আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মাইনক্রাফট গেম ৩০ কোটিরও বেশি বিক্রি হয়েছে । সুইডেনের ভিডিও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘মোজাং স্টুডিও’-এর তৈরি মাইনক্র্যাফট ৩০ কোটিরও বেশিবার বিক্রি হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বে প্রথমবারের মতো ৩০ কোটির বেশিবার বিক্রি হওয়া ভিডিও গেমের রেকর্ড গড়েছে মাইনক্রাফট। ২০১১ সালে বাজারে আসার এক যুগ পরও গেমারদের কাছে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে গেমটি। আজ ‘মাইনক্র্যাফট লাইভ ২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ রেকর্ড করার ঘোষণা দেন মোজাং স্টুডিওর প্রধান হেলেন চিয়াং।
মাইনক্র্যাফট মূলত ‘স্যান্ডবক্স’ ঘরানার ভিডিও গেম। স্যান্ডবক্স গেমে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ অর্জন করতে হয় না। আর তাই মাইনক্র্যাফট গেমে নিজের কল্পনা কাজে লাগিয়ে পছন্দের পেশা নির্বাচনের পাশাপাশি আশপাশের পরিবেশ বা প্রকৃতি নিজের ইচ্ছেমতো তৈরি করা যায়। চাইলে পরিকল্পনা করে পুরো শহরও তৈরি করা সম্ভব। গেমটির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো দেখে নেওয়া যাক।
আরও পড়ুনঃ ফেসবুকে খেলা যাবে নোকিয়ার জনপ্রিয় ‘স্নেক গেম’
বিশাল জগৎ
মাইনক্র্যাফটের জগৎ এতই বিশাল যে একজন গেমার যেকোনো একদিকে লক্ষ্য করে টানা দৌড়াতে থাকলে সীমানার শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ৬২ দিন। এই বিশাল দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে আছে নানা রহস্য আর বৈচিত্র্য। মাইনক্র্যাফটের দুনিয়া বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলোকে বলা হয় ‘বায়োম’। এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলের প্রবেশ করামাত্র পরিবেশ ও প্রকৃতির পরিবর্তন হয়ে যায়। গেমটির উল্লেখযোগ্য কিছু অঞ্চল হলো বন, মরুভূমি, সমতল, পাহাড়ি অঞ্চল, নদী ও সমুদ্র। এগুলোর মধ্যে আবার উপ-অঞ্চল (সাব-বায়োম) আছে। যেমন সমুদ্রের ভেতরই আছে উষ্ণ, বরফে ঢাকা বা গভীর সমুদ্র। বনের ভেতর আছে হিজল, ম্যানগ্রোভ থেকে শুরু করে বার্চ গাছের বন। মাইনক্র্যাফটে মোট ৬৪টি বায়োম আছে। বায়োমগুলোতে বাস করে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু। লামা শুধু পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। শ্বেতভালুক পাওয়া যায় বরফে ঢাকা সমুদ্রে। গরু ও মুরগি মোটামুটি সব বায়োমে পাওয়া যায়।
মাইনক্র্যাফটের মাইন
মাইনক্র্যাফট গেমে সবচেয়ে মজার কাজ হলো মাইনিং বা মাটি খুঁড়ে মূল্যবান পাথর সংগ্রহ করা। মাইনক্র্যাফটে মাটির নিচে থাকা খনিতে তামা, লোহা, সোনা ও হিরের মতো মূল্যবান পদার্থ রয়েছে। এগুলো তুলে আনার জন্য মাটির গভীরে সুড়ঙ্গ তৈরি করতে হয়। কাজটি একই সঙ্গে মজার এবং রোমাঞ্চকর। কারণ, খনির প্রতি পরতে পরতে আছে মৃত্যুর হাতছানি।
মাইনক্র্যাফটের গোপন জগৎ
মাইনক্র্যাফটে খনির গভীরে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির লাভা রয়েছে। মাইনিংয়ের সময় একবার লাভাতে পা পড়লে আর রক্ষা নেই। সঙ্গে সঙ্গে পুরো শরীরে আগুন ধরে যাবে। তবে এই বিপজ্জনক লাভারও বিশেষ একটি ব্যবহার আছে। লাভার ওপর পানি ছিটিয়ে দিলে তা শক্ত কালো পাথরে পরিণত হয়, যাকে বলা হয় ‘অবসিডিয়ান’। হিরের তৈরি কুড়াল ব্যবহার করে শক্তিশালী এই পদার্থগুলো ভাঙা যায়। ১০টি বা তার বেশি অবসিডিয়ান ব্লক সংগ্রহ করে তা দিয়ে একটি বক্স তৈরি করলে একটি বেগুনি রঙের পোর্টাল খুলে যায়। এই পোর্টাল দিয়েই ‘নেদার’ অপশনে প্রবেশ করতে হয়।
নেদার
নেদার হলো মাইনক্র্যাফটের নরক। এটি পুরোপুরি ভিন্ন একটি জগৎ। নেদারের সাগর-মহাসাগর সবকিছুই উত্তপ্ত লাভা দিয়ে তৈরি। নেদারের মাটি তৈরি হয়েছে ‘নেদার রক’ নামের এক বিশেষ পাথর দিয়ে। নেদারের ভেতর একধরনের মৃত মানুষেরা বাস করে যাদের বলা হয় ‘জোম্বি পিগম্যান’। নেদারের আকাশে ভেসে বেড়ায় একধরনের ভৌতিক চরিত্র, যা গেমারদের দেখামাত্রই আগুনের গোলা ছুড়ে মারে। সবকিছু মিলিয়ে নেদার মাইনক্র্যাফটের সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গা। এখন প্রশ্ন হলো, এরপরও কেন মানুষ নেদারে যায়? কারণ, বিপজ্জনক হলেও নেদার মূল্যবান সম্পদে ভরপুর। নেদারের মাটির নিচে রয়েছে ‘কোয়ার্টজ’ ও ‘নেদাররাইট’-এর মতো মূল্যবান পদার্থ, যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। ‘নেদার ফোরট্রেস’ নামের একটি রহস্যময় দুর্গ রয়েছে, যা খুঁজে বের করা কঠিন। দুর্গের ভেতর পাওয়া যায় মূল্যবান গুপ্তধন যা পাহারা দেয় ‘উইদার স্কেলেটিন’ নামের এক কঙ্কাল। এদের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে আসা বেশ কঠিন কাজ।
স্থাপনা
মাইনক্র্যাফটের বিভিন্ন প্রান্তে রহস্যময় কিছু স্থাপনা লুকানো রয়েছে। আর তাই ধু ধু মরুভূমি দিয়ে পথচলার সময় হঠাৎ চোখে পড়বে ছোট আকৃতির পিরামিড, যাকে বলা হয় ‘ডেজার্ট টেম্পল’। ‘জঙ্গল টেম্পল’ পাওয়া যাবে জঙ্গলের গহিনে। সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে আছে বিশাল এক প্রাসাদ, যাকে বলা হয় ‘ওসেন মনুমেন্ট’। আবার মাটির গভীরে খনন করার সময় পাওয়া যেতে পারে প্রাচীন কোনো শহর।
মাইনক্র্যাফটের মাটির গভীরে রয়েছে একটি ইটের দুর্গ, যাকে বলা হয় ‘স্ট্রং হোল্ড’। দুর্গটি এত বিশাল যে একবার ঢুকলে বের হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সেই দুর্গের একটি বিশেষ কক্ষে রয়েছে আরেকটি পোর্টাল।
এন্ড পোর্টাল
নেদার ছাড়াও মাইনক্র্যাফটে ‘এন্ড’ নামের আরও একটি গোপন দুনিয়া রয়েছে। এন্ডে প্রবেশ করতে হলে ‘এন্ড পোর্টাল’ খুঁজে বের কতে হয়, যা রয়েছে মাটির গভীরের কোনো এক দুর্গে। পোর্টালে প্রবেশ করলেই একটি সাদা পাথরের দ্বীপে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যাবে। পুরো দ্বীপে রয়েছে লম্বা পায়ের এক ভৌতিক প্রাণী। এদের বলা হয় ‘এন্ডার ম্যান’। প্রথমবার দ্বীপে পা রাখার পর একটি বিশাল ড্রাগন গেমারদের আক্রমণ করতে আসে। এটিই হলো ‘এন্ডার ড্রাগন’, মাইনক্র্যাফটের সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া এন্ডার ড্রাগনকে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব।
মাইনক্র্যাফটের শুরুতে যা করতে হয়
মাইনক্র্যাফট খেলার প্রথম দিন গেমাররা যা খুশি তা-ই করতে পারেন, তবে আদর্শ উপায় হলো রাতের আগেই নিরাপদ আশ্রয় ঠিক করে ফেলা। এ জন্য প্রথমে গাছ থেকে কাঠ সংগ্রহ করে একটি ক্রাফটিং টেবিল তৈরি করতে হবে। ক্রাফটিং টেবিল ছাড়া বাকি যন্ত্রপাতিগুলো তৈরি করা যাবে না। এরপর বইয়ে থাকা নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি তৈরি করতে হবে। পাথর ও গাছ কাটার জন্য আলাদা কুড়াল রয়েছে। কুড়াল দিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী গাছের কাঠ ও পাথর সংগ্রহ করার পাশাপাশি খাবারও জোগাড় করা যাবে। সর্বশেষ থাকার জন্য একটি ঘর বানাতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে রাতের আগেই ঘর বানিয়ে ফেলা সম্ভব। অবশ্য রাত হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে পাহাড়ের গায়ে সুড়ঙ্গ কেটে থাকার ব্যবস্থা করা যায় গেমটিতে।
মাইনক্র্যাফট খেলার জন্য কোনো গেমিং কম্পিউটার বা ল্যাপটপের প্রয়োজন হয় না। সাধারণ কাজে ব্যবহৃত যেকোনো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ দিয়েই মাইনক্র্যাফট খেলা যায়। মাইনক্রাফট ডট ফেন্ডমের তথ্যানুযায়ী, ল্যাপটপে কোর আই-৩-এর প্রসেসর এবং কমপক্ষে ৪ গিগাবাইট র্যাম থাকলে স্বাচ্ছন্দ্যে মাইনক্র্যাফট খেলা যাবে। মোবাইলেও খেলা যায় মাইনক্র্যাফট।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
আরও পড়ুনঃ কম বাজেটে অ্যাকশন ক্যামেরা