আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মহাসাগরে তলিয়ে যাওয়া ঠেকাতে কী করছে মালদ্বীপ । সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ক্রমবর্ধমান ঝড়ের কারণে গোটাবিশ্বের উপকূলরেখা হুমকির মুখে রয়েছে। এরইমধ্যে দ্বীপরাষ্ট্র ও উপকূলীয় বিভিন্ন শহর নিজেদের রক্ষার্থে পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম দেশ মালদ্বীপ।
পদক্ষেপগুলোর মধ্যে আছে সমুদ্রের প্রাচীর নির্মাণ থেকে শুরু করে সমুদ্রের তলদেশ থেকে বালু তোলা ও সৈকতে পাম্প করার মতো বিষয়।
এ লক্ষ্যে আরও প্রাকৃতিক সমাধানের জন্য কাজ করছে ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)’-এর ‘সেলফ-অ্যাসেম্বলি ল্যাব’ ও মালদ্বীপের সংগঠন ‘ইনভেনা’।
ভারত মহাসাগরে প্রায় ১২০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ। সাবমার্সিবল স্ট্রাকচার (নিমজ্জিত কাঠামো) ব্যবহার করে তারা সমুদ্রের শক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে, যাতে দেশটির বিভিন্ন দ্বীপকে রক্ষার জন্য বাছাই করা জায়গায় বালি জমতে পারে। এমনকি এতে নতুন জায়গাও জেগে উঠতে পারে।
আরও পড়ুনঃ ভেঙ্গে যাচ্ছে একটি মহাদেশ অচিরেই তৈরি হচ্ছে ষষ্ঠ মহাসাগর
২০১৯ সাল থেকে এসব সংগঠন মালদ্বীপে মাঠ পযায়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে, যেখানে প্রায় প্রতিটি দ্বীপের উপকূল ক্ষয় হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার বেশিরভাগই পরিচালিত হচ্ছে দেশটির রাজধানী শহর মালে’র ঠিক দক্ষিণে থাকা এক প্রবালপ্রাচীরের অগভীর অংশে, যেখানে রয়েছে বালি সংগ্রহের জন্য শক্ত গিঁটে বাঁধা দড়ির জাল নিমজ্জিত করা থেকে শুরু করে হাতে বোনা কাপড়কে শক্ত কংক্রিটে রূপান্তর করার মতো উপাদানের ব্যবহার।
অন্য আরেকটি জায়গার পরীক্ষায় বালির তীরের উপরে একটি ভাসমান বাগান তৈরি করা হয়েছে, যাতে বিভিন্ন গাছের শিকড় এরইমধ্যে জমে থাকা বালিকে স্থিতিশীল করতে এবং আরও বালি সংগ্রহ করতে সাহায্য করতে পারে কিনা তা খতিয়ে দেখা।
তবে এর সবটা কাজে নাও লাগতে পারে। এরপরও উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষার জন্য ম্যানগ্রোভ বন ব্যবহারের মতো বিভিন্ন ধারণা বেশ কিছুদিন ধরেই চলে আসছে। তবে মালদ্বীপের এ কাজের পেছনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার।
এর শুরুটা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেমব্রিজ শহরে ‘এমআইটি’র ক্যাম্পাসের ওয়েভ ট্যাঙ্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার মাধ্যমে।
বিভিন্ন কাঠামো ও আদর্শ জ্যামিতিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নির্ধারণ করার জন্য কাত হওয়া শনাক্ত করে এমন বিভিন্ন সেন্সরের মাধ্যমে দলটি মালদ্বীপের সমুদ্রের স্রোত ও জোয়ারের বর্তমান তথ্য, আবহাওয়ার ডেটা ও হাজার হাজার কম্পিউটার সিমুলেশনের উপর নির্ভর করেছে। পাশাপাশি কৃত্রিম স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি মেশিন লার্নিং মডেলের মাধ্যমে বালি কীভাবে সরানো হবে এর পূর্বাভাসও দিয়েছেন।
বিভিন্ন বস্তু ও জায়গা গঠন করতে পারে এমন উপাদান ও প্রক্রিয়ার উপর নজর দিয়েছেন ‘সেলফ-অ্যাসেম্বলি ল্যাব’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-পরিচালক স্কাইলার টিবিটস। তিনি বলেন, ক্ষয়ে যাচ্ছে এমন বিভিন্ন উপকূলরেখাকে শক্তিশালী করার জন্য প্রচলিত প্রকৌশল সমাধানের চেয়ে আরও টেকসই সামাধান দিতে পারে সাবমার্সিবল স্ট্রাকচার বা নিমজ্জিত কাঠোমো।
আরও পড়ুনঃ প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে অক্সিজেন উৎসের সন্ধান
“আমরা সমুদ্রের প্রাকৃতিক শক্তি ব্যবহার করে বালুকে নিয়ন্ত্রণ করছি।”
‘বালি সেখানেই থাকতে চায়’
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র এক মিটার (৩.৩ ফুট) গড় উচ্চতায় অবস্থিত মালদ্বীপ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। তাই এ সমস্যা ঠেকাতে সমুদ্র উপকূলে ড্রেজিং ও হার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন, সমুদ্রে প্রাচীর দেওয়া,স্রোতের বেগ-নিরোধক প্রাচীর ও কাঠ দিয়ে তৈরি বাঁধ নির্মাণ করেছেন দেশটির কর্মকর্তা, রিসর্ট অপারেটর ও রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা।
তবে এসব পদক্ষেপ বেশ ব্যয়বহুল, বজায় রাখাও কঠিন। একইসঙ্গে সেখানের বাস্তুতন্ত্রের জন্যও বাধার কারণ হতে পারে।
এমআইটি ‘সেলফ-অ্যাসেম্বলি ল্যাব’ ও ‘ইনভেনা’ প্রকৃতির বিরুদ্ধে না গিয়ে প্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে কাজ করছে বলে দাবি করেছেন টিবিটস।
“বালি সেখানেই থাকতে চায়। আমরা এরইমধ্যে শিখেছি, সৈকত ও এর আশপাশে থাকা বিভিন্ন দ্বীপকে কার্যকরভাবে পুনর্নির্মাণের জন্য কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।”
এ সহযোগিতার লক্ষ্য বিভিন্ন কৃত্রিম দ্বীপের পরিসর বাড়ানো। মালদ্বীপে ২০১৯ সালে চালু হওয়া দ্বিতীয় পযায়ের পরীক্ষাটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ফলাফল দেখিয়েছে। যেখানে বায়োডিগ্রেডএবল, হাতে বোনা কাপড় ও বালি-ভরা থলি ব্যবহার করা হয়েছে, যেটিকে বালির বার তৈরি করতে কৌশলগত অবস্থানে রাখা হয়েছিল।
মাত্র চার মাসের মধ্যে প্রায় আধা মিটার বালি ২০ বাই ৩০ মিটার এলাকাজুড়ে জমা হয়েছিল। বর্তমানে, বালির তীরটি প্রায় দুই মিটার লম্বা, ২০ মিটার, প্রশস্ত ও ৬০ মিটার দীর্ঘ হয়েছে।
ব্যবহৃত উপাদানটি আনুমানিক 10 বছর স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এটিকে পাম্পিং এবং ড্রেজিংয়ের চেয়ে আরও স্থায়ী – এবং তাই সাশ্রয়ী – সমাধান করতে পারে, টিবিটস বলেছেন।
ব্যবহৃত উপাদানটি প্রায় ১০ বছর স্থায়ী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা পাম্পিং ও বালু তোলা পদ্ধতির চেয়েও দীর্ঘমেয়াদি। তাই এটি সাশ্রয়ী সমাধান করতে পারে বলে দাবি টিবিটসের।
টেকসই সমাধান বাড়ানো
অন্যান্য আরও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সমাধান পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এমনকি অন্যান্য দেশেও এর প্রয়োগ হচ্ছে। যেমন– এক দশকেরও বেশি সময় আগে বিশ্বের প্রথম বালি মোটর তৈরি করেছিল নেদারল্যান্ডস। এটি একটি কৃত্রিমভাবে তৈরি বালির উপদ্বীপ, যা সমুদ্রের বিভিন্ন স্রোতকে উপকূলের দিকে বালি ঠেলে দিতে সহায়তা করে।
নিউ ইয়র্কে ঝিনুকের বিভিন্ন প্রাচীরের উপকূলরেখা রক্ষার জন্য পুনরায় এর পদ্ধতির ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না এমন বিভিন্ন সমাধানের প্রতি বর্তমানে আগ্রহ বাড়ছে, তবে এগুলোর প্রয়োগ কঠিন হতে পারে।
❑ পরিবেশ বিজ্ঞান থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ অ্যান্টার্কটিকা অভিযানের সময় বিরল প্রজাতির তিমির সন্ধান