আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মুমিনদের জন্যে আল্লাহর ২৫ প্রতিশ্রুতি । আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে মুমিন বান্দাদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মহান আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের দিকে লক্ষ্য রেখে মুমিন বান্দাদের অবশ্যই এই ধারণা জন্মানো উচিত যে, তিনি প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করবেনই। আর প্রতিশ্রুতি পূরণ করাই আল্লাহর সুন্নাহ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ প্রতিশ্রুতির খেলাফ করেন না।’ (সুরা ঝুমার: ২০)
এখানে ঈমানদারদের দেওয়া মহান আল্লাহর ২৫টি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হলো।
১. জান্নাত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজসমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোনো ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বে লাভ করেছিলাম। বস্তুত তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হবে। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধচারিণী রমণীকুল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।’ (সুরা বাকারা: ২৫)
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য (এমন নেয়ামত) প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না।’ (বুখারি: ৩২৪৪; মুসলিম: ২৮২৪)
আরও পড়ুন: জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৬ আমল
২. পরকালে বিশেষ আলো দান
পরকালে মুমিন বান্দাদের যার যার ঈমান অনুযায়ী জ্যোতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে পুলসিরাত পার হওয়ার সময় আলোর প্রয়োজন হবে। যেই পুলসিরাত চুলের চেয়েও সরু এবং তরবারির চেয়েও ধারালো, আর সেখানে কোনো আলো থাকবে না। সেদিন কিছু লোক এত বেশি আলো লাভ করবে যে তারা এক পলকে ঝড়ের বেগে সেই পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। কেউ দৌড়ে যাবে, কেউ হেঁটে যাবে, আবার অনেকে এক পা সামনে ফেলে আলোর অভাবে থমকে দাঁড়াবে, আর অনেকে অপর্যাপ্ত আলো তথা নূরের জন্য সেই পুলসিরাত পার হতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখভাগে ও ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে, বলা হবে- আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য।’ (সুরা হাদিদ: ১২)
৩. আল্লাহ মুমিনদের সঙ্গে থাকবেন
মুমিন বান্দাদের দেওয়া আল্লাহ তাআলার আরেকটি প্রতিশ্রুতি হলো তিনি ঈমানদারদের সঙ্গে থাকবেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘…জেনে রাখো, আল্লাহ রয়েছেন ঈমানদারদের সাথে।’ (সুরা আনফাল: ১৯)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আল্লাহকে সংরক্ষণ করবে তো তিনি তোমাকে সংরক্ষণ করবেন, আল্লাহকে স্মরণ করলে তাঁকে তোমার সামনেই পাবে।’ (তিরমিজি: ২৫১৬)
৪. উদারতা ও অনুগ্রহ
‘…আর আল্লাহ মুমিন বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহশীল।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৫২)
আল্লাহর উদারতা সীমাহীন, যা কেবল তাঁর মর্যাদার সঙ্গে মানানসই। তিনি আমরা যতটুকু যোগ্যতা রাখি তার চেয়েও বেশি তিনি আমাদের দিয়ে থাকেন। এর একটি সহজ উদাহরণ হলো, আমাদের জীবনের অধিকাংশ নেয়ামত আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা না করেই পেয়েছি, অপরদিকে যখন আমরা কোনো কিছু প্রার্থনা করেছি তিনি আমাদের তার চেয়েও বেশি দিয়েছেন। ‘যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা নাহাল: ১৮)
৫. বন্ধুত্ব ও অভিভাবকত্ব
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষদের মধ্যে যারা ইবরাহিমের অনুসরণ করেছিল, তারা, আর এই নবী এবং যারা এ নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারা ইবরাহিমের ঘনিষ্ঠতম, আর আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু। (সুরা আলে ইমরান: ৬৮)
৬. করুণা- রহমত
আল্লাহর করুণা ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে না। এটি রাসুলের (স.) হাদিস। এটি নিরেট সত্য। কিন্তু আল্লাহ তাআলা মুমিনদের করুণা করবেন, রহমত করবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের পালনকর্তা স্বীয় রহমতে দাখিল করবেন। এটাই প্রকাশ্য সাফল্য।’ (সুরা জাসিয়া: ৩০)
আল্লাহর দয়া ও করুণা সম্পূর্ণ অতুলনীয় ও ভিন্ন মাত্রার। যখন আল্লাহ বলছেন যে তিনি একজন বিশ্বাসীকে তার রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন, তার মানে করাবেনই।
৭. বিজয়ী করবেন
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব। (সুরা রুম: ৪৭ ) উক্ত আয়াতে কারিমায় এ কথাই ব্যক্ত হয়েছে যে, আল্লাহ মুমিনদেরকে সাহায্য ও বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তা এমন এক প্রতিশ্রুতি যার অন্যথা হবে না। যখন আমরা আমাদের ঈমানকে পরিপূর্ণ করব, আল্লাহ আমাদের বিজয় দান করবেন। কিন্তু আমাদের এক্ষেত্রে ধৈর্য্যধারণ করতে হবে। কেননা বিজয় লাভের পূর্বে একজন মুমিনকে অনেক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি সাহায্য করব রাসুলদের ও মুমিনদেরকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে।’ (সুরা গাফির: ৫১)
আরও পড়ুন: ফজিলত পূর্ণ ৭০টি ছোট আমল
৮. গুনাহগুলো মুছে দেবেন
আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব।’ (সুরা আনকাবুত: ৭)
আল্লাহ মহামহিম, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন, তিনি কিছু মানুষকে এত ভালোবাসেন যে তিনি তাদের গুনাহকে আড়াল করে থাকেন। সাফওয়ান ইবনে মুহরিজ আল-মাজেনি রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি ইবনে ওমরের সাথে তার হাত ধরে হাঁটছিলাম, হঠাৎ এক ব্যক্তি সামনে এলো। অতঃপর সে বলল: ‘নাজওয়া’ (গোপন কথা) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.)-কে কী বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তাআলা মুমিনের নিকটবর্তী হবেন অতঃপর তার ওপর পর্দা ফেলে তাকে ঢেকে নিবেন এবং বলবেন- মনে পড়ে অমুক পাপ, মনে পড়ে অমুক পাপ? সে বলবে- হ্যাঁ, হে আমার রব, অবশেষে সে যখন তার সকল পাপ স্বীকার করবে এবং নিজেকে মনে করবে যে, সে ধ্বংস হয়ে গেছে, আল্লাহ বলবেন- তোমার ওপর দুনিয়াতে এসব গোপন রেখেছি আজ আমি তা তোমার জন্য ক্ষমা করে দিচ্ছি। (বুখারি ও মুসলিম)
কাজেই আমাদের নিজেদের উচিৎ নিজেদের গুনাহের কথা গোপন রাখা, কারও নিকট তা প্রকাশ না করা, তাহলে আল্লাহও আমাদের গুনাহ গোপন রাখবেন।
৯. আল্লাহ ও মুমিন বান্দাদের ভালোবাসা প্রদান
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, পরম করুণাময় অবশ্যই তাদের জন্য (বান্দাদের হৃদয়ে) ভালবাসা সৃষ্টি করবেন।’ (সুরা মরিয়ম: ৯৬)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এর অর্থ দুনিয়ার মানুষের মধ্যে তার জন্য তিনি ভালবাসা তৈরি করেন। অন্য অর্থ হচ্ছে, তিনি নিজে তাকে ভালবাসেন, অন্য ঈমানদারদের মনেও ভালবাসা তৈরি করে দেন। আর আমরা তো এটাই চাই যে একজন মুমিন বান্দা আমাদের ভালোবাসবে, কাফের-ফাসেকের ভালোবাসা ও নৈকট্য আমরা চাই না।
১০. কোনো প্রচেষ্ট বৃথা যাবে না
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না। (সুরা কাহাফ: ৩০)
কখনো এমনও হয়, কোন কাজ করতে করতে হঠাৎ আপনার মনে হতে পারে আপনি সময় ও শ্রম অপচয় করছেন। ধরুন, আপনি কাউকে ইসলামের দিকে আহবান করছেন, কিন্তু কেউ শুনছে না, কিংবা আপনি আপনার দাওয়াহর ফলে কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন না, আপনার সেক্ষেত্রে জেনে রাখা উচিত, আপনার পুরষ্কার আল্লাহর কাছে, আর আল্লাহর কাছে আপনার কোনো শ্রম বৃথা যাবে না, আর সংখ্যা দিয়ে সফলতা বিচার করবেন না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন আমাকে ঊর্ধাকাশে ভ্রমণ করানো হয়েছিল- আমি একজন নবীকে দেখলাম যার অনুসারী ১০ জন, একজন নবীকে দেখলাম যার অনুসারী পাঁচ জন, একজন নবীকে দেখলাম দুই জন অনুসারী নিয়ে দণ্ডায়মান, আর কাউকে দেখলাম এক জন অনুসারী, আর কোনো নবীর একজনও অনুসারী ছিল না’। কিন্তু, এই নবীগণ কেউই তাদের মিশনে ব্যর্থ হননি, বরং লোকেরা নিজেরাই বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেছে। বাস্তব কথা হচ্ছে, আমরা যা অর্জনের যোগ্যতা রাখি, আল্লাহ আমাদেরকে তার চেয়েও বেশি দান করে থাকেন।
আরও পড়ুন: খাবার গ্রহণে রাসুল (সা.) এর সুন্নত
১১. শয়তান হতে সুরক্ষা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তার (শয়তানের) আধিপত্য চলে না তাদের ওপর, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে।’ (সুরা নাহাল: ৯৯)
১২. অবিচলতা ও দৃঢ়তা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলছেন, ‘আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন পার্থিবজীবনে এবং পরকালে এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন।’ (সুরা ইবরাহিম: ২৭)
১৩. একটি শুভ সমাপ্তি
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ এবং মনোরম প্রত্যাবর্তণস্থল।’ (সুরা রাদ: ২৯)
আল্লাহ তাআলা আরও বলছেন যখন মুসা (আ.) লোকদের বলেছিলেন, ‘…নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকিদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।’ (সুরা আরাফ: ১২৮) জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।’ (সুরা আল মুজাদিলা: ২২)
১৪. নিশ্চিত রক্ষা করবেন
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর আমি বাঁচিয়ে নেই নিজের রাসুলগণকে এবং তাদেরকে যারা ঈমান এনেছে এমনিভাবে। ঈমানদারদের বাঁচিয়ে নেওয়া আমার দায়িত্বও বটে।’ (সুরা ইউনুস: ১০৩)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনিভাবে বিশ্বাসীদের মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৮)
আরও পড়ুন: মসজিদে বসে থাকলেই ৭ প্রতিদান
১৫. হেদায়াত করা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘অবশ্য যেসব লোক ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন তাদের পালনকর্তা, তাদের ঈমানের মাধ্যমে। এমন সুসময় কানন-কুঞ্জের প্রতি যার তলদেশে প্রবাহিত হয় প্রস্রবণসমূহ।’ (সুরা ইউনুস: ৯)
পবিত্র কোরআনের সুরা ফাতিহা পড়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর হেদায়াতের দোয়া করি— ‘আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।’ (সুরা ফাতিহা: ৫)
১৬. বরকত প্রদান
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেজগারি অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নেয়ামতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।’ (সুরা আরাফ: ৯৬)
একজন পাপী তার পাপের কারণে এই দুনিয়ার অনেক বরকত লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। আবার সমষ্টিগতভাবে কোনো জনপদের লোকেরা যদি অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে তখন তাদের থেকে বরকত ছিনিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু যেখানে ঈমান ও সৎকর্ম বর্তমান, সেখানে বরকত বর্তমান। আর শেষ সময়ে ঈসা (আ.) যখন আগমন করবেন সে সময়টি হবে বরকতে পরিপূর্ণ।
১৭. শান্তি ও নিরাপত্তা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই সুপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা আনআম: ৮২)
১৮. ক্ষমা-মাগফেরাত
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহান প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ (সুরা মায়েদা: ৯)
আরও পড়ুন: মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ১৭ আমল
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। (সুরা জুমার: ৫৩)
১৯. পূর্ণমূল্য প্রদান
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তাদের প্রাপ্য পরিপুর্ণভাবে দেওয়া হবে। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।’ (সুরা আলে ইমরান: ৫৭)
অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে আপনার প্রতিটি কাজের মূল্য প্রদান করবেন, খুঁটিনাটি কিছুই বাদ যাবে না। কোনো লস নেই। ‘যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না।’ (সুরা আর রহমান: ৬০)
২০. কোনো ভয়-অবসাদ নেই
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ করেছে, নামাজ প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং জাকাত দান করেছে, তাদের জন্যে তাদের পুরষ্কার তাদের পালনকর্তার কছে রয়েছে। তাদের কোনো শঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৭৭)
২১. অন্ধকার হতে আলোতে আনয়ন
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরি করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোজখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।’ (সুরা বাকারা: ২৫৭)
যখন একজন মানুষকে ইসলামের আলো প্রদান করা হয়, আল্লাহ সেই ব্যক্তি ভালো ও মন্দের মাঝে পার্থক্য করার ক্ষমতা প্রদান করেন, হক ও বাতিল, সত্য ও মিথ্যা, ন্যায় আর অন্যায়ের মাঝে সে পার্থক্য করতে পারে।
২২. মুসলমানদের ওপর কাউকে জয়ী হতে দেবেন না
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং কিছুতেই আল্লাহ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না।’ (সুরা নিসা: ১৪১)
রাসুলুল্লাহ (স.) একটি হাদিসে বলেছেন, ‘ইসলাম হচ্ছে সর্বদা সবকিছুর উপরে, আর এর উপর কিছু নেই’ অর্থাৎ কোনো শক্তিই ইসলামকে দমিয়ে রাখতে পারে না। (বায়হাকি)
আমরা যদি এই প্রতিশ্রুতির বিপরীত দৃশ্য দেখি আর দেখি অমুসলিমরা মুসলিমদের উপরে বিভিন্ন দিকে উঁচু অবস্থানে আছে তাহলে আমাদের আল্লাহর ওয়াদা সম্পর্কে সন্দিহান হওয়া উচিত নয়, বরং আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিত, আমাদের ঈমানের উপর সন্দিহান হওয়া উচিত, আমাদের প্রশ্ন করা উচিত আমরা কি খাঁটি মুমিন না এর বিপরীত।
২৩. সুরক্ষা
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের থেকে শত্রুদেরকে হটিয়ে দেবেন। আল্লাহ কোনো বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা হজ: ৩৮)
২৪. -হায়াতে তাইয়্যেবা প্রদান
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সেই ঈমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।’ (সুরা নাহাল: ৯৭)
হাদিসে এসেছে, ‘একজন মুমিনের উদাহরণ একটি শস্যের মতো, থেকেথেকে বাতাস তাকে দোলায়। তদ্রুপ একের পর এক মসিবত অবিরাম অস্থির করে রাখে মুমিনকে। পক্ষান্তরে একজন মুনাফিকের উদাহরণ একটি দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়, দুলে না, কাত হয়েও পড়ে না, যতক্ষণ না শেকড় থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয় তাকে।’ (সহিহ মুসলিম: ৫০২৪)
হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘একজন মুমিনের ব্যাপারটি সত্যি আশ্চর্জনক, ভালো কিছু অর্জিত হলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, যা তার জন্য মঙ্গলজনক, এতে কৃতজ্ঞতার সওয়াব অর্জিত হয়। আর মসিবতে পতিত হলে সে ধৈর্যধারণ করে, তাও তার জন্য কল্যাণকর, এতে ধৈর্যের সওয়াব লাভ হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৩১৮)
২৫. দুনিয়াতে কর্তৃত্ব দান
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্বদান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।’ (সুরা নুর: ৫৫)
হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পৃথিবীকে আমার জন্য সংকুচিত করে দিয়েছেন (নিকটবর্তী করে দেওয়ার অর্থে) এবং আমাকে এর পূর্ব ও পশ্চিম সীমানা দেখানো হয়েছে। আর যতটুকু আমার জন্য সংকুচিত করা হয়েছে, ততটুকুতে অচিরেই আমার উম্মতের রাজত্ব বিস্তার লাভ করবে।’ (সুনানে আবি দাউদ: ৪২৫২)
আরও পড়ুনঃ মানুষকে অভিশাপ দেওয়ার কঠিন পরিণতি