আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: মসজিদে বসে থাকলেই ৭ প্রতিদান । মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থান। প্রতিদিন পাঁচবার মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য সমবেত হন মুসল্লিরা। কিন্তু, মসজিদ শুধু নামাজ আদায়ের জন্য নয়। এর বহুমাত্রিক ভূমিকা আছে। মসজিদে অবস্থান করাও ইবাদত। মসজিদে ইবাদতের আগে ও পরে অবস্থান করার মধ্যে বিশেষ প্রতিদানের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। নিচে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো—
১. আল্লাহ খুশি হন
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যতক্ষণ মসজিদে সালাত ও জিকিরে রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তাঁর প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যক্তি তার পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ৮০০)
২. ফেরেশতারা দোয়া করেন
যারা মসজিদে এসে তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকাত সালাত আদায় করার পর ফরজ সালাতের জন্য বসে থাকে কিংবা ফরজ সালাতের পর মসজিদে বসে থাকে, তাদের জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা লাভের দোয়া করতে থাকে। রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যতক্ষণ তার সালাতের স্থানে থাকে তার অজু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফেরেশতারা এই বলে দোয়া করে যে হে আল্লাহ, আপনি তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ, আপনি তাকে রহম করুন। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির সালাত তাকে বাড়ি ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখে, সে সালাতরত আছে বলে পরিগণিত হবে।’ (বুখারি: ৬৫৯)
আরও পড়ুনঃ মুখের ১০ পাপ পরিহার মুমিনের কর্তব্য
৩. আল্লাহর রহমত মেলে
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন আল্লাহর ঘর থেকে কোনো ঘরে একত্র হয়, যেখানে তারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে বা পরস্পর আলোচনা করে, তাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল হতে থাকে, তাদের রহমত ঢেকে রাখে এবং ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে। আর আল্লাহ নিকটবর্তী ফেরেশতাদের সঙ্গে তাদের নিয়ে আলোচনা করেন। আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশ তাকে এগিয়ে নেয় না।’ (মুসলিম: ২৬৯৯)
৪. আল্লাহ গর্ব করেন
আবদুর রহমান বিন আমর (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (স.)-এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করলাম। তারপর যার চলে যাওয়ার চলে গেল এবং যার থেকে যাওয়ার থেকে গেল। রাসুল (স.) এত দ্রুতবেগে এলেন যে, তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হতে লাগল। তিনি তাঁর দুই হাঁটুর ওপর ভর করে বসে গেলেন এবং বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের রব আসমানের একটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের কাছে তোমাদের সম্পর্কে গর্ব করে বলছেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা এক ফরজ আদায়ের পর পরবর্তী ফরজ আদায়ের জন্য অপেক্ষা করছে।’ (ইবনে মাজাহ: ৮০১)
৫. পূর্ণ হজ ও পূর্ণ ওমরার নেকি
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতে আদায় করে, তারপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর জিকির করে, তারপর দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তার জন্য একটি হজ ও একটি ওমরার সওয়াব আছে। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হজ ও ওমরার সওয়াব)। (তিরমিজি: ৫৮৬)
৬. নবীজির সুন্নতের অনুসরণ
জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) ফজরের সালাত আদায়ের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত নিজের সালাতের স্থানে বসে থাকতেন। (তিরমিজি: ৫৮৫; আবু দাউদ: ১১৭১)
৭. নামাজের মতো সওয়াব
একজন মুসলমান যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করবে ততক্ষণ সালাতের মধ্যেই থাকবে। অর্থাৎ সালাত আদায়ের মতো সওয়াব পাবে। হুমাইদ (রহ.) বলেন, আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর রাসুল (স.) কি আংটি ব্যবহার করতেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। এক রাতে তিনি এশার সালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করেন। সালাত শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, লোকেরা সালাত আদায় করে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ সালাতের জন্য অপেক্ষা করেছ, ততক্ষণ সালাতরত ছিলে বলে গণ্য করা হবে। আনাস (রা.) বলেন, এ সময় আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-এর আংটির উজ্জ্বলতা লক্ষ করছিলাম। (বুখারি: ৬৬১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে আগেভাগে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার এবং বেশিক্ষণ অবস্থানের তাওফিক দান করুন। মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আরও পড়ুনঃ রাসূল (সা.) এর প্রতি দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত