আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ: মানুষের জীবনে জনপ্রিয় এআই প্রযুক্তির ব্যবহার ও গুরুত্ব । বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনে AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তি মানুষের সাহায্য করছে। এখানে বিশ্বের কিছু সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ AI সিস্টেমের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো:
১। চ্যাটজিপিটি (ChatGPT)
বিবরণ: চ্যাটজিপিটি একটি চ্যাটবট মডেল, যা OpenAI দ্বারা তৈরি। এটি মানুষের মতো কথোপকথন করতে সক্ষম, প্রশ্নের উত্তর দেয়, তথ্য বিশ্লেষণ করে, এবং লেখালেখি, ইমেইল, বা কনটেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করে। চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রায় বাস্তবসম্মত আলাপচারিতা চালাতে পারে, এবং বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিতে পারে।
ব্যবহার: এটি লেখালেখি, কোডিং, গবেষণা, শিক্ষাদান, কাস্টমার সাপোর্ট, এবং আরও অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়। এটি ব্লগ লেখক, শিক্ষার্থী, লেখক, এবং পেশাদারদের জন্য একটি শক্তিশালী টুল।
বিশেষত্ব: এটি ভাষা প্রক্রিয়াকরণ, তথ্য বিশ্লেষণ, এবং মানব-কম্পিউটার ইন্টারঅ্যাকশনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ। এর প্রতিক্রিয়া, লেখার ধরন এবং বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বাস্তবসম্মত।
২। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট (Google Assistant)
বিবরণ: গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট একটি ভার্চুয়াল ব্যক্তিগত সহকারী যা গুগলের তৈরি। এটি স্বাভাবিক ভাষায় মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে এবং ব্যবহারকারীর বিভিন্ন কাজ যেমন, অনুসন্ধান, রিমাইন্ডার সেট করা, মিউজিক চালানো, ঘরোয়া ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি করতে পারে।
ব্যবহার: এটি স্মার্টফোন, স্মার্টহোম ডিভাইস, গুগল হোম, গুগল নেস্ট, এবং অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসে ব্যবহার করা হয়।
বিশেষত্ব: গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট মানুষের ভাষা বুঝতে এবং সেগুলোর ভিত্তিতে কাজ করতে সক্ষম। এটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় এবং গুগল ইকোসিস্টেমের মধ্যে সমন্বিত।
৩। সিরি (Siri)
বিবরণ: সিরি অ্যাপল দ্বারা তৈরি একটি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট। এটি আইফোন, আইপ্যাড, ম্যাক, অ্যাপল ওয়াচ, অ্যাপল টিভি, এবং অন্যান্য অ্যাপল ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। সিরি বিভিন্ন কাজ যেমন, ফোন কল করা, টেক্সট মেসেজ পাঠানো, অ্যাপ্লিকেশন খুলে দেওয়া ইত্যাদি করতে পারে।
ব্যবহার: সিরি সাধারণত ডিভাইসের মধ্যে খুব সহজে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত যখন হাতে কোনো কাজ থাকে না।
বিশেষত্ব: সিরি অত্যন্ত সহজ ও ব্যবহারিক। এর ব্যবহারকারীরা সাধারণত হাত না ব্যবহার করে কথোপকথন করার মাধ্যমে যেকোনো কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে পারেন।
৪। অ্যালেক্সা (Alexa)
বিবরণ: অ্যালেক্সা, অ্যামাজন দ্বারা তৈরি একটি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট যা অ্যামাজনের স্মার্ট ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে। এটি স্মার্টহোম ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ, মিউজিক চালানো, আলোকসজ্জা নিয়ন্ত্রণ করা, খবর বা আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য জানানো ইত্যাদি কাজ করতে পারে।
ব্যবহার: অ্যালেক্সা প্রধানত স্মার্ট স্পিকার (যেমন, Amazon Echo) এবং স্মার্ট ডিভাইসের মধ্যে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষত্ব: এটি অডিও-ভিত্তিক আভ্যন্তরীণ যোগাযোগে ব্যবহারকারীকে খুব সহজ এবং দ্রুত পরিষেবা দেয়। এটি পরিবারের অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে।
৫। টেসলা অটোপাইলট (Tesla Autopilot)
বিবরণ: টেসলা অটোপাইলট হল একটি স্বয়ংক্রিয় ড্রাইভিং সিস্টেম, যা টেসলার গাড়িতে ব্যবহার হয়। এটি গাড়ির গতি, দিক, ব্রেকিং ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম এবং রাস্তা শনাক্ত করে, গাড়ি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে।
ব্যবহার: এটি স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ড্রাইভিং এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশেষত্ব: এটি সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং গাড়ির কার্যক্ষমতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
৬। ওয়াটসন (IBM Watson)
বিবরণ: IBM Watson একটি শক্তিশালী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্ল্যাটফর্ম, যা তথ্য বিশ্লেষণ, ভাষা প্রক্রিয়াকরণ এবং মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে বিপণন, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করে।
ব্যবহার: এটি বিভিন্ন খাতে যেমন স্বাস্থ্য, ফাইনান্স, গ্রাহক সেবা, এবং গবেষণায় ব্যবহৃত হয়।
বিশেষত্ব: এটি বড় ডেটা বিশ্লেষণ এবং জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। যেমন, স্বাস্থ্যসেবায় রোগ নির্ণয়ে এটি ব্যাপক ব্যবহার করা হয়।
৭। স্প্যাম ফিল্টারিং (Spam Filtering)
বিবরণ: স্প্যাম ফিল্টারিং একটি AI প্রযুক্তি যা ইমেইল, মেসেজিং সিস্টেম, এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অপ্রাসঙ্গিক বা ক্ষতিকর তথ্য (স্প্যাম) সনাক্ত করে। এটি আমাদের ইনবক্স পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
ব্যবহার: গুগল, ইয়াহু, এবং অন্যান্য ইমেইল সেবা প্রদানকারীরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
বিশেষত্ব: এটি ব্যবহারকারীর ইনবক্সে আসা অপ্রয়োজনীয় বা বিপজ্জনক ইমেইল থেকে রক্ষা করে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
৮। ফেস রেকগনিশন (Face Recognition)
বিবরণ: ফেস রেকগনিশন হল একটি প্রযুক্তি যা মানুষের মুখের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করে এবং তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে। এটি ছবি বা ভিডিওর মাধ্যমে মানুষের মুখ শনাক্ত করতে পারে।
ব্যবহার: এটি সিকিউরিটি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, স্মার্টফোন আনলক করার জন্য বা পাবলিক স্পেসে অপরাধীদের শনাক্ত করতে।
বিশেষত্ব: এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এটিকে ব্যবহার করছে।
আরও পড়ুন:
❒ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ‘বিপ্লব’ ঘটাবে এআই মডেল
❒ পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতার সন্ধান দিল এআই
❒ সামাজিক চ্যাটবট মানুষের একাকীত্ব ও উদ্বেগ কমাতে পারে
❒ গুগলের জেমিনাই ১০ বছরের রহস্য ২ দিনে সমাধান করল
❒ এআই অ্যালগরিদম ‘মানুষের মতো’ শিখছে
❒ ডিপসিকের চেয়েও কার্যকর নতুন এআই আনার দাবি আলিবাবার
৯। ডিপ লার্নিং (Deep Learning)
বিবরণ: ডিপ লার্নিং মেশিন লার্নিংয়ের একটি সাবফিল্ড, যেখানে কম্পিউটার সিস্টেম একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে মানুষের মস্তিষ্কের মতো প্যাটার্ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেখে। এটি সাধারণত ছবি, শব্দ এবং ভাষার প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হয়।
ব্যবহার: এটি ভিডিও গেম, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি, চিকিৎসা ডায়াগনোসিস এবং এমনকি ক্রিমিনাল শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
বিশেষত্ব: ডিপ লার্নিং অতি জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং এটি অন্যান্য মেশিন লার্নিং মডেলের চেয়ে আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম।
এআই প্রযুক্তি বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে এবং এটি মানুষের জীবন সহজতর, দ্রুত এবং কার্যকরী করে তুলছে। এসব এআই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী এবং পরিশীলিত হয়েছে।
❑ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুন: ভয়েস-ইমেজ টেকনোলজিতে চ্যাটজিপিটির বিস্ময়কর চমক