আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ভাগ্যকুলের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি এবং ঘোল । পদ্মার পাড় ঘেঁষা জমজমাট এই বাজারে রয়েছে কয়েক দশক পুরানো বেশ কিছু মিষ্টির দোকান। দেশের সেরা ঘোল খেতে চাইলে এই দোকানগুলোতেই হানা দিতে হবে আপনাকে।
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারুন আর না-ই পারুন, ভাগ্যকুল বাজারের ঘোলের স্বাদ যে দুধে মেটাতে পারবেন না সে কথা হলফ করে বলা যায়! মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল বাজারের ঘোল দেশের নানাপ্রান্তের ভোজনরসিকদের মনে স্থান করে নিয়েছে এর অভিনব স্বাদে।
শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুলের মিষ্টি ও ঘোলের জন্য বেশ পরিচিত। ভাগ্যকুলের মিষ্টান্ন বলতে কোন নির্দিষ্ট দোকানকে বোঝানো হচ্ছে না। ভাগ্যকুল নামক স্থানটি মিষ্টান্নের জন্য বিখ্যাত। আদি ও আসল ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বাদ পেতে হলে আপনাকে ভাগ্যকুল বাজারে যেতে হবে। এখানের সন্দেশ, ছানা, চমচম আপনাকে দিবে এক অনন্য স্বাদের অভিজ্ঞতা।
ভাগ্যকুল বাজারে অবস্থিত পাঁচ-ছয়টি মিষ্টির দোকানের সবগুলোতেই পাওয়া যায় অভিনব স্বাদের এই ঘোল। তবে ঐতিহ্যবাহী পুরোনো দোকানগুলোর মধ্যে চিত্তরঞ্জন সুইটমিট, আনন্দ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার উল্লেখযোগ্য। চিত্তরঞ্জন সুইটমিটের মালিকপক্ষ থেকে অনীল আচার্য্য জানান এখানের বেশিরভাগ মিষ্টির দোকানই প্রায় ৬০-৭০ বছরের পুরোনো।
আরও পড়ুনঃ ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ীর ‘ক্ষীর চমচম’
চিত্তরঞ্জন সুইটমিটের প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন আচার্য্য স্বাধীনতার আগে নাস্তার হোটেল হিসেবে তার ব্যবসার শুরু করেন। দোকানে মিষ্টি বানানো শুরু হয় ৩৫ বছর আগে থেকে। স্থানীয় ফার্ম থেকে প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করে সেখান থেকে নিজেরাই তৈরি করেন দই আর ছানা। খাঁটি এই দই দিয়ে তৈরি হয় ঘোল আর ছানা থেকে অন্য সব ধরনের মিষ্টি। আচার্য্য পরিবারের সবাই মিলেই দোকানের কাজ সামলান। বাবা মারা যাওয়ার পর সুভাষ আচার্য্য, অনীল আচার্য্য, আর সমীর আচার্য্য তিন ভাই মিলে দেখেন দোকান।
“একশো বছরের পুরানো আনন্দ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের দোকান, ভাগ্যকুল বাজারের প্রথমদিকের দোকানের একটি এটি,” বলেন তিনি। ঘোলের পাশাপাশি তাদের বরফি, সন্দেশ, পুডিং, দই, রসমালাই বেশ বিখ্যাত বলে জানান তিনি।
সকাল ৭টা থেকেই দোকানগুলোতে মিষ্টি বানানোর কাজ শুরু হয়। ঘোল ছাড়াও এই দোকানগুলোর আকর্ষণের মূলে রয়েছে রসগোল্লা, চমচম, কালোজাম, সন্দেশ, ছানা, বরফি, দই, পুডিং সহ নানা ধরনের মিষ্টি। সকালে ১০-১১টার দিকে দোকানগুলোতে গেলে দেখতে পারবেন সরাসরি মিষ্টি বানানোর দৃশ্য। ছানা মেখে গোল করে টগবগিয়ে ফুটতে থাকা স্বচ্ছ্ সিরায় জ্বাল দিয়ে বানানো হয় রসগোল্লা। ভোজনরসিক না হলেও তখন গরম গরম রসগোল্লা খাওয়ার লোভ সামলে রাখা দায়!
দইয়ের সাথে পানি মিশিয়ে এক জগ থেকে আরেক জগে ঢেলে ঘোল বানানোর প্রক্রিয়াটা দেখাও বেশ উপভোগ্য। খাঁটি দইয়ের ঘোলের সাথে এক টুকরো লেবুর ঘ্রাণ মিশে আরো উপভোগ্য হয়ে উঠে ভাগ্যকুল বাজারের এই অমৃত পানীয়।
দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই ভোজন রসিকেরা ভিড় জমায় এই দোকান গুলোয়। প্রায়ই বন্ধের দিনে ভাগ্যকুল বাজারে ভীড়ের জন্য চলাফেরাই করা যায় না।
ঢাকার গুলিস্থান হতে দোহারগামী বাসে চড়ে বালাশুর নেমে রিকশা বা সিএনজি নিয়ে সরাসরি পদ্মা নদীর তীরে ভাগ্যকুল বাজার যেতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ ক্যান্সারের ১০টি প্রাথমিক লক্ষণ