আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মানুষের মুখগহ্বর ও অন্ত্রে লুকিয়ে থাকা একধরনের অণুজীব আবিষ্কার । এ অণুজীব আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা। এই অণুজীবের নাম দেওয়া হয়েছে অবেলিস্ক। গোলাকার আরএনএ অণু দিয়ে তৈরি এগুলো, নিজেরাই নিজেদের প্রোটিন অণু তৈরি করতে পারে।
এই গবেষণা বিজ্ঞানীদের জন্য জীবনের নতুন এক অধ্যায় উন্মোচন করেছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে এ সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি রিভিউয়ের জন্য নেচার ও সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়।
অবেলিস্ক অণুজীবটির অবস্থান ভাইরাস ও ভাইরয়েডের মাঝখানে কোথাও বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। এগুলোর গঠন ভাইরয়েডের মতো বৃত্তাকার এক সূত্রক (Single-stranded) আরএনএর মতো। কিন্তু এতে আবার ভাইরাসের মতো নিজস্ব প্রোটিন তৈরির জিন রয়েছে। অবেলিস্ক-দেহের এ প্রোটিনের নাম অবলিন।
অবলিন প্রোটিনগুলো এত অদ্ভুত যে এদের সঙ্গে আমাদের চেনাজানা কোনো প্রোটিনের মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। গবেষকরা প্রায় ৩০ হাজার ভিন্ন ধরনের আরএনএ চক্র আবিষ্কার করেছেন অবেলিস্কের দেহে। প্রতিটি আরএনএতে প্রায় ১ হাজার ক্ষারের উপস্থিতি দেখেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুনঃ প্রথমবারের মতো কৃত্রিম কর্নিয়ার সফল ট্রান্সপ্লান্ট হলো ইংল্যান্ডে
গবেষকদের বিশ্বাস, প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন আরএনএ চক্র স্বতন্ত্র অবেলিস্কের প্রতিনিধিত্ব করে। আগের কোনো জিন ডেটাবেসে এমন কিছু দেখা যায়নি।গবেষণায় দেখা গেছে, অবেলিস্ক মানবদেহে বিরল নয়। মুখগহ্বরের মাইক্রোবায়োমের প্রায় ৫০% ডেটাসেটে এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমের প্রায় ৭% ডেটাসেটে পাওয়া গেছে এটি। মুখগহ্বরের দাঁতের প্লাকের ব্যাকটেরিয়া স্ট্রেপটোককাস স্যাঙ্গুইনিস (Streptococcus sanguinis)-এ অবেলিস্কের উপস্থিতি দেখা গেছে গবেষণায়।
গবেষকরা এখনো নিশ্চিত নন যে অবেলিস্ক বন্ধু, শত্রু, নাকি নিছক এক নিরীহ অণুজীবন। এটা পরজীবী হলে হোস্ট (আশ্রয়দানকারী) কোষের ক্ষতি করতে পারে। ফলে বিঘ্নিত হতে পারে মানবদেহের মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য। আর যদি এটা উপকারী হয়, তাহলে মাইক্রোবায়োমের স্থিতিশীলতা এবং বৈচিত্র্যে অবদান রাখতে পারে।
আরও পড়ুনঃ
❒ স্টেম সেল প্রতিস্থাপনে ফিরে পাওয়া যাবে চোখের দৃষ্টি
❒ যুক্তরাজ্যে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের প্রথম ওভারিয়ান ক্যান্সারের ভ্যাকসিন
❒ ম্যালেরিয়ার নতুন ওষুধ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা
❒ বিশ্বে প্রথম ফুসফুস ক্যানসার ভ্যাকসিনের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু
এতে রোগ প্রতিরোধে অবেলিস্ককে কাজে লাগানোর নতুন দুয়ারও খুলে যেতে পারে। অবেলিস্কের প্রকৃতি ও কার্যকারিতা বুঝতে গবেষকরা স্ট্রেপটোককাস স্যাঙ্গুইনিস (Streptococcus sanguinis) ব্যাকটেরিয়ার ওপর গবেষণা শুরু করেছেন। এটি ল্যাবরেটরিতে সহজে তৈরি করা যায়। ব্যাকটেরিয়াটি যেহেতু অবেলিস্ককে ধারণ করে, তাই অবেলিস্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সাহায্য করছে এ ব্যাকটেরিয়া।
অবেলিস্ক আবিষ্কার জীবনের সংজ্ঞা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলে ধরেছে। এগুলো হয়তো ‘সেলফিশ জিন’-এর মতো নিরবে আমাদের জৈব বাস্তুতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। অবেলিস্ক খারাপ না ভালো, সে সম্পর্কে জানতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
সূত্র: দ্য কনভার্সেশন, ন্যাচার, সায়েন্স
❑ চিকিৎসা বিজ্ঞান থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ মানুষের মস্তিষ্কের কাজ করার গতি পরিমাপের দাবি বিজ্ঞানীদের