আইসিটি ওয়ার্ড নিউজ ডেস্ক: বিশ্বে কতগুলো পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে ? পারমাণবিক বোমার নাম শুনলেই প্রথমেই মনে পড়ে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে “লিটল বয়” ও “ফ্যাট ম্যান” নামের দুইটি পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় যুক্তরাষ্ট্র।
তবে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ এটাই প্রথম নয়। এর আগে “ম্যানহাটন প্রজেক্ট”-এর অংশ হিসেবে বিশ্বে প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানো হয় ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রর নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের মরুভূমিতে।
এরপর আরও অন্তত সাতটি দেশ পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে পুরো পৃথিবীতে আসলে কতগুলো পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, অন্তত ২,০৫৬টি পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সমিতি বা “আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন” অনুসারে, ১,০৩০টি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করেছে যুক্তরাষ্ট্র একাই। আর এখন পর্যন্ত সত্যিকারের যুদ্ধে যে দুটি পারমাণবিক বোমা ফুটেছে, এর দুটোই ফুটিয়েছে দেশটি।
এর বাইরে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া ৭১৫টি, ফ্রান্স ২১০টি, যুক্তরাজ্য ও চীন প্রত্যেকে ৪৫টি, উত্তর কোরিয়া ছয়টি, ভারত তিনটি এবং পাকিস্তান দুটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা করেছে।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের বিস্ময়কর ৫ সামুদ্রিক সেতু যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে
১৯৯০ এর দশকে পারমাণবিক বোমা নিয়ে পরীক্ষার বিষয়টি সাধারণ না হলেও রাজনৈতিক, পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যের উপর অনেক প্রভাব ফেলেছে এটি, যা চলছে আজ অবধি। এখন পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায়।
১৯৪৫ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর ধরে অনেক দেশের জন্যই পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা ছিল সাধারণ বিষয়। কারণ, বিশ্বশক্তি হিসেবে মর্যাদা পেতে ওই সময় এসব দেশ রীতিমতো প্রতিযোগিতা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলা স্নায়ুযুদ্ধের সময় আকাশচুম্বী হয় পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা।
আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক বোমা নিয়ে পরীক্ষা চালানোর রেকর্ড রয়েছে ১৯৬২ সালে। এ সময় চালানো হয় ১৭৮ টি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা, যার মধ্যে ৯৭ শতাংশ পরীক্ষা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউএসএসআর বা সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ ছাড়া, যুক্তরাজ্য দুটি ও ফ্রান্স একটি পরীক্ষা চালায়।
১৯৬২ সাল পারমাণবিক বোমা নিয়ে পরীক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘টার্নিং পয়েন্ট’ ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট লাইভ সায়েন্স। বিশ্বের অনেক মানুষ তখন পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন ও জনগণের স্বাস্থ্যের উপর এ পরীক্ষার বিরুপ প্রভাব ফেলার বিষয়টি বুঝতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ১৭০ লাখ মানুষের দেশে ২ কোটি সাইকেল
পরমাণু পরীক্ষার ভয়াবহ প্রভাব দেখেছে বিশ্ব। ১৯৫৪ সালের ‘ক্যাসল ব্রাভো’ নামের পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার সময় প্রতিকূল বাতাসের পরিস্থিতি ও অনেক বেশি মাত্রার বিকিরণের ফলে ‘মার্শাল আইল্যান্ডে’র স্থানীয় জনগোষ্ঠী মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে।
সব মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন’সহ বিশ্বের ১০৮ টি দেশ পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা সীমিত করতে নিষেধাজ্ঞা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে পারমাণবিক বোমা নিয়ে পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া, যা ছিল জাপানের হিরোশিমায় ফেলা বোমার চেয়েও আটগুণ বেশি শক্তিশালী।
আবার কী শুরু হবে পরমাণবিক বোমার ব্যবহার?
পরমাণবিক বোমা নিয়ে পরীক্ষা না করলেও অনেক দেশের হাতেই রয়েছে পরমাণু অস্ত্র। বর্তমানে চীন, ফ্রান্স, ভারত, ইসরায়েল, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, এই নয়টি পরমাণু শক্তিধর দেশ রয়েছে বিশ্বে। যাদের কাছে সবমিলিয়ে আছে প্রায় ১৩ হাজার পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র।
আরও পড়ুনঃ
❒ রহস্যময় এই সেতু থেকে কুকুর কেন লাফিয়ে আত্মহত্যা করে
❒ যাত্রা শুরু করলো বিশ্বের বৃহত্তম প্রমোদতরী
❒ ইউরেনিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
❒ দুনিয়ার ভয়ানক কিছু প্রাণীর কথা জানুন
উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিকতম এই পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে তৈরি করেছে উদ্বেগ। দক্ষিণ কোরিয়া বা বিশ্বের অন্যান্য পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো যদি নিজেদের অস্ত্র পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় তবে তা পারমাণবিক শক্তিধর বিভিন্ন দেশকে এ বোমার পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে উৎসাহিত করবে।
“পারমাণবিক বোমা নিয়ে আবার পরীক্ষা শুরুর বিষয়টি বিশ্বের শান্তির জন্য অত্যন্ত উস্কানিমূলক ও পশ্চাদমুখী পদক্ষেপ হবে,” বলেছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস ফর দ্য প্রিভেনশন অফ নিউক্লিয়ার ওয়ার’-এর সাবেক সহ-সভাপতি টিলম্যান রাফ।
❑ জানা-অজানা বিশ্ব থেকে আরও পড়ুন
আরও পড়ুনঃ বিএমডব্লিউ সম্পর্কে ১০টি অজানা তথ্য