আইসিটি স্পোর্টস ডেস্ক: ব্রাজিলকে বিদায় করে সেমিতে উরুগুয়ে । কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে চলে গেছে উরুগুয়ে। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে কলম্বিয়ার মুখোমুখি হবে তারা।
গোলশূন্য সমতায় খেলার মূল সময় শেষ হওয়ার কারণে টাইব্রেকার শ্যুটআউটের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। এখানে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলে ব্রাজিল। প্রথম ৩ শ্যুটের ২টিই মিস করে ব্রাজিলিয়ানরা। অন্যদিকে প্রথম ৩ শ্যুটআউটেই সাফল্য দেখায় উরুগুয়ে। চতুর্থ শ্যুট উরুগুয়ে মিস করলেও পঞ্চম শ্যুট উরুগুয়ের জয় নিশ্চিত করে ম্যানুয়েল উগার্তে।
যেভাবেই হোক ব্রাজিলকে রুখতে হবে—উরুগুয়ের খেলোয়াড়দের এই প্রতিজ্ঞার প্রতিফলন মাঠে ছিল স্পষ্ট। তাঁরা হয়তো অনুচ্চারে ব্রাজিল দলের উদ্দেশে বলছিলেন, তোমরা পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারো, কিন্তু কোপা আমেরিকায় তোমাদের চেয়ে আমরাই এগিয়ে, আর্জেন্টিনার সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১৫ বার এই ট্রফি জিতেছি আমরা! ক্ষণে ক্ষণে ফাউল করে ব্রাজিলের মুভগুলো অঙ্কুরেই বিনাশ করে দিচ্ছিলেন আরাউহো-উগারতেরা।
এসব ক্ষেত্রে ব্রাজিলের পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, আশি, নব্বই বা এর পরের দলগুলোও যা করত; ব্যক্তিনৈপুণ্যের অনন্যসাধারণ ঝলকে ম্যাচ বের করে নিত, সেটা দেখাতে পারেনি এই দলের কেউ।
সেই সময়ের পেলে, গারিঞ্চা, সক্রেটিস, জিকো, রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনিওর মতো প্রতিভাই–বা কোথায় এই ব্রাজিল দলে! চোটের কারণে নেইমার এবারের কোপা আমেরিকাতেই নেই আর ব্রাজিলের এই দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ভিনিসিয়ুস জুনিয়র নিষেধাজ্ঞার কারণে ছিলেন না আজ।
তাঁর অবর্তমানে ব্রাজিলের ফুটবলের বর্তমান রাফিনিয়া-রদ্রিগো আর ভবিষ্যৎ এনদ্রিক তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি।
আজ রোববার লাস ভেগাসে লাতিন ফুটবলে ভক্তরা যেমন ছন্দময় ও সাজানো-গোছানো খেলা আশা করেছিলেন, নাম-গন্ধও ছিল না আজকের ব্রাজিল-উরুগুয়ের প্রথমার্ধের খেলায়। ম্যাচে ছিল ফাউলের ছড়াছড়ি, তার সঙ্গে সমানতালে চলছিল মারামারির মহড়া।
কিছু আক্রমণ হলেও গোল করতে পারেনি কেউ। এই অর্ধের শুরুর দিকে ব্রাজিল তেমন আক্রমণে যেতে পারেনি। অন্যদিকে সেলেসাওদের উপর চাপ তৈরি করতে থাকে উরুগুয়ে।
১৮ মিনিটে ডারইউন নুনেজের একটি হেড রুখে দেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডাররা। এক মিনিট পর আবারও আক্রমণে আসে উরুগুয়ে। এবার কর্নার থেকে আসা বল ব্রাজিলের ডি-বক্সের মধ্যে পড়লে সেখানে শট নেন নিকোলাস ডে লা ক্রুস। তার ক্রস থেকে মাথিয়াস ওলিভেরা হেড করলেও সেটি গোলবারের বাইরে দিয়ে চলে যায়।
৩৫ মিনিটে গোলের দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেছিল উরুগুয়ে। নাহিতান নন্দেজের ক্রস থেকে নুনেজের হেড গোলবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। সেখান থেকে কাউন্টার অ্যাটাকে যায় ব্রাজিল।
রাফিনহা একাই উরুগুয়ের ডি-বক্সে বল নিয়ে ঢোকেন। তবে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে লক্ষ্যভেদ করতে না পারলেও কর্নার আদায় করে নিয়েছেন। অবশ্য কর্নার থেকেও সফল হতে পারেননি বার্সেলোনোর এই ফরোয়ার্ড।
৪৩ মিনিটে উরুগুয়ের পক্ষে আবার আক্রমণে আসেন লা ক্রুস। ম্যানুয়ের উগার্তের অ্যাসিস্ট থেকে পাওয়া বল গোলবারের বাঁপাশ দিয়ে মেরে দেন তিনি।
ইনজুরি সময়ে আরও একবার আক্রমণে আসে ব্রাজিল। আন্দ্রিয়েস গুইমারেসের অ্যাসিস্ট থেকে বাঁপায়ের শট নেন রাফিনহা। তবে গোলরক্ষক সার্জিও রচেটের দেয়াল ভাঙতে পারেননি তিনি। গোলশূন্য সমতায় বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে আক্রমণে এগিয়ে ছিল উরুগুয়ে। ৫৩ মিনিটেই দুইবার গোলচেষ্টা চালায় তারা। প্রথমটি রুখে দেন ব্রাজিলের ডিফেন্ডাররা। পরেরটি চলে যায় গোলবারের বাইরে দিয়ে। ৬৮ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড লুকাস পাকেতার একটি আক্রমণ ব্লক করে দেয় উরুগুয়ের রক্ষণভাগ।
৭২ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রদ্রিগোকে বাজে ফাউল করে লালকার্ড দেখেন উরুগুয়ে ডিফেন্ডার। উরুগুয়ের অর্ধে বল নিয়ে আক্রণে যাচ্ছিলেন রদ্রিগো।
এমন সময় পেছন থেকে এসে রদ্রিগোকে থামানোর জন্য পায়ে আঘাত করেন নন্দেজ। এতে প্রথমে তাকে হলুদকার্ড, পরে ভিএআর দেখে লালকার্ড দেখানের সিদ্ধান্ত নেন রেফারি। ফলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় উরুগুয়ে।
উরুগুয়ে ১০ জনের দলে পরিণত হলেও সুবিধা আদায় করে নিতে পারেনি ব্রাজিল। অথচ তখন ম্যাচের বাকি ১৫ মিনিট। শেষ পর্যন্ত খেলা টাইব্রেকারে গড়ালে হারই হজম করতে হয় দরিভাল জুনিয়রের শিষ্যদের।
আরও পড়ুনঃ ফাইনাল ছাড়া কোনো ম্যাচেই থাকছে না অতিরিক্ত সময়