আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: মার্ক জাকারবার্গ: ফেসবুক দিয়ে বিশ্বকে সংযুক্ত করেছেন যিনি । মার্ক জাকারবার্গ হলেন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগের অন্যতম পথপ্রদর্শক, যিনি ফেসবুক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পুরো বিশ্বের মানুষকে একযোগে যুক্ত করেছেন। তার উদ্ভাবন সামাজিক যোগাযোগের ধরণ পাল্টে দিয়েছে।
মার্ক জাকারবার্গের শৈশব ও শিক্ষা:
মার্ক ১৯৮৪ সালের ১৪ মে নিউ ইয়র্কের ডোয়্যারসে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে তার আগ্রহ ছিল। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ২০০৪ সালে পড়াশোনা ছেড়ে ফেসবুকের ওপর পূর্ণ মনোযোগ দেন।
মার্ক জাকারবার্গের ক্যারিয়ার:
২০০৪ সালে ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন, যা শুরু হয় একটি ক্যাম্পাস-ভিত্তিক সামাজিক নেটওয়ার্ক হিসেবে, পরে বিশ্বব্যাপী বৃহত্তম সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।
মার্ক জাকারবার্গের প্রযুক্তিতে অবদান:
১। ফেসবুকের জন্ম (২০০৪):
২০০৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় মার্ক ফেসবুক তৈরি করেন। এটি শুরুতে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও পরে তা বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগের নতুন যুগ শুরু করে।
২। সোশ্যাল মিডিয়া বিপ্লব:
জাকারবার্গের হাত ধরে “সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং” হয়ে ওঠে দৈনন্দিন জীবনের অংশ। মানুষ যেভাবে সংযোগ তৈরি করে, তথ্য শেয়ার করে ও যোগাযোগ রাখে— সবকিছু বদলে যায় ফেসবুকের মাধ্যমে।
৩। ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম চালু (২০০৭):
ডেভেলপারদের জন্য API উন্মুক্ত করে ফেসবুক প্ল্যাটফর্ম চালু করেন, যার মাধ্যমে হাজারো অ্যাপ তৈরি হয় — যেমন গেম, কুইজ, মেসেজিং ইত্যাদি। এটি সোশ্যাল অ্যাপ ইকোসিস্টেম তৈরি করে।
৪। নিউজ ফিড (২০০৬):
নিউজ ফিড চালু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল-ভিত্তিক তথ্য গ্রহণের ধারাকে জনপ্রিয় করেন। এটি মানুষের সংবাদ, আপডেট ও আগ্রহের জগতে ফেসবুককে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
৫। ফেসবুক মেসেঞ্জার ও কমিউনিকেশন রেভলিউশন:
২০১১ সালে ফেসবুক মেসেঞ্জার আলাদা অ্যাপ হিসেবে চালু হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়।
৬। ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ (২০১২):
ছবিভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া ইনস্টাগ্রামকে মাত্র ১ বিলিয়নে কিনে নিয়ে তা আরও জনপ্রিয় করে তোলেন। আজ এটি তরুণদের কাছে ফেসবুকের বিকল্প মাধ্যম।
৭। হোয়াটসঅ্যাপ অধিগ্রহণ (২০১৪):
১৯ বিলিয়নে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপের মালিক হন, যা গ্লোবাল কমিউনিকেশনকে নতুন মাত্রা দেয়।
৮। ওকুলাস VR অধিগ্রহণ (২০১৪):
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR)-এর ভবিষ্যত বুঝে ওকুলাস ভিআর কিনে নেন। এর মাধ্যমে ফেসবুকের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় মেটাভার্স ধারণা যুক্ত হয়।
৯। ফেসবুকের AI ও ডাটা বিশ্লেষণ:
ফেসবুকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে কনটেন্ট ফিল্টার, স্প্যাম নিয়ন্ত্রণ, রিকমেন্ডেশন ইঞ্জিন চালু করেন। AI ব্যবহারে ফেসবুক এগিয়ে।
১০। মেটা রিব্র্যান্ডিং (২০২১):
ফেসবুক কর্পোরেশনের নাম পরিবর্তন করে ‘Meta’ রাখা হয়, যার লক্ষ্য ভবিষ্যতের ইন্টারনেট — অর্থাৎ মেটাভার্স গঠন করা। এটি প্রযুক্তির দিক পরিবর্তনের সাহসী পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন:
❒ স্টিভ জবস: ইনোভেশনের প্রতীক ও অ্যাপলের জনক
❒ অ্যালান ট্যুরিং: কম্পিউটার বিজ্ঞানের নীরব নায়ক
মার্ক জাকারবার্গের ব্যক্তি জীবন ও স্বীকৃতি:
মার্কের ব্যক্তিগত জীবন সাধারণ, তিনি ২০১২ সালে প্রিসিলা চ্যানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সামাজিক দায়িত্বে সক্রিয়, প্রিসিলা চ্যান ফাউন্ডেশন চালান। বিশ্বের অন্যতম তরুণ ধনী উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
মার্ক জাকারবার্গের বর্তমান জীবন:
মার্ক এখনো ফেসবুকের CEO পদে আছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ ও প্রযুক্তির উন্নয়নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুক পৃথিবীর মানুষের যোগাযোগের ধরন বদলে দিয়েছে। তার উদ্ভাবন সামাজিক নেটওয়ার্কিংকে বিশ্বব্যাপী রূপ দিয়েছে, যা ব্যক্তিগত থেকে ব্যবসা, রাজনীতি পর্যন্ত ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। মার্ক জাকারবার্গের প্রতিটি পদক্ষেপ প্রযুক্তির দুনিয়ায় প্রভাব ফেলেছে। তিনি শুধু ফেসবুক নয়, সমগ্র ডিজিটাল জীবনযাত্রাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।
❑ টেক হিরোজ থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: বিল গেটস: প্রযুক্তি-দানশীলতা ও মানবতার পথিকৃৎ