আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ভূতের গ্রাম ‘আল-ঘুরাইফা’ । সংযুক্ত আরব আমিরাতে একের পর এক বিস্ময়কর স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। বছর জুড়ে এই দেশে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। এখানে রয়েছে– বুর্জ খলিফা, দুবাই ফাউন্টেন, দুবাই মল, বুর্জ আল আরব জুমেইরাহসহ আরও অনেক কিছু। এর পাশাপাশি আপনি চাইলে পরিত্যক্ত একটি মরুভূমি থেকেও ঘুরে আসতে পারবেন। দুবাইয়ের আকাশচুম্বী ভবন থেকে মাত্র এক ঘণ্টার পথ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছে একটি ‘ভূতের গ্রাম’। এর নাম আল-ঘুরাইফা। সেখানে সমুদ্র নিকটবর্তী একটি দ্বীপ দীর্ঘ ৫৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় জনমানবশূন্য ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আমিরাতের রাস আল খাইমাহ প্রদেশে অবস্থিত এই দ্বীপটি স্থানীয় লোকজন ‘ভূতের গ্রাম’ হিসেবেই চেনেন।
বাংলায় অনেকে লাল দ্বীপও বলেন। এখানকার বহু বছরের পুরোনো ঘরবাড়ি আর ধ্বংসস্তুপগুলোতে মিশে আছে রহস্যময় নানা ঘটনা আর গল্প।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৪০০ শতাব্দীতে গ্রামটির উদ্ভব। ১৮৩১ সালে এর পুনঃনির্মাণও হয়। ব্রিটিশ তথ্য অনুযায়ী গ্রামে প্রায় ৩শ ঘর ৪ হাজার ১শ’র মতো লোক বসবাস করত। সেখানে ছিল ১৩টি মসজিদ। ‘রাস আল খাইমাহ’ শহরের দক্ষিণের গ্রামটি এক সময় বণিকদের পদচারণায় মুখরিত ছিল।
আরও পড়ুনঃ ভিনগ্রহ থেকে রেডিও সংকেত আসছে, চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৯৬০ সালে গ্রামটি বেশ সমৃদ্ধশালী ছিল। তখনো অনেক বিলাসী বাড়িঘর ছিল। উপকূলীয় গ্রামটিতে তখন ফার্সি অভিবাসী, পর্তুগিজ ব্যবসায়ী এবং ব্রিটিশ কর্মকর্তারা দাঁপিয়ে বেড়াত। কারণ, এখানকার স্থানীয়রা মাছ এবং মুক্তার ব্যবসা করত। কিন্তু হঠাৎ করেই দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে।
একপর্যায়ে এই গ্রামে জ্বীন-ভূতের বসবাসের খবর রটে যায়। বাসিন্দাদের মনে ভয়-ভীতি তৈরি হয়। এর কয়েক বছর পর দ্বীপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে প্রায় ২ হাজার ৫০০ বাসিন্দা আবুধাবি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৬৮ সালের পর হঠাৎ করেই মানুষশূন্য হতে থাকে।
যারা থেকে যায় তারাও খুব ভয়ে দিন কাটায়। কারণ, এখানে অশরীরী আত্মার আনাগোনা বেড়ে যায়। নানারকম ভৌতিক কর্মকাণ্ডে প্রতিদিন জমতে থাকে নানা গল্প।
স্থানীয়দের মতে, জ্বীন-ভূতের ভয়ে লাল দ্বীপকে ১৯৬৮ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে দ্বীপের বাসিন্দারা সবাই আবুধাবি পাড়ি দেন। সেখানেই তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তবে এখনও এই দ্বীপে কোনো কোনো মালিক নিজের ঘরবাড়ি দেখতে যান।
আল-ঘুরাইফা প্যারানরমাল অ্যাকটিভিটিসের জন্য জনপ্রিয়। প্রায়ই পর্যটক ঘুরতে যান। প্রাচীন দুর্গের ছবি তুলতে গেলে তাদের সঙ্গেও ঘটতে থাকে অস্বাভাবিক ঘটনা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, শারজাহ আমিরাতের আল-মাদাম শহরের কাছে ভূতের গ্রামটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয় ওঠেছে। এই জায়গাটি আপনাকে শহরগুলোর কংক্রিটের জঙ্গল থেকে বের করে নিয়ে আসবে। গ্রামটি আমিরাতের কঠিন অতীতের একটি আভাস দেয়। দুই সারি বাড়ি এবং একটি মসজিদ নিয়ে গঠিত গ্রামটি।
শারজাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক আহমেদ সুক্কার, আল-ঘুরাইফা সাইটটি নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর মতে, ‘এই জায়গাটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আধুনিক ইতিহাসের অনেক কিছু শেখাতে পারে।’
স্থানীয়দের ধারণা, এখানে অভিশপ্ত আত্মা রয়েছে। তারা প্রায়ই বিচিত্র হাতের ছাপ দেখতে পান। তাদের ধারণা, এটি আগত দর্শনার্থীদের জন্য সতর্ক সংকেত। যদিও স্থানীয়রা তাদের বরাবরের মতোই নিরুৎসাহিত করে। তারা সতর্ক করে দেন যে, এখানে দুষ্ট জীনের উপদ্রব বেশি। বিজ্ঞানের যুগে এসবের ব্যাখ্যা চলে না। তবুও নিত্যনতুন ভৌতিক রহস্য আর নিঃস্ব হওয়া গ্রামটিকে কি অস্বীকার করা যায়?
স্থানীয়দের তথ্য মতে, আরব আমিরাতের প্রাদেশিক শহর রাস আল খাইমাহ থেকে রহস্যময় এই দ্বীপটির দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। এক সময় এই দ্বীপের বাসিন্দারা নৌকা নিয়ে গভীর সমুদ্র থেকে মুক্তা সংগ্রহ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন। তবে বর্তমানে এই দ্বীপে যতটুকু চোখ যায় কেবলই ধ্বংসস্তুপ, ভাঙা ভবনের দৃশ্য দেখা যায়।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন ইটপাথরে ভরা জঞ্জালময় এক ভৌতিক পরিবেশও মনের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এক কিলোমিটারেরও কম আয়তনের ভৌতিক গ্রামটিকে বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন তারকাঁটার প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে। ভাঙা ভবনগুলোর পথ ধরে ভেতরে যেতে গা ছমছম করে ওঠে।
বড় বড় সামুদ্রিক পাথরে নির্মিত শত শত ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। লোকজন নেই বললেই চলে। চলাচলের রাস্তাগুলো নানা জঞ্জালে ভরা। তবে উপরের পলেস্তারা খসে গেলেও পুরোনো মসজিদটি অনেকটা অক্ষত রয়েছে। আবার কয়েকটি ঘর মেরামত করে বর্তমানে কিছু মৎসজীবী শ্রমিক বাস করছেন।
শ্রমিকরা জানান, স্থানীয়দের মধ্যে লাল দ্বীপে জ্বীন-ভূত থাকার প্রচার-প্রচারণা রয়েছে। পরিত্যক্ত গ্রামের ঘরবাড়িগুলো বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। তারকাঁটার প্রাচীরের কাছাকাছি কয়েকটি ঘর মেরামত করে তারা কম মূল্যের ভাড়া পরিশোধ করে থাকেন। তবে ঘরগুলোর মালিকের বংশধররা এখনও এসে খোঁজ খবর করেন।
এর আগে, গ্রামটি নিয়ে ভৌতিক চলচ্চিত্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নেন কয়েকজন নির্মাতা। একবার স্থানীয় চলচ্চিত্রনির্মাতা ফয়সাল হাশমি কিছু বন্ধুকে নিয়ে গ্রামটিতে একটি রাত কাটাতে আসেন। তখন তাদের সঙ্গে ঘটতে থাকে নানা ভৌতিক কর্মকাণ্ড। বোঝার বাকি রইল না যে গ্রামটি ভয়ঙ্কর এবং অভিশপ্ত।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ফয়সাল হাশমি বলেন, এই গ্রামে যারা ছিলেন কিংবা ভ্রমণে এসেছেন তাদের সঙ্গে একবার হলেও রহস্যময় ভুতুড়ে কোনো না কোনো ঘটনা ঘটেছে। কিছু কিছু মানুষ এই গ্রামে জ্বীন নেই বললেও বেশিরভাগ স্থানীয়রা এখানে জ্বীনের অস্তিত্ব আছে বলে দাবি করেন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
আরও পড়ুনঃ মানসিক চাপের ফলে শরীরের প্রভাব ও প্রতিকার