আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মিষ্টি আলু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে ভরপুর এক সুপারফুড । সারা বছরই বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি পাওয়া যায়। আবহাওয়া ও আপনি কোন অঞ্চলে আছেন তার ওপর নির্ভর করে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। শীতের এই সময়ে আমাদের দেশে প্রচুর মিষ্টি আলু পাওয়া যায়।
লালচে বেগুনি রঙের এই আলু দিয়ে সবজির বিভিন্ন ধরন রান্না করা যায়। কেউ সেদ্ধ করে, কেউ পুড়িয়ে খেতেও পছন্দ করেন। কিন্তু মিষ্টি আলু কি সত্যি উপকারী? মিষ্টি স্বাদের কারণে কি এটি অল্প করে খেতে হবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক মিষ্টি আলুর পুষ্টি, স্বাস্থ্য উপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে-
মিষ্টি আলুর পুষ্টি
ইউএসডিএ- এর তথ্য অনুসারে, ১০০ গ্রাম মিষ্টি আলুতে থাকে মাত্র ৮৬ ক্যালোরি, ০.১ গ্রাম ফ্যাট। মিষ্টি আলু ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ খনিজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এছাড়া মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, মেঙ্গানিজ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও মিনারেল।
মিষ্টি আলুর স্বাস্থ্য উপকারিতা
পুষ্টিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মিষ্টি আলুকে স্বাস্থ্যকর সবজি বলে উল্লেখ করেন। এটি প্রতিদিনের খাবারে যোগ করার কথাও বলেন। সেলিব্রেটি পুষ্টিবিদ রুজুতা দিবাকর বলেন, ‘আঁশযুক্ত এই সবজি সবার জন্যই নিরাপদ, বিশেষ করে যারা স্থুলতা, পিসিওডি, ডায়াবেটিস ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছেন, তারাও খেতে পারবেন। মিষ্টি আলু দিয়ে দ্রুত বিভিন্ন খাবারের পদ তৈরি করা যায়।’ মিষ্টি আলু মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে ভরপুর এক সুপারফুড। জেনে নিন মিষ্টি আলুর কিছু চমৎকার উপকারিতার কথা-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে এমন খাবার খুঁজছেন? মিষ্টি আলু হতে পারে সহজ সমাধান। মিষ্টি আলুতে থাকা ক্যারোটিনয়েড এবং অ্যান্থোসায়ানিন নামক দুটি উপাদান আমাদের শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যালের হাত থেকে বাঁচায় এবং সেইসঙ্গে বাড়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
এটি আমাদের ত্বক ও চুলের জন্যও উপকারী। পুষ্টিবিদ রূপালী দত্ত বলেন, ‘মিষ্টি আলুর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষমতা শুধুমাত্র এর ক্যারোটিনয়েডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি অ্যান্থোসায়ানিনের একটি বড় উৎস, যা বেগুনি রঙের ফল ও সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়।’
আরও পড়ুনঃ চালতার অসাধারণ পুষ্টিগুণ
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
মিষ্টি স্বাদের বলে ডায়াবেটিস রোগীরা মিষ্টি আলু এড়িয়ে যাবেন, এমনটাই মনে হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। মিষ্টি আলুর গ্লাসেমিক ইনডেক্স কম থাকে এবং থাকে প্রচুর ফাইবার। এর স্টার্চি কার্বোহাইড্রেট রক্ত প্রবাহে সুগারের মাত্রাও ধীর করে দেয়। আমেরিকান ডায়াবেটিস সোসাইটির তথ্য অনুসারে, ‘ডায়াবেটিসের জন্য মিষ্টি আলু এক ধরনের সুপার ফুড। স্টার্চি এই সবজি ভিটামিন এ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ। সেইসঙ্গে এতে আরও আছে ভিটামিন সি এবং পটাসিয়াম।’
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ মিষ্টি আলু আমাদের চোখ ভালো রাখার ক্ষেত্রেও সমান কার্যকরী। এই আলুতে থাকে বিটা ক্যারোটিন। এই উপাদান আমাদের চোখকে সূর্যের অতিবেগুনী আলোকরশ্মি থেকে রক্ষা করে। তাই দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে নিয়মিত মিষ্টি আলু খেতে পারেন।
হজমে সহায়ক
মিষ্টি আলু নিয়মিত খেলে হজমের সমস্যা দ্রুত সেরে যায়। রুজুতা দিবাকর বলেন, ‘মিষ্টি আলুতে থাকা মিনারেল ও ভিটামিন বি পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।’ হজম সংক্রান্ত নানা সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের জন্য অন্যতম কার্যকরী খাবার হলো এই মিষ্টি আলু।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
যারা ওজন কমাতে চাইছেন, তাদের জন্য উপকারী একটি খাবার হতে পারে মিষ্টি আলু। এই সবজিতে থাকে খুবই অল্প ক্যালোরি এবং প্রচুর ফাইবার। যে কারণে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখলেও ওজন বৃদ্ধির ভয় থাকে না। এটি নাস্তার পদ হিসেবে চমৎকার হতে পারে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
মিষ্টি আলুতে আছে অ্যান্টি-ক্যানসার উপাদান, যা ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায় মিষ্টি আলু। এ আলুতে থাকে বিটা-ক্যারোটিন। এটি এক প্রকার ভিটামিন এ। এই বিটা-ক্যারোটিন দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি দেহে ফ্রি র্যাডিকেলের দ্বারা তৈরি হওয়া সেলুলার ক্ষতির ঝুঁকি কমায়।
আরও পড়ুনঃ বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়
মিষ্টি আলু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা কোলাজেন উৎপাদনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। কোলাজেন হলো সেই প্রোটিন যা ত্বককে দৃঢ়, মসৃণ এবং স্থিতিস্থাপক রাখে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের একটি সমীক্ষা অনুসারে, ২০-৭০ বছর বয়সী ১,১২৫ জন অংশগ্রহণকারীর (যাদের মধ্যে ৯৫% নারী) ওপর করা ১৯টি গবেষণার পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে, হাইড্রোলাইজড কোলাজেন প্লাসিবো চিকিৎসার তুলনায় ত্বকের হাইড্রেশন, স্থিতিস্থাপকতা এবং বলিরেখা কমিয়েছে। মিষ্টি আলু নিয়মিত খেলে তা ত্বকের গঠনে সহায়তা করে এবং বলিরেখা কমাতে কাজ করে।
ইউভি ক্ষতি থেকে রক্ষা করে
মিষ্টি আলুর কমলা রঙ বিটা-ক্যারোটিন থেকে আসে, একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত করে। ত্বক মেরামত এবং পুনর্জন্মের জন্য ভিটামিন এ অপরিহার্য। বিটা-ক্যারোটিন ত্বককে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে, রোদে পোড়া এবং দীর্ঘমেয়াদী ত্বকের ক্ষতির ঝুঁকি কমায়। খাদ্যতালিকায় মিষ্টি আলু যোগ করে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাবের বিরুদ্ধে ত্বকের প্রতিরক্ষা বাড়াতে পারেন।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
মিষ্টি আলুতে থাকা ভিটামিন এ এবং বিটা-ক্যারোটিন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ ত্বকের কোষের পরিবর্তন বৃদ্ধি করে, যা কালো দাগ এবং পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। খাবারের তালিকায় নিয়মিত মিষ্টি আলু রাখলে তা ত্বকের উজ্জ্বল আভা বৃদ্ধি করে।
আরও পড়ুনঃ শালগম খাওয়ার উপকারিতা
ত্বককে হাইড্রেট করে এবং পুষ্টি দেয়
মিষ্টি আলুতে প্রচুর পানি থাকে, যা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, মিষ্টি আলুতে প্রচুর পটাসিয়াম রয়েছে, যা শরীরে তরল মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় মিষ্টি আলু রাখলে তা ত্বককে প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল থাকার জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রেশন প্রদান করতে পারে।
প্রদাহ কমায়
আপনি কি জানেন যে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ এবং জ্বালার কারণ হতে পারে? অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের উচ্চ উপাদানের কারণে মিষ্টি আলুতে প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই যৌগগুলো প্রদাহ শান্ত করতে এবং স্বাস্থ্যকর ত্বককে উন্নীত করতে সহায়তা করে। মাল্টিডিসিপ্লিনারি ডিজিটাল পাবলিশিং ইনস্টিটিউট (এমডিপিআই) গবেষণা অনুসারে, মিষ্টি আলুর নির্যাস প্রদাহের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত মিষ্টি আলু খেলে তা ত্বকের ফ্লেয়ার-আপ কমাতে সাহায্য করে।
মিষ্টি আলু খাওয়ায় সতর্কতা
পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন বলেন, মিষ্টি আলু অনেক বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। বিশেষত অনেকেই খোসাসহ পুড়িয়ে মিষ্টি আলু খান। এ ধরনের অতিরিক্ত পুড়ে যাওয়া খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। বেশি পরিমাণে মিষ্টি আলু খেলে বদহজম ও পেটে ব্যথা হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ
❒ কাউ ফলের পুষ্টি ও অবাক করা ঔষধি গুণাগুণ
❒ তালের শাঁস কেন খাবেন জানুন পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
❒ মটরশুঁটির যত উপকারিতা
❒ শিমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
মিষ্টি আলুতে প্রচুর পটাসিয়াম রয়েছে। এতে হাইপারকেলিমিয়া অর্থাৎ রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যে রোগীদের পটাসিয়াম খাওয়ায় বিধিনিষেধ রয়েছে, বিশেষ করে কিডনি রোগীদের খাদ্যতালিকায় মিষ্টি আলু কম রাখাই ভালো।
এছাড়া হৃদযন্ত্রের সমস্যা আছে এমন রোগীদের অত্যাধিক পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ঠিক নয়। শরীরে পটাসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট, যা কিডনিতে জমে পাথর তৈরির কারণ হতে পারে। তাই বেশি পরিমাণে মিষ্টি আলু খাওয়া ঠিক নয়, যাদের কিডনিতে পাথর আছে তাদের খাদ্যতালিকা থেকে মিষ্টি আলু বাদ দেওয়াই ভালো।
❑ ভেষজ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূরসহ পালংশাকের ১০ উপকারিতা