বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নিকৃষ্ট অধ্যায়
১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এ দেশীয় তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবী হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
পৃথিবীর মানচিত্রে যখন “বাংলাদেশ” নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিশ্চিত হয়েছিলো। যখন এদেশের প্রতিটি প্রান্তে বিজয় উল্লাসের প্রতিক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছিলো কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষ। বুকের তাজা রক্তে কেনা গৌরবের লাল-সবুজের পতাকার যখন বিজয় মিছিল সুনিশ্চিত, তখন পাক হানাদার বাহিনী নিশ্চিত পরাজয় জেনে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলো।
স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ যেন মেধা ও মননে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় মেতে ওঠে। বাংলাদেশীদের পঙ্গু জাতিতে পরিনত করতেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নিকৃষ্ট অধ্যায়। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে আত্মদান করেন অগণিত সূর্যসন্তান। এখনো মিরপুর ও রায়েরবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ বাঙালী জাতির কাছে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সৌধ।
‘নীল নকশার রেখা অংকন শুরু হয়েছিল একাত্তরের পয়লা মার্চের আগেই সত্তরের ১৭ ডিসেম্বর গণভোট বা তারো অনেক আগে উনসত্তরের গণ আন্দোলনের সময় থেকেই, কিংবা বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পরে। একাত্তরে তারা প্ল্যান করে যুদ্ধে নামে। যুদ্ধতো নয়, কেবল নিরস্ত্র মানুষ নিধন।
প্রথমে ওদের এলোপাতাড়ি মারা, তারপর শহরে, গ্রামেগঞ্জে বেছে বেছে ধনী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী নিধণ করে নদীতে খালে ফেলে দেওয়া। অনেকে মনে করেন চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে—তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল।’
আরও পড়ুনঃ
❒ শ্রমিকদের অধিকার রক্ষাই এ দিবসের মূল দাবি
❒ মহান স্বাধীনতা দিবস
❒ একযুগ পূর্তিতে আইসিটি ওয়ার্ল্ড নিউজ
❒ গৌরবের স্মৃতিবহ মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর আল-বদরের সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করা হয়। পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়। এ দু’টি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত।
“ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ” আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। বেদনা-বিধুর এই দিনে অতল শ্রদ্ধা আর অকৃত্রিম ভালোবাসায় স্মরণ করছি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। যারা, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চুড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশের দোসরদের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন। বিনম্র শ্রদ্ধায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি। গভীর শ্রদ্ধা, সমবেদনা এবং ভালোবাসা জানাচ্ছি শহীদ পরিবারের শোকার্ত প্রতিটি সদস্যদের প্রতি।
❑ সম্পাদকীয় থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ আশুরার তাৎপর্য ফজিলত ও আমল