আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ভালো মানুষের বিপদ বেশি কেন ? বিপদ-আপদ প্রত্যেকের জীবনে আসে। কারো ক্ষেত্রে বেশি, কারো ক্ষেত্রে কম—এটি আল্লাহর ইচ্ছাধীন বিষয়।
বিপদ-মসিবতের পেছনে কল্যাণ নিহিত থাকে অথবা পরীক্ষা করার জন্যই বান্দাকে বিপদ মসিবতের সম্মুখীন করা হয়। উত্তম বান্দার বিপদ একটু বেশি হয়। কিন্তু কেন? নিম্নোক্ত হাদিসে এর উত্তর রয়েছে।
মুসআব ইবনে সাআদ (রহ.) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি (সাআদ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষের মধ্যে কার বিপদের পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়?
তিনি বললেন, নবীদের বিপদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের বিপদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। (সুনানে তিরমিজি: ২৩৯৮)
আরও পড়ুনঃ নবীজি (স.) এর ১৪টি মহামূল্যবান অসিয়ত
অর্থাৎ মহান আল্লাহ প্রিয় বান্দাদের বেশি পরীক্ষা নিয়ে থাকেন এবং এটিই স্বাভাবিক। মুমিনকে যেকোনো সমস্যায় মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস অটুট রাখতে হবে যে, আল্লাহ অবশ্যই আমাকে বিপদমুক্ত করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বরং তিনি, যিনি অসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তিনি বিপদাপদ দূর করে দেন আর পৃথিবীতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো মাবুদ আছে? তোমরা খুব সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা নামল: ৬২)
বিপদাপদে মুমিনকে মনোবল ধরে রাখার অনুপ্রেরণা দেয় ইসলাম। যেমন বিপদগ্রস্ত মানুষের উদ্দেশে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনহগুলো ক্ষমা করে দেন। (সহিহ বুখারি: ৫৬৪১)
মুমিন বিপদ-মসিবতের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান আশা করে এবং সবর করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও—যাদের ওপর কোনো মুসিবত এলে বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারাহ: ১৫৫-১৫৬)
আরও পড়ুনঃ ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ একটি মহান ইবাদত
মসিবত যত বড়ই হোক, আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া পাপ। বিখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ১৯৭০১)
অতএব, প্রমাণিত যে, আল্লাহ তাআলা পছন্দের বান্দাকে বিপদ-আপদ দিয়ে পরিশুদ্ধ করেন। এ অবস্থায় ধৈর্য, তাওয়াক্কুল ও আল্লাহর কাছে বিনিময় লাভের প্রত্যাশার মাধ্যমে বান্দার কল্যাণ সাধিত হয়। কেননা আল্লাহই বলেছেন, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে।
অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’ (সুরা আলাম নাশরাহ: ৫-৬) পবিত্র কোরআনে লুত (আ.)-কে তাঁর পাপী সম্প্রদায় সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই প্রভাত তাদের জন্য নির্ধারিত কাল। প্রভাত কি নিকটবর্তী নয়?’ (সুরা হুদ: ৮১)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বিপদে ধৈর্য ধরার তাওফিক দান করুন। হতাশার পরিবর্তে পুরস্কারের আশা করার এবং ধৈর্য ধরার তাওফিক দান করুন। আমীন।
❑ ইসলামী জীবন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ অন্যের দোষ অনুসন্ধান ও প্রচার করা কঠিন গুনাহের কাজ