখন চাষ হচ্ছে। মুলা একটি মুলবিশেষ খাবার উপযোগী সবজি।এই সবজিটি পুষ্টিকর হলেও অনেকেই মূলা খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু মুলার পাতা এবং মুলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে।
মুলার পুষ্টি গুণ: মুলার মূল যেমন পুষ্টিসমৃদ্ধ তেমন এর পাতাতেও প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। কচি মুলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। মুলার পাতাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি পাওয়া যায়।
খাবার উপযোগী ১০০ গ্রাম মুলাপাতায় আছে আমিষ ১.৭ গ্রাম, শ্বেতসার ২.৫ গ্রাম, চর্বি ১.০০ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৫৭ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৪৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ বা ক্যারোটিন ৯ হাজার ৭০০ মাইক্রোম ভিটামিন বি-১০.০০৪ মিলিগ্রাম, বি-২০.১০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ৩.৬ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪০ মিলিগ্রাম এবং ১২০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম রয়েছে মুলাতে।
আরও পড়ুনঃ আদা সর্বরোগের মহৌষধ
মুলার নানা উপকারের কথা জেনে নিন
যকৃৎ ও পাকস্থলী বিষমুক্ত করতে পারে মুলা। মুলা সাদা, লাল বা কালো রঙের হতে পারে। শীতকালে সাদা মুলা সহজে চোখে পড়ে। এ মুলায় প্রচুর ভিটামিন সি আছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। কালো রঙের মুলা ও এর পাতা অনেক দিন ধরে জন্ডিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুলায় যে উপাদান আছে, তা রক্ত শোধনে সহায়তা করে। মুলায় আছে প্রচুর সালফার।
১. রক্তে অক্সিজেন বাড়ায়: রক্তের লোহিত কণিকা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে মুলা। মুলা খেলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে।
২. যকৃৎ সুরক্ষা করে: মুলায় প্রচুর ফাইবার আছে। প্রতিদিন যদি সালাদের সঙ্গে অল্প পরিমাণে মুলা খাওয়া যায়, তবে শরীরে ফাইবার আসায় হজম ভালো হয়। এটি পিত্ত উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে, যকৃৎ ও গল ব্লাডারকে রক্ষা করে। শরীরে পানি ধারণক্ষমতার বাড়াতে মুলা খাওয়া যেতে পারে।
৩. হৃদ্যন্ত্রের সুরক্ষায়: হৃদ্যন্ত্র সুরক্ষা করতে পারে মুলা। এতে আছে অ্যান্থোসায়ানিনস, যা হৃদ্যন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। তাই বেশি মুলা খেলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে। এটি ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড ও ফ্লাভোনয়েডসের ভালো উৎস।
৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: মুলায় আছে পটাশিয়াম, যা শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাঁরা মুলা খেতে পারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়, রক্ত শীতলকারী প্রভাব আছে মুলায়।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় সাধারণ সর্দিকাশি থেকে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত মুলা খেলে শরীরে ক্ষতিকর মুক্ত উপাদান তৈরি হয় না। এ ছাড়া প্রদাহ ও অকালবার্ধক্য দূর হয়।
আরও পড়ুনঃ নিয়মিত টমেটো খান, সতেজ থাকুন
৬. রক্তনালি শক্তিশালী করে: কোলাজেন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মুলা, যা রক্তনালিকে শক্তিশালী করে এবং অথেরোসক্লেরোসিস নামের ধমনির রোগ হতে বাধা দেয়।
৭. বিপাকের বন্ধু: শুধু পাচনতন্ত্রই নয়, এটি বিপাকেরও ভালো বন্ধু। অম্ল, স্থূলতা, গ্যাসট্রিক, মাথাব্যথা, বমিভাব দূর করে মুলা।
৮. উচ্চ পুষ্টিগুণ: লাল মুলায় ভিটামিন ই, এ, সি, বি৬ ও কে আছে। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেও ভরপুর। এতে আছে ফাইবার, জিংক, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাংগানিজ। এসব উপাদান আমাদের শরীরকে কর্মঠ রাখতে সাহায্য করে।
৯. ত্বকের জন্য ভালো: প্রতিদিন মুলার জুস খেলে ত্বক সতেজ থাকে। মুলায় থাকা ভিটামিন সি, জিংক ও ফসফরাস এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। ত্বকের শুষ্কতা, ব্রণ বা দাগ দূর করতে পারে। মুলার পেস্ট তৈরি করে মুখে মাখলে ত্বক সজীব থাকে। এ ছাড়া চুলের খুশকি দূর করতে, চুল পড়া বন্ধ করতে, চুলের গোড়া শক্ত করতে পারে মুলা।
১০. শরীর আর্দ্র রাখে: মুলায় জলীয় পরিমাণ বেশি থাকায় এটি শরীরকে আর্দ্র রাখে।
১১. জন্ডিস: জন্ডিস রোগীদের জন্য মূলা খুব উপকারী। যাদের জন্ডিস হয়েছে বা যারা ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছেন, তাদের মূলা খাওয়া উচিত। কারণ মূলা রক্তে বিলিরুবিন নিয়ন্ত্রণ করে এবং দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায়। এ ছাড়া এটি রক্ত পরিশোধন করে।
১২. ডায়াবেটিস: মূলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও উপকারী। মূলায় প্রচুর ফাইবার রয়েছে। মূলা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা এটি গ্রহণ করতে পারেন। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ
১৩. ঠাণ্ডা লাগা: শীতে সবচেয়ে বেশি যে শারীরিক সমস্যা হয় তা হল সর্দি-জ্বর। নিয়মিত মূলা খেলে এসব সমস্যা কম হবে। এছাড়া মূলা খাওয়ার আরও অনেক সুবিধা রয়েছে, কারণ এতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অনেক রোগ থেকে দূরে রাখে।
১৪. ভিটামিনের ঘাটতি দূর হয়: একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে, নিয়মিত মুলার পাতা খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে নানাবিধ ভিটামিনের পরিমাণ যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতিও দূর হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি/কৃষি তথ্য সার্ভিস
আরও পড়ুনঃ তেঁতুল খাওয়ার উপকারিতা জানলে অবাক হবেন