আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ সুপার সেলের পেছনের ইতিহাস জানেন কি ? ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ এই শব্দটির সঙ্গে কমবেশি এখন সবাই পরিচিত। বিভিন্ন ব্র্যান্ড এসময় ডিস্কাউন্ট দিয়ে থাকে। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না অনেকেই।
বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা তো বটেই বাঙালিরাও এই উৎসব পালন করছেন নানা ভাবে। বিশেষ করে কেনাকাটায়। বিভিন্ন শোরুম, ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে অনলাইনের পেজগুলোতে দেওয়া হচ্ছে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ সেল। অনেকে জেনে এই উৎসবে সামিল হয়েছেন, অনেকে না জেনে।
নামকরণের ইতিহাস
ব্ল্যাক ফ্রাইডে (Black Friday) নামটা শুনেই মনে হয় অশুভ দিন। কিন্তু, আসলে তা নয়। আমেরিকার জনগণের কাছে দিনটি খুবই শুভ এবং বহু প্রতিক্ষিত একটা দিন। ১৯৬১ সালে ফিলাডেলফিয়ায় এই শব্দটির উদ্ভব হয়েছিল। সেই থেকেই এই ব্যস্ত শপিং দিনটির এহেন নাম প্রচলিত হয়ে আসছে।
ফিলাডেলফিয়া পুলিশ বিভাগের উপাখ্যান অনুযায়ী, থ্যাঙ্কস গিভিং ডে-এর পরের দিনকে ব্ল্যাক ফ্রাইডে নামে অভিহিত করা হয়েছিল। কারণ, এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতো এবং ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হত। ফলে, শহরের রাস্তাজুড়ে থাকত প্রচুর মানুষের জমায়েত, প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যাম।
এত মানুষের জমায়েত ও ট্রাফিক সামলাতে বেশ বেগ পেতে হতো ফিলাডেলফিয়ার পুলিশদের। সেই থেকেই ফিলাডেলফিয়ার পুলিশরাই এই দিবসের নাম দিয়েছিলেন ব্ল্যাক ফ্রাইডে। নিউইয়র্ক টাইমস ১৯৭৫ সালের ২৯ শে নভেম্বর এই দিনটিকে ‘বছরের ব্যস্ততম কেনাকাটা এবং ট্র্যাফিকের দিন’ হিসেবে উল্লেখ করে।
আরও পড়ুনঃ ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার কীভাবে কাজ করে?
‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ সেল সর্বপ্রথম আমেরিকায় শুরু হয়েছিল। তবে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য পাশাপাশি এশিয়া মহাদেশ এমনকি বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেলের কারণে অনেক ই-কমার্স ওয়েবসাইট পণ্যে ছাড় দিচ্ছে। ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে শুধু অনলাইন নয়, অফলাইন স্টোরেও পাচ্ছেন বিশাল ছাড়। মানুষও এই সেলে প্রচুর কেনাকাটা করছে। এ সময় এত বেশি বিক্রি হয় যা সারাবছরেও হয় না অনেকের।
কথিত আছে ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে ১০০০ ডলার মূল্যের একটি টিভি ২০০ ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়। ওয়ালমার্টের মতো বৃহত্তর কোম্পানি তাদের নেট মুনাফা ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে বছরের ১৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ব্ল্যাক ফ্রাইডে ১৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে পারে।
‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ এর পেছনের ইতিহাস জানেন কি?
তবে এই যে ঘটা করে পালন হচ্ছে ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ এর পেছনের ইতিহাস জানেন কি? কোথা থেকে এলো এই ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ দিবস, কেনই বা শুরু হয়েছিল এই দিন পালন। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর পেছনের ইতিহাস। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’-এর ঠিক পরেই ব্ল্যাক ফ্রাইডের বিক্রি শুরু হয়।
অর্থাৎ এই দিন থেকে আপনি ক্রিসমাসের কেনাকাটা শুরু করতে পারেন। ‘থ্যাঙ্কসগিভিং’ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবান্ন উৎসব। এই দিনটি পালিত হয় নভেম্বরের শেষ বৃহস্পতিবার এবং নভেম্বর মাসের শেষ শুক্রবার পালিত হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে।
১৮৬৯ সালে প্রথম আমেরিকায় শুরু হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেল। সেবছর আমেরিকায় দেখা দেয় ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। বিশেষ করে ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন সোনার বাজারের বিপর্যয় দেখা দেয়। ব্যবসায়ীরা একের পর এক লোকসান গুনতে গুনতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। তখন তারা এমন একটি দিনের কথা ভাবছিলেন, যেদিন সব পণ্যে থাকবে বিশেষ ছাড়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নভেম্বরের শেষ শুক্রবার হবে সেই দিন।
আরও পড়ুনঃ কি-বোর্ডে অক্ষরগুলো এলোমেলো থাকে কেন?
আমেরিকায় ১৮৬৯ সালের শেষ শুক্রবার দিনটিকে বলা হয় ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’। দেখা যায়, এদিন যে পরিমাণ বিক্রি হয় তাতেই অর্থনৈতিক সূচক এক লাফে অনেক উপরে উঠে যায়। এখানে ব্ল্যাক বা কালো শব্দটি নেতিবাচক হলেও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি ইতিবাচক দিক নির্দেশ করে।
সেসময় হিসাবের খাতায় লোকসানের হিসাব লেখা হতো লাল কালিতে এবং লাভের হিসাব কালো কালিতে লেখা হত। তাই ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে যেহেতু লোকসানের হিসাব বন্ধ করে কালো কালিতে লাভের হিসাব লেখা শুরু হয় এজন্য এই দিনটিকে বলা হয় ব্ল্যাক ফ্রাইডে।
অন্যান্য দিনগুলোতে দোকানপাট সকাল ৬টায় খোলা হলেও এইদিন খোলা হতো ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে। ২০১১ সালে অনেক জনপ্রিয় দোকান খোলা হয়েছিল মধ্যরাতে। এটিই ছিল প্রথমবার, যেখানে মধ্যরাত্রে ক্রেতাদের জিনিস কেনার জন্য দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছিল। এই দিনটিতে পুরো আমেরিকায় এতো পরিমাণ বেচা-কেনা হয় যে, আমেরিকার অর্থনীতির সূচক এক লাফে অনেকখানি এগিয়ে যায়।
বর্তমানে জামা-কাপড় থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেলে কেনাবেচা হয়। তবে ১৮০০ শতকে ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেলে মূলত বিক্রি হত ক্রীতদাস। আবার আমেরিকায় তখন প্রকাশ্যে বাজারে হাঁকডাকে বিক্রি করা হত ক্রীতদাস-দাসীদের। যেহেতু তখন চলছিল অর্থনৈতিক মন্দা। তাই ক্রীতদাস কেনার ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন আমেরিকানরা।
ছরের শেষ সময়টাতে দাস-দাসীর বেশি প্রয়োজন হতো। কারণ অক্টোবর মাসের শেষ দিনে হ্যালোইন, নভেম্বর মাসে থ্যাংকসগিভিং, ডিসেম্বরে বড়দিন পেরিয়েই নতুন বছরের প্রস্তুতি। এসব উৎসবের তোড়জোড় করার জন্য ধনীদের অনেক কাজের লোক প্রয়োজন হতো। এসময় যেহেতু নবান্ন উৎসব থাকে। ফসল ঘরে তোলার জন্য অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন। এজন্য নভেম্বর মাসের শেষ শুক্রবার আমেরিকার প্রায় সর্বত্রই বসত একটা বিশেষ হাট। দাস বেচাকেনার হাট। তাই ব্যবসায়ীরা এই দিন ছাড়ে ক্রীতদাস বিক্রি করতেন।
আরও পড়ুনঃ
❒ স্মার্টফোনে চার্জ দিতে মাসে কত টাকার বিদ্যুৎ খরচ হয়?
❒ একটি মাউস কার্সার একদিনে কতটা পথ ভ্রমণ করে
❒ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার সময় ‘৪০৪’ এরর আসে কেন?
❒ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার কী এর সুবিধা-অসুবিধা এবং এটি কিভাবে কাজ করে জানুন
১৯৫০-এর দশকে ফিলাডেলফিয়ায় ব্ল্যাক ফ্রাইডের দিন ঘটেছিল আরেক ঘটনা। এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে বছরের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হতো এবং ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হত। ফলে শহরের রাস্তাজুড়ে থাকত প্রচুর মানুষের জমায়েত, প্রচণ্ড ট্রাফিক জ্যাম। এত মানুষের জমায়েত ও ট্রাফিক সামলাতে বেশ বেগ পেতে হতো ফিলাডেলফিয়ার পুলিশদের।
এমকি এই দিন বিশেষ ছাড় থাকার কারণে দেশের জনগণ সস্তায় জিনিস কেনার জন্য সেখানে এমন ভিড় করেছিল যে সেদেশের পুলিশকে নাওয়া খাওয়া ফেলে ভিড় সামলাতে হয়েছিল। সেই থেকেই ফিলাডেলফিয়ার পুলিশরাই এই দিবসের নাম দিয়েছিলেন ব্ল্যাক ফ্রাইডে। নিউইয়র্ক টাইমস ১৯৭৫ সালের ২৯ নভেম্বর দিনটিকে ‘বছরের ব্যস্ততম কেনাকাটা এবং ট্র্যাফিকের দিন’ হিসেবে উল্লেখ করে।
ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে সরকারি কোনো ছুটির দিন না হলেও ক্যালিফোর্নিয়াসহ আমেরিকার কিছু অংশে এটি রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ছুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমনকি কিছু স্কুল এবং অফিস ব্ল্যাক ফ্রাইডে এবং থ্যাঙ্কসগিভিং দিবসে ছুটি ঘোষণা করে।
সূত্র: হিস্টোরি ডটকম
❑ জেনে রাখুন থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ হারিয়ে যাওয়া NID ডাউনলোড করুন
১ Comment
BWER Company is Iraq’s leading supplier of advanced weighbridge systems, offering reliable, accurate, and durable solutions for industrial and commercial needs, designed to handle heavy-duty weighing applications across various sectors.